Nandalal Bose

সম্পাদক সমীপেষু: শিল্পের সাধক

নন্দলাল বসু এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘বিচিত্রা’-র (দ্য বিচিত্রা স্টুডিয়ো ফর আর্টিস্টস অব নিয়ো-বেঙ্গল স্কুল) মাধ্যমে চারুশিল্প ও কারুশিল্পের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পায়েল বসুর “নন্দলালের ‘সহজ পাঠ’” (২৬-১২) শীর্ষক প্রবন্ধের সূত্রে কিছু কথা। এক দিকে মানুষের মহত্ত্ব, অপর দিকে প্রকৃতিকে নন্দলাল বসু নিজের শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে ভাষা দিতে চেয়েছিলেন। অনুভূতি, উপলব্ধি আর আনন্দের মধ্যেই তাঁর চিত্র ভাব-রসে উত্তীর্ণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “আর্ট তাঁর পক্ষে সজীব পদার্থ। তাকে তিনি স্পর্শ দিয়ে, দৃষ্টি দিয়ে, দরদ দিয়ে জানেন...” (প্রবাসী, চৈত্র ১৩৪০)।

Advertisement

নন্দলাল বসু এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘বিচিত্রা’-র (দ্য বিচিত্রা স্টুডিয়ো ফর আর্টিস্টস অব নিয়ো-বেঙ্গল স্কুল) মাধ্যমে চারুশিল্প ও কারুশিল্পের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের কলাভবনকে পরিণত করেছিলেন ‘রূপকলার প্রাণনিকেতন’-এ। গুরু অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত নন্দলালের জীবনে কলাভবনের দায়িত্ব পূর্ণতা নিয়ে এসেছিল। নব্যবঙ্গীয় ধারাকে তিনি দিয়েছিলেন আবিশ্ব বিস্তার। সেই সঙ্গে ছোট-বড় সমস্ত ছাত্রের সঙ্গে তাঁর গড়ে উঠেছিল অতি আশ্চর্য এক একাত্মতা। তিনি হয়ে উঠেছিলেন তাদের অকৃত্রিম বন্ধু।

এই শিল্পী গ্রন্থ-চিত্রণেও মগ্ন থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে তাঁর চয়নিকা কাব্যের বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন। ১৯১৯-এ ম্যাকমিলান থেকে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অ্যান্ড ফ্রুট-গ্যাদারিং বার হলে সেখানেও এঁকেছিলেন ছবি। আবার ‘তোতাকাহিনী’-র ইংরেজি অনুবাদ দ্য প্যারট’স ট্রেনিং-এর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। ‘কাবুলিওয়ালা’-র ইংরেজি অনুবাদেও তিনি কাবুলিওয়ালা ও মিনির ছবি আঁকেন। আবার নন্দলালের ছবি রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল অনেক কবিতা। তাঁর ‘রুদ্র বৈশাখ’ ছবির বিশিষ্টতায় প্রভাবিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘হে ভৈরব, হে রুদ্র বৈশাখ’।

Advertisement

নন্দলাল সমগ্র দেশ জুড়ে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন শিল্পচর্চার এক বিরাট পরিমণ্ডল। বিচিত্র চিত্রে বিভিন্ন রীতির অসামান্য প্রয়োগে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিরল গুণের অধিকারী। তিনি ছিলেন প্রাচ্য শিল্পধারার সাধক ও নব্য শিল্পরীতির উদ্গাতা। যথাযথ সংগ্রহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শশালার অভাবে তাঁর কাজের আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি

বাধা পেরিয়ে

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফিরে আসুক পৌষমেলা’ (২৪-৮) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। পৌষমেলা এখন শুধু বীরভূম বা বোলপুরবাসীর নয়, দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে এই মেলা এখন আন্তর্জাতিক। এটি বাউল-ফকিরদের মিলনমেলাও বটে। আগে ভুবনডাঙার মাঠে তিন দিনের ছোট্ট মেলা হত। ধীরে ধীরে মেলার আয়তন, মেয়াদ বেড়েছে। পরে মেলা বসত পূর্বপল্লির মাঠে, আর এক মাসের আগে এই মেলা ভাঙত না। এ-হেন শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মেলা বিশ্বভারতী গত তিন বছর নিজেদের মাঠে করেনি। স্বাভাবিক ভাবে এই ঘটনা জনগণের হৃদয়ে আঘাত করেছে। আলাদা করে বোলপুরে পৌষমেলা হয়েছে, কিন্তু রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষের আবেগ তাতে সাড়া দেয়নি। এ বছর শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সহায়তায় পৌষমেলার আয়োজন প্রশংসনীয়।

এত বড় মেলা পরিচালনা করতে নানা রকম আইনি জটিলতা ও সমস্যা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তরিকতা ও উদ্যোগ যদি যথার্থ হয়, তবে বাধা অতিক্রম করা যাবে। পৌষমেলা তার দীর্ঘ ১২৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিন বার বন্ধ থেকেছে। এর আগে এক বার কোভিড পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত ছোট করে অল্প দিনের জন্য পৌষমেলা হয়েছিল। বীরভূমের স্থানীয় অর্থনীতিতে পৌষমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এলাকার অর্থনীতি অনেকটাই মেলার উপর নির্ভরশীল। আকৃতি ও দিন বাড়ার জন্য কিছু অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ছে। কঠোর হাতে সেগুলি দমন করতে হবে।

গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

বিতর্কিত

শান্তিনিকেতনে ৭ পৌষের উৎসব প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “সত্য যেখানে সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেখানেই উৎসব। সে উৎসব কবেই বা বন্ধ আছে!” নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন এই অংশটি। তবে তার পরের অংশটুকুও স্মর্তব্য। “পাখি তো রোজই ভোর রাত্রি থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে তার সকালবেলাকার গীতোৎসবের নিত্য নিমন্ত্রণ রক্ষা করবার জন্য। আর, প্রভাতের আনন্দসভাটিকে সাজিয়ে তোলবার জন্য একটি অন্ধকার পুরুষ সমস্ত রাত্রি কত যে গোপন আয়োজন করে তার কি সীমা আছে!... এর মধ্যে আমাদের উৎসব কবে? যেদিন আমরা সময় করতে পারি সেই দিন।” কিন্তু, আমাদের সময় হয়েছে বললেই তো হুট করে পৌষমেলার আয়োজন সম্ভব নয়। এমনিতেই অনভিপ্রেত তিন বছরের বিরতির পর তা ফিরে এসেছে!

২৬ ফাল্গুন ১২৪৯, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের বাড়ি-বাগান-জমিজমা, বিদ্যালয় স্থাপন ও বাৎসরিক মেলার জন্য ট্রাস্ট ডিড সাধারণের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। মহর্ষি আশা করেছিলেন, দেশ-বিদেশের সব ধর্মের গুণী-জ্ঞানী-সাধক-পণ্ডিত সম্প্রদায় তিন দিনব্যাপী ধর্মালোচনায় যোগদান করবেন। ১২৯৮ সনের ৭ পৌষ দ্বিজেন্দ্রনাথ কর্তৃক প্রতিষ্ঠাপত্র পাঠ এবং মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত হয়, তৃতীয় বছরে দরিদ্রদের অন্নদান, পঞ্চম বছরে প্রথম আতশবাজি পোড়ানো হয়। “অতএব ১৩০৩ সালে পৌষ-মেলার আরম্ভ হয়” (গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন, সৈয়দ মুজতবা আলী)।

বিগত তিন বছর বিপন্ন পৌষমেলা নিয়ে বহু তর্ক-বিবাদ হয়েছে। এ বছর প্রশাসনের সক্রিয় যোগদানে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার আয়োজন নিঃসন্দেহে একটা নতুন ‘মডেল’। রবীন্দ্রনাথ মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন “গ্রামীণ কারিগর ও লোকশিল্পীদের সৃজন-সম্ভার” পৌষমেলার বৃহত্তর অঙ্গনে উঠে আসুক। বাস্তবচিত্রটি কেমন? যাঁরা ফি-বছর যেতেন, তাঁরা বিশদে জানেন। মেলাপ্রাঙ্গণে ভিড়ের চাপে সকালের উৎসব বিভীষিকায় রূপান্তরিত হত। হুজুগেপনা কী ভাবে কুৎসিত উল্লাসে পরিণত হয়, পৌষমেলা তার সাক্ষী।

মহর্ষিকে যে উন্মুক্ত-উদার-আকাশতল আকৃষ্ট করেছিল, এখন সেখানে ‘প্রান্তিক’ ছাড়িয়ে বৈভবপূর্ণ বাড়িঘর দেখা যায়। উপরন্তু, হালফিলের কিছু বাংলা ছবিতে শান্তিনিকেতন একটি নাগরিক-চরিত্র হয়ে উঠেছে। নইলে বেলাশেষে ছবির শুটিং কোথায় হয়েছিল, তাও টুরিস্টদের দ্রষ্টব্য হয়?

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

অপশব্দ

তূর্য বাইনের ‘এও এক সামাজিক অপরাধ’ (১৮-১২) প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক। আশেপাশের লোকজনের তোয়াক্কা না-করেই জনপরিসরে এক শ্রেণির মানুষ অকাতরে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে চলেছেন। এঁদের অনেকেরই পোশাক-পরিচ্ছদে উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাপ স্পষ্ট। নিজেদের আলাপচারিতায় অশ্লীল শব্দ মুদ্রাদোষের মতো ব্যবহারে অভ্যস্ত নতুন প্রজন্মের এই তরুণ-তরুণীরা যে পরিবার থেকে এই শব্দ ব্যবহারের শিক্ষা পায়নি, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সর্বসমক্ষে অশ্লীল শব্দ ব্যবহারের মতো কদর্যতার উদ্‌যাপন বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত। শুধু গালি দিয়ে লক্ষ লক্ষ ভিউয়ারের আশীর্বাদ পেয়ে কোনও কোনও ‘ইউটিউবার’ আজ অনেকেরইঈর্ষার পাত্র।

মনোবিদদের মতে, ক্ষমতা জাহিরের অন্যতম হাতিয়ার হল কুকথা। অনেকের মতে, অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ আদতে ক্রোধ বা হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এই সামাজিক ব্যাধির মূলে রয়েছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। গণমাধ্যমের শক্তি কতটুকু, এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয় রোধ করার!

সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন