Amlan Datta

শতবর্ষে অম্লান

অর্থনীতি নামক শাস্ত্রটির ইতিহাস অম্লান দত্ত গভীর ভাবে চর্চা করেছিলেন। পাশাপাশি উন্নয়নতত্ত্ব এবং বিভিন্ন দেশের আর্থিক নীতিতে সেই তত্ত্বের প্রয়োগ সম্পর্কেও তাঁর আগ্রহ ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ ০৪:৪৪
Share:

অর্থনীতিবিদ অম্লান দত্ত। —ফাইল চিত্র।

অম্লান দত্তের (১৯২৪-২০১০) জন্মশতবর্ষ শুরু হল ১৭ জুন। সে দিন, এবং তার আগেও, এই অর্থনীতিবিদ এবং সমাজচিন্তকের জীবন ও জ্ঞানচর্চা নিয়ে ইতস্তত কিছু আলোচনাসভার আয়োজন হয়েছে। হয়তো আগামী এক বছরে আরও কিছু সভা-সমাবেশ হবে, পত্রপত্রিকায় স্মৃতিচারণ ইত্যাদিও চলবে, সঙ্কলন-গ্রন্থও প্রকাশিত হতে পারে। এগুলো সবই দরকারি কাজ। তবে আসল কাজ হল তাঁর চিন্তাভাবনা আজকের পরিপ্রেক্ষিতে কী ভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে ভাবা এবং কাজ করা। অম্লান দত্ত সেটাকেই প্রাসঙ্গিক মনে করতেন। তিনি অত্যন্ত বাস্তববাদী মানুষ ছিলেন, চিন্তাভাবনা এবং কাজের কাজ, এই দু’টি জিনিসকে সারা জীবন এক সঙ্গে দেখেছেন এবং দেখতে শিখিয়েছেন।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর অর্থনীতি-ভাবনা। অর্থনীতি নামক শাস্ত্রটির ইতিহাস তিনি গভীর ভাবে চর্চা করেছিলেন। পাশাপাশি উন্নয়নতত্ত্ব এবং বিভিন্ন দেশের আর্থিক নীতিতে সেই তত্ত্বের প্রয়োগ সম্পর্কেও তাঁর আগ্রহ ছিল। কিন্তু সেই তত্ত্বের সীমা সম্পর্কেও তিনি সচেতন ছিলেন, ১৯৮৭ সালে একটি বক্তৃতার উপসংহারে বলেছিলেন, “সমাজের গভীরতর মূল্যাশ্রয়ী পরিবর্তনের নির্দেশ প্রচলিত উন্নয়নতত্ত্বের ভিতর খুঁজতে যাওয়া নিরর্থক।... উন্নয়নতত্ত্বকে শেষ অবধি যুক্ত হতে হবে বৃহত্তর সমাজদর্শনের সঙ্গে।”

তাঁর কথা বলা এবং লেখা, দুই-ই ছিল প্রাঞ্জল। রাশিয়া এবং জাপানের অর্থনৈতিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর একটি ছোট্ট বই বহু দিন ধরে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরম সমাদর পেয়েছে এই গুণেই। তাঁর অর্থনৈতিক বিশ্বাস ছিল অনেকাংশে গান্ধীবাদী ধারার অনুসারী। সেই বিশ্বাসের কারণেই তিনি গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বিশেষ জোর দিতেন, কৃষিতে অতিরিক্ত যন্ত্রের ব্যবহারে তাঁর আপত্তি ছিল, সামগ্রিক ভাবে ধনতন্ত্রের সমস্যা স্বীকার করেও তিনি সোভিয়েট বা চিনা মডেলের বিকল্পকে মানতে পারতেন না। কিন্তু এই সমস্ত প্রশ্নেই তাঁর সঙ্গে খোলা মনে তর্ক করতে বাধা ছিল না। এই কারণেই তাঁর জীবন ও ভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। নিজের বিশ্বাসে, বোধে সুস্থিত থেকেও খোলা চোখে পৃথিবীকে বিচার করা এবং পথ খোঁজার শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে হয়।

Advertisement

নির্মল পাত্র, কলকাতা-৮

গান্ধীর পথে

বছর কুড়ি আগের কথা। পার্ক সার্কাসে অধ্যাপক হোসেনুর রহমানের বৈঠকখানার এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছি আমি। অধ্যাপক রহমানের সামনে যিনি বসে আছেন, তাঁর নাম শুনেছি, চাক্ষুষ দেখা সেই প্রথম। বয়স্ক, রোগা চেহারা, ক্ষীণ স্বরে কথা বলে চলেছেন। বড় জোর মিনিট পাঁচেক পর সেই বয়স্ক মানুষটি চলে গেলে অধ্যাপক হোসেনুর রহমান আমায় বললেন, “ওঁকে চিনতে পারলে? অম্লান দত্ত।”

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, গভীর চিন্তাবিদ, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য, গান্ধীবাদী অম্লান দত্ত, সেই বছর কুড়ি বয়সে তাঁর এই পরিচয় সবটা মেলেনি। তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা হল ১৭ জুন, এক এমন সময়ে যখন হিংসায় উন্মত্ত দুনিয়া। এক দিকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, মানুষ খুন। আর অন্য দিকে, বিশ্বের অন্য প্রান্তে, নাগাড়ে চলেছে যুদ্ধ ইউক্রেনের বুকে।

যারা বোম ছুড়তে পারে না, গুলি চলিয়ে মানুষ খুন করতে পারে না, তাদের মধ্যেও যে বিপুল হিংসা জমেছে, সাধারণ কথাবার্তা কিংবা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা ‘কমেন্ট’ বলে দিচ্ছে। অম্লান দত্ত তাঁর বিভিন্ন রচনায় এই হিংসায় উন্মত্ত দুনিয়ার স্তরগুলো নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। গান্ধীতে ফেরার কথা বলেছিলেন তিনি। তাঁর মতে, গান্ধীজিই সভ্যতার শেষ স্টেশন।

অম্লান দত্তের রচনায় হিংসাত্মক বাম আন্দোলনের প্রসঙ্গও এসেছে। এসেছে সোভিয়েট ইউনিয়নে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ। অম্লান দত্ত লিখেছিলেন, হিংসাত্মক আন্দোলন কোনও কোনও অবস্থায় ক্ষমতা লাভে, বা রাষ্ট্রযন্ত্র করায়ত্ত করার দ্বন্দ্বে সফল হতে পারে; কিন্তু সেই সাফল্য ঝুটা সাফল্য। রুশ বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে বলছেন, রুশ দেশে ক্ষমতালাভের জন্য লেনিন এমন একটি দল গড়ে তুলেছিলেন, যার গতিবিধি ছিল গুপ্তঘাতকের মতোই গোপন। লেনিনের নির্দেশ অনুসারে তার অভ্যন্তরে গণতন্ত্র রক্ষার চাইতেও গোপনীয়তা রক্ষা প্রধান স্থান লাভ করেছিল। রাশিয়ায় কমিউনিজ়মের হিংসাত্মক আন্দোলনের পথ বিশ্ব জুড়ে হিংসার প্রসারও ঘটিয়েছিল। যার পুরোধা ছিলেন স্তালিন। লেনিনের যুগে বিপ্লবের কিছু মহৎ আদর্শও ছিল। কিন্তু স্তালিনের যুগে হিংসার ভয়াবহ রূপ দেখল বিশ্ব। বিপ্লবের সমস্ত মহৎ আদর্শগুলোকে ব্যঙ্গ করে পারস্পরিক অবিশ্বাস বিভীষিকার আকার ধারণ করল, লিখেছেন অম্লানবাবু।

স্তালিনের সময় থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলন অন্য পথে পা বাড়ায়। জন্ম নেয় হাড়হিম করা হিংসা। পূর্ব ইউরোপের উপর ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হয় অমানুষিক আক্রমণ। সোভিয়েট ইউনিয়নের কবি সাহিত্যিক দার্শনিকেরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরেও অকথ্য নির্যাতন শুরু হয়। আলেকজ়ান্ডার সলঝেনিৎসিনের উপর স্তালিন বাহিনীর নির্যাতন তো আজ প্রবাদ হয়ে আছে। ম্যাক্সিম গোর্কির কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। স্তালিন তাঁকে নিজের জীবনী লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। গোর্কি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর গোর্কির জীবনে যা হয়, তা আজও রহস্যাবৃত। গোর্কির মৃত্যু নিয়ে আজও গবেষণা চলছে। মনে করা হয় যে, গোর্কির মৃত্যু হৃদ্‌যন্ত্রের গোলযোগের জন্য হয়নি, স্তালিনের নির্দেশে বিষক্রিয়ার কারণে হয়েছিল। যদিও এই বিষয় নিয়ে মতপার্থক্যও আছে।

ঠিক এই জায়গায় বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী। তাঁর অহিংস নীতি অন্যায়ের সঙ্গে চিরকালীন অসহযোগের বার্তা দেয়। অম্লান দত্তের মতে, হিংসাত্মক আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি কুফল সমগ্র বিশ্বকেই পঙ্গু করে দেয়। গান্ধী বিশ্বাস করতেন, অসত্যের ব্যবহারে মহৎ কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। অথচ, হিংসাত্মক আন্দোলনের উপায় হিসাবে অসত্যের ব্যবহার অনিবার্য।

দুর্ভাগ্য, এ দেশের কমিউনিস্টরা গান্ধীর প্রাসঙ্গিকতা এবং উচ্চতাকে বিচার করতে পারেননি। স্তালিনপন্থীরা গান্ধীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করে গিয়েছে। বামপন্থীদের এ-ও এক ‘ঐতিহাসিক ভুল’। গান্ধীর অহিংসাকে এক সময় যাঁরা ‘অবাস্তব’ বলেছেন, আজ নিশ্চিত তাঁদের বিবেক দংশনের সময় এসেছে। ঠিক এই বিচারে গভীর চিন্তাবিদ অম্লান দত্তের সে দিনের কথাগুলো আজও অমলিন হয়ে আছে।

অম্লান দত্ত বিশ্বাস করতেন, গান্ধীজির কাছে না ফিরলে এই দুনিয়ার নিস্তার নেই। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীকে মুক্তি দিতে পারে গান্ধীবাদ এবং গান্ধীবাদের প্রসার।

সুদীপ বসু, কলকাতা-১১৮

উপকারিতা

গ্রেটা থুনবার্গ বলেছিলেন, পরিবেশ সঙ্কটের সমাধান চাই, আলোচনাসভা আর ঝুটো প্রতিশ্রুতি নয়। এই দাবি ধামাচাপা পড়ে গেছে। আমরা নির্দ্বিধায় আনাজপাতি, মাছ-মাংস ইত্যাদি বহন করে যাচ্ছি প্লাস্টিকের থলিতে। পর দিন ওই থলিতেই আবর্জনা পুরে ফাঁকা মাঠে বা পুকুরে ফেলে দিচ্ছি। বহাল তবিয়তে প্লাস্টিকের থলি ব্যবহার চলছে, চলবে। এই থলি টেকসই, জল নিরোধক, হালকা, সস্তা, তাই এর ব্যবহার হয়তো আমরা সহজে ছাড়তে পারব না। কিন্তু এক বার ব্যবহার করে ফেলে না দিয়ে, বার বার ব্যবহার তো করতে পারি অধিকাংশ প্লাস্টিকের থলিকে। এটুকু অনুরোধ, বাজারে যাওয়ার সময় বাড়িতে পড়ে থাকা কিছু থলি নিয়ে যান সঙ্গে, বাজারের সামগ্রী ভরে নিয়ে আসুন তাতে। বা, হঠাৎ বৃষ্টিতে কাজে লাগাতেও পারেন। সম্ভব হলে, গুলি পাকিয়ে কানে গুঁজলে ব্যর্থ প্রচারের শব্দের অত্যাচার থেকেও রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

কৌশিক দাস, বেঙ্গালুরু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন