গত ৩-২-২০১৯ তারিখে ব্রিগেডে বামেদের বিশাল সমাবেশ নিয়ে পরের দিন আপনাদের কাগজের প্রথম পাতায় একটি বাক্যও ব্যয় করা হয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় আপনাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে, নিশ্চয় ইচ্ছাকৃত ভাবেই। অথচ এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিককে নিয়ে রাজ্যে যে নাটক চলছিল, তা আপনাদের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠার প্রায় সবটাই দখল করে নিল। রাজ্যের প্রধান প্রশাসক এক সরকারি কর্মীর হয়ে ধর্নায় বসলেন, ভাবা যায়! ঘটনাটি নজিরবিহীন এবং ঐতিহাসিক, সন্দেহ নেই। সেই ঘটনার দাপটে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ কিনা আপনাদের কাছে উপেক্ষিত রয়ে গেল!
প্রসাদ বসু
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
গঙ্গা দূষণ
‘জলে ৬১০০ কোটি টাকা, দূষণ বেড়েছে গঙ্গায়’ (২৮-১) সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। আশির দশকে শুরু হয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর পরেও এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও গঙ্গাদূষণ না কমার মূল কারণ পরিকল্পনায় গলদ। গঙ্গার দীর্ঘ যাত্রাপথে বহু উপনদী এতে পড়েছে। বার্ষিক বর্ষার জলস্রোতে এই উপনদীগুলির মাটির বাঁধ ভেঙে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জমির মানুষ ও পুশুদের মলের কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া-সহ অন্য দূষিত পদার্থগুলি গঙ্গা দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূষণ মুক্তির পরিকল্পনা শহর ও শিল্পাঞ্চল ভিত্তিক হওয়ায় নদী শুদ্ধ হচ্ছে না, বরং স্থানে স্থানে দূষণ বাড়ছে।
এর মূল প্রতিকার হল গঙ্গা ও তার সমস্ত উপনদীতে ভাঙন-রোধী নদীবাঁধ দিয়ে পার্শ্ববর্তী জমি থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা। এবং সঙ্গে জমিতে পড়া পুরো বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য সেচনালাগুলি-সহ অন্য জলাশয়গুলির গভীরতা রক্ষণ এবং প্রয়োজনে অতিবৃষ্টির স্থানে নূতন জলাধারের ব্যবস্থা। ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ জমি ১০ ফুট গভীরতায় রাখতে পারলে বর্ষার পুরো জলটাই সংরক্ষণ সম্ভব।
এই ব্যবস্থায় গ্রামে গ্রামে জলসম্পদ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে, বন্যা থেকে মুক্তি আসবে। নদীও সেই সঙ্গে পলিমুক্ত থাকবে, শুকোবে না। ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্পে ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ‘ভাঙনরোধী নদীবাঁধ’ এতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায়, অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।
১৯৫৭-র প্রাক্তনী হওয়ার সুবাদে, খড়্গপুর আইআইটির সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় জানাই, আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জলসম্পদ শাখায় ‘কংক্রিটে শক্তিমান মাটির নদীবাঁধ’ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিটি স্বল্প ব্যয়ের এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সহায়ক। ২০০৯ সালে আয়লা ঝড়ে সুন্দরবনের অনেক মাটির বাঁধ ধ্বংস হয়ে গেলে, তদানীন্তন সরকারের অনুরোধে আইআইটি এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ও সরকারকে জানিয়ে দেয়, যাতে সুন্দরবনের বাঁধগুলি শক্তপোক্ত ও নিরাপদ হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের জলপথে পণ্য পরিবহণের সাম্প্রতিক প্রকল্পে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে, জলযানের নদীখাত পলিমুক্ত থাকবে, এই তথ্যও জাহাজমন্ত্রককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইআইটির আশা, এই দেশীয় প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার করতে পারলে শুধু নদী রক্ষা ও বর্ষার জল নিয়ন্ত্রিত হবে না, সঙ্গে জলসম্পদ বাড়বে, বন্যাত্রাণ হবে, সেচের জল মিলবে, গ্রামে গ্রামে কর্মসংস্থানের দরুন দেশে উন্নয়ন আসবে।
তরুণকুমার চৌধুরী
কলকাতা-৬৪
দক্ষিণেশ্বরে
পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার দূষণ সবচেয়ে বেশি দক্ষিণেশ্বরে। ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা— গঙ্গাকে নির্মল করার জাতীয় উদ্যোগের অন্যতম কর্ণধার সন্দীপ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা সবচেয়ে বেশি দূষিত দক্ষিণেশ্বরে। তাঁর দাবি, বালিখালই এই দূষণের মূল কারণ। দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গা যে আদৌ স্নান করার উপযুক্ত নয়, সেটা পরিষ্কার হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধান থেকে। স্নান করার উপযুক্ত জলের মান ১০০ মিলিমিটারে ৫০০-র কম ফিকাল কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া। এটি মানুষ বা অন্যান্য উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলের সঙ্গে বার হয়। স্নানের সময় ওই ব্যাক্টেরিয়া পেটে গেলে পেটের নানান অসুখ হতে পারে। ত্বকের সংস্পর্শে এলে হতে পারে চর্মরোগও। দক্ষিণেশ্বরের কাছে বালিখাল মিশেছে গঙ্গায়। উল্টো দিকে বালিখাল, ডানকুনি হয়ে বৈদ্যবাটিতে গঙ্গায় মিশেছে। কলকাতা ও আশপাশ থেকে সমস্ত খাটাল উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ওই এলাকায়। এই সব গবাদি পশুর মল সরাসরি বালিখালে পড়ে, দৈনিক প্রায় ১০ টন। সঙ্গে খালের উভয় পার্শ্বের শিল্পের দূষিত রাসায়নিক দ্রব্যাদি। বালিখালই দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গাকে দূষিত করছে।
শিব প্রসাদ খাঁড়া
গরলগাছা, হুগলি
পাঠাগার
পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা থানার অন্তর্গত অকালপৌষ গ্রামের সরকার পোষিত নগেন্দ্র নাথ সাধারণ গ্রামীণ পাঠাগারটি ১০০ বৎসরের পুরাতন ও চালু গ্রন্থাগার। বর্তমান পুস্তক ১১ হাজারের মতো। পাঠকপাঠিকার সংখ্যা ৫০০-র মতো। পাঠক-পাঠিকাদের দৈনিক উপস্থিতির হারও খুব ভাল। পাঠাগারে ৪টি কম্পিউটার। বেশির ভাগ বই কম্পিউটারাইজ় করা হয়েছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে পুস্তক লেনদেন করা হয়।
পাঠাগার প্রাঙ্গণে অবস্থিত শিশু উদ্যানটিতে প্রতি দিন বহু শিশু আসে। বেশ কিছু স্কুল বা কলেজের ছাত্রছাত্রী পাঠাগারের সদস্য ও পাঠাগার থেকে পাঠ্যবই নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করে।
বর্তমানে পাঠাগারের একমাত্র কর্মচারী গ্রন্থাগারিক আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসর নিচ্ছেন। গ্রন্থাগারিক অবসর নেওয়ার পর, ১ মার্চ থেকে কি পাঠাগার বন্ধ থাকবে?
কারণ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামীণ গ্রন্থাগারে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র কর্মচারী অবসর নেওয়ার পর পাঠাগারটি বন্ধ থাকছে বা কোনওটি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন খোলা হচ্ছে।
নিমাই চাঁদ দত্ত
অকালপৌষ, পূর্ব বর্ধমান
গাইড
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাঁর গবেষক ছাত্রীর কাছে তোলা তুলছিলেন বলে অভিযোগ ছাপা হয়েছে (‘যাদবপুরে গাইডের বিরুদ্ধে টাকা তোলার নালিশ ছাত্রীর’, ২-২)। এই বঙ্গের বিশ্বদ্যালয়গুলোর গবেষক-মহলে কান পাতলেই শোনা যায় এমন অনেক কাহিনি। কখনও প্রজেক্টের টাকা গবেষকের স্বার্থে খরচ না করে নিজের মতে সদ্ব্যবহার করেন গাইড। ল্যাবরেটরির পর্দা, টেবিল ক্লথ, কাপ-ডিশ, আলমারি, কেমিক্যাল, নানান টুকিটাকি গবেষকের মাইনের পয়সা থেকে কেনা হয়। আবার কোনও কারণ না দেখিয়ে মাইনের কিছু শতাংশ কেটে নিচ্ছেন গাইড, ‘ল্যাব ফান্ড’! গাইড বাইরে যাবেন, তার টিকিট অনলাইনে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে দেবেন গবেষক। সে টাকা আর পাওয়া যায় না। থিসিস জমা বা পেপার লেখার সময় গাইড বাইরে চলে গিয়েছেন বা খুব ব্যস্ত, সই করার সময় পাচ্ছেন না। গবেষক ছোটাছুটি করছেন। এই চিত্রনাট্য খুব প্রচলিত।
গঙ্গাপদ বসু
কলকাতা-২৬
বিচিত্র ছাঁট
স্কুলের ছাত্রদের চুলের স্টাইল বন্ধ করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সেলুনকর্মীদের দ্বারস্থ হতে হল (‘বিচিত্র কায়দায় ছাঁটা বন্ধ করুন,...’ ৭-২)। ছাত্রেরা চুলের ফ্যাশন কতটা করছে, তা নজর করার প্রাথমিক দায়িত্ব অভিভাবকদের। তাঁরা যদি সন্তানদের বিচিত্র চুলের ছাঁট মেনে নেন, শিক্ষকদের না মেনে উপায় কী? শিক্ষার্থীর আত্মমর্যাদায় অাঘাত লাগে, এমন কোনও মন্তব্য এখন শিক্ষকরা ক্লাসে করতে পারেন না। চুল ছাঁটা নিয়ে কিছু বলতে গেলে যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়, দায়িত্ব কে নেবে?
রতন চক্রবর্তী
উত্তর হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।