Bus Fare

সম্পাদক সমীপেষু: দৈনিক বচসা

সরকার এ-ও জানে, দু’চার দিন বচসা হবে, অতঃপর সবই যাত্রীর গা-সওয়া হয়ে যাবে। তখন কেউ আর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শোরগোল করবেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৮
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর ‘সকাল-বিকেলের যুদ্ধ’ (৯-১) শীর্ষক উত্তর-সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত, সময়োপযোগীও বটে। ভাড়া বৃদ্ধি না হলে গণপরিবহণ ব্যবস্থা যে মুখ থুবড়ে পড়বে, এ কথা সর্বাংশে সত্য, সরকারেরও তা অজানা নয়। তবু সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ভাবের ঘরে চুরি করে চলেছে। পরিবহণমন্ত্রী বলছেন যে, তাঁরা ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে, অথচ সমস্ত বেসরকারি বাসে যখন ন্যূনতম ভাড়া ৮ টাকার জায়গায় ১০ টাকা, কিংবা ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে, তখন মন্ত্রী চুপ। বাসমালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম, যাতে তাঁরা বর্ধিত ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারে সংযত থাকেন, এই মর্মে পরিবহণ দফতরের তরফ থেকে কোনও কড়া বিবৃতি দেওয়া হয়েছে কি? আশঙ্কা হয়, ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত আছে। কিন্তু অত্যন্ত কৌশলে সরকার নীরব থেকে যাত্রীদের প্ররোচিত করছে বাসমালিক ও কন্ডাক্টরদের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করতে। ফলে ভাড়ার প্রশ্নে বাসগুলিতে নিত্যদিন বচসা লেগেই থাকছে।

Advertisement

সরকার এ-ও জানে, দু’চার দিন বচসা হবে, অতঃপর সবই যাত্রীর গা-সওয়া হয়ে যাবে। তখন কেউ আর ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে শোরগোল করবেন না। বাস্তবে ঘটছেও তাই। যাত্রীদের প্রতিবাদ এখন স্তিমিত, কারণ তাঁরা বুঝেছেন, প্রতিবাদ করে লাভ নেই। ট্যাক্সির ক্ষেত্রে যেমন মিটারে না যাওয়ার বিষয়টি গা-সওয়া হয়ে গেছে। জনদরদি সরকার এ ভাবেই জনদরদি ভাবমূর্তি ধরে রাখার খেলায় মেতেছে। কিন্তু মানুষকে বোকা ভাবাটাও বোকামি। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, যদি বর্ধিত ভাড়া যাত্রীদের দিতেই হয়, তা হলে অবিলম্বে নতুন ভাড়ার চার্ট বাসগুলিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক। তাতে ভাড়ার প্রশ্নে স্বচ্ছতা আসবে। সরকারের স্বচ্ছতা যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, তখন গণপরিবহণে ভাড়ার ব্যাপারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা কম কৃতিত্বের হবে না।

অচিন্ত্য বিশ্বাস, কলকাতা-৬৭

Advertisement

দীর্ঘ লাইন

‘সকাল-বিকেলের যুদ্ধ’ প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। গত চল্লিশ বছর ধরে আমি দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত রাজপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এখানে চাহিদার সঙ্গে বাসের জোগান এতটাই অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে, আজও এখানকার মানুষ সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আশির দশকের পর থেকেই নরেন্দ্রপুর, রাজপুর, বারুইপুর অঞ্চলে বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু গণপরিবহণের পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানো তো দূরের কথা, ক্রমশ আরও খারাপ হয়। প্রবন্ধটিতে খুব প্রাসঙ্গিক ভাবেই বলা হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট রুটে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বাসের চাহিদা নির্ধারণ করে, সেই রুটে বাসের সরবরাহ স্থির করার বিষয়ে। কিন্তু শহরতলির ক্ষেত্রে বাম সরকার থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার, কেউ সেই পথে হাঁটেনি। গড়িয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে কার্যত কমে আসে গণপরিবহণ ব্যবস্থা। প্রচুর যাত্রী, কিন্তু সেই অনুপাতে বাসের সংখ্যা খুবই কম। বহু ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক সময়ই অটো পাওয়া যায় না। কারণ, অনেক অটো লাইনের নির্দিষ্ট স্থানে না এসে, আগেই প্যাসেঞ্জার তুলে নিয়ে ফিরে যায়।

বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চালকদের যথেচ্ছাচারে নাজেহাল হতে হচ্ছে ঘরফেরতা মানুষকে। সড়কপথ এড়ানোর জন্য অনেকেই ট্রেনে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। এতে দিন দিন রেল পরিষেবার উপর চাপ বাড়ছে শুধু নয়, ক্রমশ তা হয়ে উঠছে অসহনীয়। দূরপাল্লার যাত্রীদের (ক্যানিং, লক্ষ্মীকান্তপুর, ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও কাকদ্বীপ) একমাত্র ভরসাই হল রেল পরিবহণ। কিন্তু তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই অত্যধিক ভিড়ের জন্য ট্রেনে উঠতে পারছেন না, কিংবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠছেন। এ ছাড়াও আছে অন্য বিপদ। কালবৈশাখীর সময় প্রায়ই ওভারহেডের তার ছিঁড়ে ব্যাহত হয় শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার রেল পরিষেবা। গড়িয়া থেকে দক্ষিণ অভিমুখী সড়কপথে, শুধু যে যানবাহনই অপর্যাপ্ত তা নয়, ‘এনএসসি বোস রোড’ নামে খ্যাত এই রাজপথ অপ্রশস্তও বটে। রেল পরিষেবা বন্ধ হলে, ছোট ম্যাটাডরে উঠে পড়তে বাধ্য হন অফিসফেরতা মানুষজন। অপ্রতুল যানবাহন এবং ভয়ানক যানজট, দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে অবস্থা যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন।

অবিলম্বে গড়িয়া-বারুইপুর রুটে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস এবং অন্যান্য যানবাহন বাড়ানোর আবেদন করছি।

রাজীব রায় গোস্বামী, কলকাতা-১৪৯

চাই সদিচ্ছা

পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু কথা। যে বেসরকারি বাসের উপর মূলত কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থা নির্ভরশীল, সেখানেই দেখা গিয়েছে সরকারি উদাসীনতা। সকাল-সন্ধ্যায় যখন যাত্রীদের সংখ্যাধিক্য থাকে, তখন রাস্তায় বাসের দেখা পাওয়া যায়, বাকি সময়ে তা রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায়। যে সকল বাসমালিক এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের এ ব্যাপারে দোষারোপও করা যায় না। কারণ, তাঁরা তো একটা ব্যবসা করছেন। লাভের অঙ্কটা তাঁরা হিসাব কষছেন। এটা স্বাভাবিক।

আর এখানেই সরকারের ভূমিকার প্রয়োজন হয়। বাস ভাড়া আজ থেকে বেশ কিছু বছর হল বৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু এর পাশাপাশি বাস চালানোর জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন হয়, বাস রক্ষণাবেক্ষণ ও ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে সকল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, তার মূল্য কি আগের মতো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে? এই সহজ ব্যাপারটাতেই প্রবল সরকারি ঔদাসীন্য।

সরকার যদি মনে করে, গণপরিবহণের জোগান দেওয়ার ব্যাপারে তার দায়বদ্ধতা নেই, বাসমালিকরা তাঁদের মতো করেই বাস চালু রাখুন এবং তাঁদের মতো করেই যাত্রীদের কাছ থেকে যেমন খুশি বাস ভাড়া আদায় করুন, তা হলে তো কিছু বলার থাকে না। সেই কথাটাই সরকার বলে দিতে পারে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলতে পারে যে, পরিষেবার কাজটা সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে হবে। যেমন, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যায় নয়, বাসের সংখ্যা অন্য সময়ের জন্যও মোটামুটি একই রাখতে হবে, এবং বাসের রক্ষণাবেক্ষণের দিকটাতেও প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা করতে হবে।

নয়তো, সরকার এবং মালিকপক্ষ, উভয়ের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে, সাধারণ মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী (হতে পারে, যে বর্ধিত ভাড়া বেসরকারি ভাবে বর্তমানে চালু আছে) এবং সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বাস পরিষেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ যাতে ঠিক থাকে, সেই বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে একটা ভাড়া নির্ধারিত হতে পারে।

কোভিডকালে কিছু বাস-রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই রুটের বাস কোভিড-পরবর্তী সময়ে আর চালু হয়নি। যাত্রীদের সুবিধার্থে সেই বাস-রুটগুলি পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়েও আবেদন রইল। সকল রুটের ক্ষেত্রেই চাহিদা অনুসারে বাসের যথাযথ বণ্টন-নীতি প্রয়োগ করলে, সর্বত্র সাধারণ জনগণের প্রতি সুবিচার করা হয়। সবটাই নির্ভরশীল সরকারের সদিচ্ছার উপর।

সন্তোষ কুমার দে, হাওড়া

উৎপাত

ইদানীং প্রায়ই লক্ষ করা যাচ্ছে, মাইকের উৎপাত বেশ বেড়ে চলেছে। সামনেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এর মধ্যেই যদি নানা জায়গায় তারস্বরে মাইক বাজানো চলতে থাকে, তা হলে সেই সব জায়গার পরীক্ষার্থীরা পড়াশোনা কখন করবে? সরকারি আধিকারিকদের অনুরোধ করব, এই বিষয়ে একটু নজর দিন।

কৃষ্ণেন্দু গুঁই, বরাহনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন