Election and Corruption

ভোট ও দুর্নীতি

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট আসছে। এ রাজ্যে এখন বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। অনেক রথী-মহারথী জেলে। সঙ্গে দেদার জনমুখী প্রকল্পের ঢল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ০৬:০৬
Share:

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট আসছে। ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘বার্তা পৌঁছল কি’ (২৫-৫) লেখাটি অনবদ্য। কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে এ বার বিজেপি পরাজিত হল। ডাবল এঞ্জিন সরকার প্রচুর জনমুখী প্রকল্প করেও আমজনতার মন ভেজাতে পারেনি। তার অন্যতম কারণ দুর্নীতি। কর্নাটকে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট শতাংশ কিন্তু কমেনি, আসন অনেকটা কমে গিয়েছে। যদিও এই ভোট শতাংশ ও আসনসংখ্যার রসায়ন একটি প্রহেলিকা কি না, বোঝা দায়। তবে দেখা যাচ্ছে, জেডিএস-এর ভোট এ বার কংগ্রেসের দিকে গিয়েছে। কর্নাটকে এ বার দুর্নীতি বড় কারণ থেকেছে ঠিকই, কিন্তু দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়েই থাকে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ। প্রয়াত দক্ষিণী নেত্রী জয়ললিতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও, তিনি ভোটে জিতেছেন অনেক বার। তাই বলা যায়, দুর্নীতি সব সময় ভোটে প্রভাব ফেলে না এ দেশে।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট আসছে। এ রাজ্যে এখন বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। অনেক রথী-মহারথী জেলে। সঙ্গে দেদার জনমুখী প্রকল্পের ঢল। অর্থাৎ, সেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। সব রাজ্যেই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়, শুধু আমাদের রাজ্যেই ব্যতিক্রম। এখানে ভোট মানেই মারামারি, খুনোখুনি। এ সব শুধু এখন নয়, বামফ্রন্ট আমল থেকেই চলছে। তবে এখন তা মাত্রাছাড়া পর্যায়ে পৌঁছেছে। পঞ্চায়েত ভোটের নেট প্র্যাক্টিসের সময় থেকেই চার দিকে বোমা উদ্ধার আর বিস্ফোরণের ঘটনা শোনা যাচ্ছে। ও দিকে, গ্রামবাংলার গৃহবধূরা, যাঁদের ভোট শাসক দলের মুঠোয়, তাঁদের অনেকের কাছে হয়তো লক্ষ্মীর ভান্ডারে পাঁচশো টাকাই পরম প্রাপ্তি। এ বার দেখা যাক পঞ্চায়েত ভোটের সময় দুর্নীতির গন্ধ কতটা ঢাকা যায় বা নতুন কিছু বার্তা আসে কি না।

অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪

Advertisement

কোণঠাসা

প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি পুরোপুরি ভাবে থমকে দাঁড়াল কর্নাটকে। জাতপাত ও ধর্মকে সম্বল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং অন্য শীর্ষ স্থানীয় নেতারা ঝাঁপিয়ে ছিলেন কর্নাটকের নির্বাচনে। যখন জনজাতি দাঙ্গায় জ্বলছে মণিপুর, তখন প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন কর্নাটকের নির্বাচনী প্রচারে, দুয়ারে দুয়ারে হাজির হয়েছিলেন নানা জনমোহিনী প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে। তবু সাফল্যের স্বাদ তাঁদের অধরাই রয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গে যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী ইত্যাদি বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প আছে, তেমনই কর্নাটকের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে সেখানেও আছে বেশ কিছু জনমোহিনী প্রকল্প। দান-খয়রাতিতে কে যে কতটা এগিয়ে, তা বলা কঠিন। কর্নাটকের ফলাফল দেখাল যে, জনমুখী প্রকল্প পর্যুদস্ত হল দুর্নীতির কাছে। সরকারি কাজ বা বরাত পেতে গেলে ঠিকাদারদের নেতা-মন্ত্রীদের দিতে হত চল্লিশ শতাংশ হারে কমিশন বা ঘুষ। ঠিকাদার সংগঠন প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছিল। এই অভিযোগ জানিয়েই বেলগাভির ঠিকাদার সন্তোষ পাটিল আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এবং দায়ী করে গিয়েছিলেন তদানীন্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পাকে। ঈশ্বরাপ্পাকে সরালেও, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি সরকারি তরফে।

কর্নাটকে বিজেপির শোচনীয় পরাজয় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলবে। কারণ, দুর্নীতির মাপকাঠিতে এ রাজ্য অনেক এগিয়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুরসভার নিয়োগে যে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে এ রাজ্যে নজিরবিহীন। গরু, কয়লা, বালি, পাথর পাচারের দুর্নীতির চাপে রাজ্য প্রশাসন কোণঠাসা। শিক্ষামন্ত্রী-সহ শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই আজ কারাগারের অন্তরালে। লেখকের সঙ্গে কোনও মতেই সহমত হতে পারলাম না যে, এ রাজ্যের দুর্নীতি রুটি-রুজির সঙ্গে জড়িত নয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে শত শত যোগ্য প্রার্থীদের অনেকেই আজ দিনের পর দিন রাস্তায়। আর তাঁদেরই চাকরিগুলি বিক্রি হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকায়। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছুই জানতেন না, এটা মানা আদৌ সম্ভব? কর্নাটকের নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ এবং অবাধে ভোট হয়েছে সেখানে, যেটা এ রাজ্যে কল্পনা করা দিবাস্বপ্নের শামিল।

দিলীপকুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

দুর্নীতির মোয়া

প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের রায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শাসক দলগুলোর কাছে এক অশনিসঙ্কেত। কর্নাটকের মানুষ জনমোহিনী প্রকল্পের আড়ালে দুর্নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রত্যাখ্যান করেছেন বিভাজনের রাজনীতিকেও। যদিও সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে জেতার জন্য জনমোহিনী প্রকল্পের আশ্রয় নিয়ে থাকে। কারণ এতে হাতে গরম ফল পাওয়া যায়। এই প্রকল্পগুলো কিন্তু প্রান্তিক মানুষের কাছে খুব আকর্ষণীয়। কোনও গ্রামের বধূর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যদি প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ঢোকে, তা হলে সেটা তার আত্মমর্যাদা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দেয়। সেই কারণেই আমাদের রাজ্যে এই জনমোহিনী প্রকল্পগুলির সুবিধাভোগীরা তৃণমূল কংগ্রেসকে পর-পর দু’বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আবার এই মানুষগুলোকেই যখন আবাস যোজনার বাড়ি করার জন্য বা সরকারি কোনও প্রকল্পের সুযোগসুবিধা পাওয়ার জন্য শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের দশ-বিশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে, তখন কিন্তু মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রেও বার্তা খুব পরিষ্কার— জনমোহিনী প্রকল্পের মোয়া দেখিয়ে বর্তমানে চলতে থাকা সীমাহীন দুর্নীতিকে আদৌ ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

সহ্যের ক্ষমতা

প্রেমাংশু চৌধুরীর প্রবন্ধটি একটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত লেখা। দুর্নীতির বিচারে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান, শাসক ও বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা সাধারণ মানুষের চিন্তাধারায় তেমন কোনও গুণগত ফারাক নেই। কর্নাটকে চল্লিশ শতাংশ কমিশন না দিলে ঠিকাদাররা কোনও সরকারি কাজ পাচ্ছিলেন না। এখানেও কর্নাটকের মতো বহু জনমুখী প্রকল্পের আড়ালে শাসক দল নিজেদের দুর্নীতির মুখ গোপন করতে চাইছে। কর্নাটকে যেমন বিজেপি সরকার নিজেদের দুর্নীতির ব্যাপারে উদাসীন থেকে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে এবং জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা‌র কথা ভেবে নিশ্চিত ছিল যে, মানুষ ভোটের সময় অবশ্যই শাসক দলকে বঞ্চিত করবে না। কিন্তু প্রকৃত বাস্তব বড় কঠিন।

পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় একই রকম ভাবে ঘটে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা তো দূর অস্ত্, মূল দুর্নীতিকে অস্বীকার করে, নিত্য সিবিআই-ইডি’র ভর্ৎসনা করে, সর্বভারতীয় দলের সাধারণ সম্পাদকের পদযাত্রার নব জোয়ারে উদ্বুদ্ধ শাসক দলের মনে বিভ্রম হতে পারে যে, জনগণ তাদের পাশে আছে। বলা হচ্ছে, কেউ চোর প্রমাণ হলে, দল অবশ্যই ব্যবস্থা করবে। অথচ, দলের মধ্যে ‘কেউ প্রমাণ করে না দিলে আমরা কিছু করব না’ ধরনের গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখা যাচ্ছে, যা বিস্ময়কর!

শিক্ষণীয় এটাই যে, দুর্নীতি মানুষ বরদাস্ত করে না। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল যদি এর থেকে শিক্ষা না-ও নেয়, তবু এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, ভোটের ফল কর্নাটকের মতো হবে। কারণ, এটাও দেখতে হবে ভোট কর্নাটকের মতো শান্তিপূর্ণ হল কি না। মানুষ নিশ্চিন্তে মত প্রদান করতে পারল কি না। শান্তিপূর্ণ ভোটের মহিমাই আলাদা।

তপনকুমার দাস, কলকাতা-১২২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন