— ফাইল চিত্র।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক ভ্রমণসূত্রে পৌঁছে গিয়েছিলাম রবীন্দ্রস্মৃতিধন্য মংপু-র রবীন্দ্রভবনে। এর আগে ২০০৬ সালে আরও এক বার গিয়েছিলাম সেখানে। তখন এই ঐতিহ্যবাহী গৃহটিতে ছিল অবহেলার ছাপ, সরকারি উদ্যোগ বা প্রচেষ্টার অভাব। সেখানে দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন শিশির রাউত নামে এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি— যিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে রবীন্দ্রভাবনায় স্ব-শিক্ষিত। ভবনে আগত দর্শনার্থীদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার আমাকে সেই সময় মুগ্ধ করেছিল। এ বার তাঁর অভাব বোধ করলাম। তখন জেনেছিলাম, কুইনাইন ফ্যাক্টরির বদান্যতায় কোনও ক্রমে ভবনটি চলছিল। এ বার দেখে ভাল লাগল যে, সরকারি তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত ভবনটি নতুন সাজে সেজে উঠেছে। এখন এখানে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সুষ্ঠু ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, স্থান পেয়েছে তাঁর বর্ণময় জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলির প্রামাণ্য দলিল আর সৃষ্টিশীল সাহিত্য সাধনার নানা মূল্যবান তথ্য।
কিন্তু প্রদর্শনীকক্ষে পরিবেশিত তথ্যসমৃদ্ধ লেখাগুলির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ছবিগুলিতে পৃথক ভাবে ব্যক্তি-বিশেষের পরিচয় বা নামোল্লেখ না থাকায়, যে কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঠিক ভাবে চিনতে পারা সহজ হবে না। অত্যন্ত মূল্যবান ও সুন্দর প্রদর্শনীকক্ষের তথ্য উপস্থাপনার এমন অসম্পূর্ণতা থাকা উচিত ছিল না।
আর একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মধ্যাহ্নকালে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখলাম— এই রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শনীকক্ষে যত জায়গায় ‘গীতাঞ্জলি’ নামটি উল্লিখিত হয়েছে— সর্বত্রই সে বানানটি লিখিত রয়েছে ‘গীতাঞ্জলী’ রূপে। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদের ছবিও সেখানে এক জায়গায় রয়েছে, যা স্বাভাবিক ভাবেই নির্ভুল বানানের প্রতিচিত্র। যে কাব্যগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছে, ‘বিশ্বকবি’র শিরোপা এনে দিয়েছে, সেই কাব্যগ্রন্থের নাম বারংবার ভুল বানানে উপস্থাপন করা রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত এই ভবনটির মর্যাদা অবশ্যই ক্ষুণ্ণ করে। মংপু-র মতো ঐতিহ্যময় রবীন্দ্রভবনে ভুল বানানের এমন ব্যবহার তো শুধু ভবন কর্তৃপক্ষের লজ্জা নয়— এ লজ্জা সামগ্রিক ভাবে সমগ্র বাঙালি জাতির। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ভুলই শিখে নিলে সেই দায় থেকে আমরা নিজেরাও মুক্ত হতে পারব না। বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে প্রকাশিত কোনও গ্রন্থে এমন ভুল বানানের ব্যবহার আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
অবিলম্বে এই ভুল সংশোধনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ করতে রবীন্দ্রভবন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই।
সম্পদনারায়ণ ধর, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
বেপরোয়া গতি
ইদানীং রাস্তায় বেরোলেই দেখা যায় অল্পবয়সি ছেলেরা হেলমেট ছাড়াই বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছে। কিছু দিন আগে শেষ হয়েছে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। অবাক হয়েছিলাম দেখে যে, পরীক্ষার সময় নিজেরা তো বটেই, কয়েক জন পরীক্ষার্থী তাদের অভিভাবকদের নিয়েও বেপরোয়া গতিতে বাইক চালিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। অভিভাবকরা যদি নিজেরাই এ ভাবে সন্তানদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে প্রশ্রয় দেন, তা হলে তো অল্পবয়সিরা সহজেই বিগড়ে যাবে। এমনিতেই সংবাদমাধ্যমে বাইক-দুর্ঘটনার কথা প্রায়শই শোনা যাচ্ছে, যেখানে প্রাণহানির ক্ষেত্রে কমবয়সিদের সংখ্যা কম নয়। বাইক চালাতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ফুলের মতো প্রাণগুলো যাতে নীরবে ঝরে না যায়— সেই কড়া নজরদারি করতে হবে অভিভাবকদেরই। শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের মুখাপেক্ষী না থেকে এ ক্ষেত্রে নিজের সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা নিক মা-বাবারা।
সৈকত কর্মকার, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
অপ্রতুল স্ট্যাম্প
পাঁচ হাজার টাকার বেশি অর্থ আদানপ্রদানের জন্য রেভিনিউ স্ট্যাম্পের ব্যবহার আবশ্যক। এই নিয়মে সরকারের আয় বাড়ে। ডাকঘর ছাড়া রেভিনিউ স্ট্যাম্প আইনত কোথাও পাওয়া যায় না। যে স্ট্যাম্প সরকারের আয় বাড়াতে সাহায্য করে, সেই স্ট্যাম্প কেন অমিল? বহু গ্ৰামীণ ডাকঘরে রেভিনিউ স্ট্যাম্প পাওয়া যায় না। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাওয়া যায় না। একটি এক টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প মানুষকে অনেক সময় অনেক বেশি অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় হয়রানির শিকারও হতে হয়। সরকার যদি রেভিনিউ স্ট্যাম্প জোগান দিতে না পারে, তবে এই নিয়মটি অবিলম্বে বন্ধ করে মানুষের হয়রানি কমানো হোক।
অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
বসার জায়গা
কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কলের টেলিকম দফতরের কর্মী, আধিকারিকদের হাতে হাতে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয় কলকাতার নিজাম প্যালেসের এগারো তলায়। এ জন্যে বহু দূর থেকে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আসতে হয় এখানে। শারীরিক অক্ষমতার কারণে এঁদের প্রায় সকলের সঙ্গেই থাকেন সাহায্যকারী পরিজন। দুঃখের বিষয়, এই অশক্ত পেনশন গ্রাহকদের জন্যে বসার কোনও ব্যবস্থা নেই। লিফটের সামনে এক ফালি বারান্দায় দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁদের। এ ছাড়াও লাইফ সার্টিফিকেট জমা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা সিকিয়োরিটি গার্ডের দুর্ব্যবহারও তুলনাহীন। মাঝে মাঝেই দায়িত্বে থাকা গার্ডরা মেজাজ দেখিয়ে উঠে পড়েন কাজ ছেড়ে। এমন অসহনীয় অবস্থা থেকে অশীতিপর পেনশনারদের মুক্তির একটা ব্যবস্থা করা যায় না? তাঁদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা কি খুবই দুষ্কর? বিভিন্ন সরকারি দফতরে কাজ করা প্রাক্তন কর্মী, আধিকারিকদের কি আর একটু সম্মানজনক ব্যবহার প্রাপ্য নয়?
দেবাশিস মিত্র, মুন্সিরহাট, হাওড়া
মানুষের বদলি
‘ম্যানহোল সাফাইয়ে রোবট’ (৮-৩) খবরটি পড়ে দেখলাম, এ রাজ্যে এই প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার ২০ নম্বর ওয়র্ডে নর্দমা বা ম্যানহোলে জমে থাকা পাঁক বার করা হবে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা-যুক্ত রোবট দিয়ে। সাফাই কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি এতে কমবে। পনেরো মিনিটের মধ্যে ম্যানহোলের পাঁক পরিষ্কার করে দেবে এই রোবট। এই উদ্যোগ অভিনব এবং প্রশংসাযোগ্য। ১৯৯৩ এবং ২০১৩ সালে সংসদ দু’টি আইন নিষিদ্ধ করেছে এই অমানবিক প্রাণহানিকর কাজ। আইনে ব্যবস্থা রয়েছে এই জীবিকায় যুক্ত মানুষ এবং তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসনের। রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও। রয়েছে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণের আদেশ। অথচ, এই কাজে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে আজও হাজার হাজার প্রান্তিক মানুষ যুক্ত থাকেন। অনেক সময়েই মৃতের পরিবার পাওনা ক্ষতিপূরণ পায় না।
সংসদে একটা প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে তিনশোর বেশি সাফাইকর্মী বিষাক্ত গ্যাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিকার কারণে এই কাজ করে অনেকেই সারা জীবন নানা দুরারোগ্য রোগে ভোগেন। এঁদের সামাজিক সুরক্ষাও সে ভাবে নেই। ঠিকাদার নিয়োগ করে দায় ঝেড়ে ফেলে সরকারি ক্ষেত্রগুলি। কাজের ক্ষেত্রে যে সব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক, তার কোনওটিই শ্রমিকদের জন্য নেয় না এই ঠিকাদাররা। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণাম, মৃত্যু। আশা করি, টিকিয়াপাড়ার এই প্রচেষ্টা সফল হবে এবং রাজ্যের সব কর্পোরেশন, পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে এই রোবট ব্যবহৃত হবে।
অলোক রায়, কলকাতা-৮