—প্রতীকী চিত্র।
‘ছেলেখেলা’ (১৩-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি নিয়ে কিছু কথা। দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলির ভিত্তি হল গ্রামীণ অর্থনৈতিক স্থিতি, তথা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান। গ্রামের মানুষের মধ্যে বৃহদংশ শ্রমজীবী এবং অদক্ষ শ্রমিক। সেই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতা-নির্ভর শিল্পকর্মগুলি ক্ষয়িষ্ণু। তার উদাহরণ হল তাঁত শিল্প। পাওয়ারলুমের দাপটে বংশানুক্রমে যাঁরা তাঁতের শাড়ি, গামছা বুনতেন, তাঁদের পক্ষে যান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সম্ভব হল না। এর ফলে শ্রমজীবী মানুষের রুজিরোজগারে সঙ্কট বৃদ্ধি পেল। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করল। এর মধ্যে চাষবাসে কর্মরত মুনিশ-মান্দাররাও আছেন, কারণ যখন মাঠে কাজ থাকে না তখন তাঁরাও কর্মহীন। এই বিশাল কর্মহীন শ্রমজীবীদের মজুরিভিত্তিক কাজের সংস্থান করার লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ অর্থানুকূল্যে বিভিন্ন ধরনের শ্রমনিবিড় প্রকল্প ‘জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প’ শিরোনামে রূপায়িত হত। প্রধানত পুকুর খনন প্রাধান্য পেত।
কিন্তু বেশ কিছু দিন হল কেন্দ্রীয় সরকার অর্থের জোগান বন্ধ করেছে। তার কারণ নাকি হিসাবের গরমিল। সেটা আধিকারিকরা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিচ্ছেন না কেন? গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অবশ্যই থাকবে, এবং যৌথ উদ্যোগে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে মজবুত করবে, এটাই প্রত্যাশিত। মনে রাখতে হবে, সরকারের কোনও রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। রাজনৈতিক মতপার্থক্য প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার রূপ নিলে সর্ব ক্ষেত্রেই দুর্দিন অনিবার্য। রাজ্য ও কেন্দ্রের রেষারেষিতে গ্রামের মানুষের রোজগার ব্যাহত হবে, তাঁরা অভুক্ত থাকবেন, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আর রাজ্যের দেয় অর্থে শুধুমাত্র শ্রমভিত্তিক প্রকল্প রূপায়ণ প্রায় অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট ব্যবহার পরিত্যাজ্য।
সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১
হিন্দুত্বের আফিম
লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, নিজের ভাবমূর্তিকে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী! সদ্যসমাপ্ত জি২০ সম্মেলনের মঞ্চকে ব্যবহার করে ডিসেম্বরে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ‘সেমিফাইনাল’ এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ‘ফাইনাল’ উতরোতে মোদীর ইমেজই অস্ত্র বিজেপির! বিশ্বমঞ্চে ভারতের উপস্থিতিকে মোদীর সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির! ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির এই মানুষটির জন্য বিশ্বমঞ্চে দাদাগিরি দেখাচ্ছে ভারত— এই ধারণাকে জনগণের মনে বদ্ধমূল করে তুলতে চাতুরিমিশ্রিত পন্থা নিতে চাইছে দল। অথচ, যাঁদের কাছে ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ফেরি করে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন মোদী, সেই আম আদমির কাছে জি২০ সম্মেলনের আদৌ কোনও মাহাত্ম্য আছে বলে মনে হয় না! জি২০ খায় না মাথায় দেয়, এই ধারণাই হয়তো নেই ট্রেনে, বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে কাজে যাওয়া মানুষগুলোর!
তাঁদের কাছে আলোচ্য বিষয় একটাই— লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকার গ্যাসের দাম দু’শো টাকা কমালেও, ক্ষমতায় এলে কি ফের ঝোপ বুঝে কোপ মারবে? পাশাপাশি, ইন্ডিয়া বনাম ভারত বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে জনমানসে ‘দেশাত্মবোধ’ জাগ্রত করার সুচতুর কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী! বিরোধী জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণের ফলেই কি এই শব্দটি হঠাৎ অচ্ছুত হয়ে গিয়েছিল মোদীজির কাছে? জি২০ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ বলে উল্লেখ, ‘ভারত মণ্ডপ’ শব্দের উল্লেখ, গান্ধীজির সমাধিক্ষেত্রে মোদীর দেওয়া পুষ্পস্তবকে ‘রিপাবলিক অব ভারত’ কথাটির উল্লেখ, বাদ থাকেনি কিছুই! অর্থাৎ, সুকৌশলে ‘ভারত’ শব্দকে কেন্দ্র করে জনগণের আবেগ উস্কে দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে নিঃশব্দে জল মাপা শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে! চন্দ্রযান-৩’এর সফল উৎক্ষেপণের কৃতিত্বও দাবি করা হয়েছে! সব শেষে, রাম মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্বের অস্ত্রে শাণ দেওয়া! এ ভাবেই ষোলো কলা পূর্ণ হচ্ছে!
আসলে, মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ইত্যাদি জ্বলন্ত সমস্যায় নিষ্পেষিত জনগণের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে নরেন্দ্র মোদীর নিরাপদ পুঁজি হল হিন্দুত্বের জিগিরমিশ্রিত ভুয়ো দেশাত্মবোধ! জনগণকে হিন্দুত্বের আফিম খাইয়ে বুঁদ করে রাখার পাশাপাশি ভারতের জনগণের মগজে মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিকে প্রতিষ্ঠিত করাই যেন বিজেপির গূঢ় অভিসন্ধি! কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ দেখে স্পষ্ট, সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করার পরিবর্তে উগ্র দেশপ্রেম, কট্টর হিন্দুত্ব, রাম মন্দির নির্মাণ, চন্দ্রযান, এবং জি২০ সম্মেলনের মতো নিরাপদ পুঁজিকে আঁকড়ে ধরে ২০২৪-এর নির্বাচন পার হতে চাইছে বিজেপি!
সৈকত কর্মকার, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
তদন্তের গতি
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার দু’-তিন বছরের মধ্যে সারদা কেলেঙ্কারির মতো বড় আর্থিক দুর্নীতি দেখা গেল। একাধিক নেতা, মন্ত্রী এর সঙ্গে যুক্ত বলে শোনা যায়। আদালতের নির্দেশে সারদা তদন্ত সিবিআই করছে, কিন্তু প্রথম দিকে এই তদন্ত গতিপ্রাপ্ত হলেও সময়ের সঙ্গে তার গতি শ্লথ হয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে সারদা তদন্ত দশ বছর ধরে চলছে। যখন ভোট আসে, তখনই অভিযুক্তদের ডাকাডাকি শুরু হয়। আবার ভোট কেটে গেলেই সব চুপচাপ। কিন্তু সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা যারা লুট করল, তাদের শাস্তি হয় না। ২০১৬ সালে প্রকাশ হল নারদা স্টিং অপারেশন, সেখানে জনপ্রতিনিধিদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গেল। আদালতের নির্দেশে এই কেলেঙ্কারিরও তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। অনেক নেতা-মন্ত্রীকে তলব করেছে তদন্তকারী সংস্থা, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না।
বাংলার মানুষ দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের উপযুক্ত শাস্তি কবে হবে। কিন্তু সিবিআই যেন রাজনৈতিক ইঙ্গিতের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ভোট এলেই এমন তৎপর হয়ে ওঠে যে মনে হয়, এই বুঝি সব অভিযুক্তকে জেলে পুরে দেবে। কিন্তু ভোট পর্ব কেটে গেলেই এদের সক্রিয়তা দেখা যায় না। ২০১৯ সাল থেকে আবার বাংলায় আরও বড় কেলেঙ্কারি ধরা পড়ল— শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি। এ বারেও মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্ত চলছে, অভিযুক্তদের ডাকাডাকি হচ্ছে। কিছু লোককে জেলের ভাত খেতেও হচ্ছে। কিন্তু তদন্ত ঠিক পথে এগোলে সত্য বার করতে এত সময় লাগার কথা নয়। রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত না হয়ে, বাংলার মানুষের স্বার্থে যথার্থ তদন্ত হোক।
চিত্তরঞ্জন মান্না, চন্দ্রকোনা রোড, পশ্চিম মেদিনীপুর
বিকেলের খেলা
স্কুলে ছুটির পর প্রায় সব শিশুকে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে পাঠিয়ে দেন অভিভাবকরা। এ ছাড়াও ছবি আঁকা, সাঁতার শিখতেও পাঠিয়ে দেন। অভিভাবকদের মনে রাখা দরকার, বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলার মাঠে ছুটোছুটি করে খেলার গুরুত্বই আলাদা। এর ফলে যেমন শরীর গঠন হয়, তেমনই বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারায় সহযোগিতার মনোভাব, বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসা, আন্তরিকতা ইত্যাদি গড়ে ওঠে। স্বার্থপরতা ও একাকিত্ব দূর হয়। পড়া, আঁকা, সাঁতার প্রভৃতি নানা দক্ষতা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু বিকেলে প্রতি দিন খেলাধুলোর বিকল্প হতে পারে না সেই সব ক্লাস। শিশুরা শৈশবে খেলতে না পেলে খেলবে কবে?
সন্তানের ফাঁকা সময় ওদের স্মার্ট ফোনে খেলতে না দিয়ে, বিকেলে মাঠে খেলতে পাঠান প্রতি দিন— প্রত্যেক অভিভাবকের কাছে এই অনুরোধ রইল।
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল, তারকেশ্বর, হুগলি