Typewriter

সম্পাদক সমীপেষু: মেয়েদের সেই যন্ত্র

লেখকের মতে, মেয়েদের কাজের জগতে টেনে আনার মুখ্য চালিকাশক্তি এই মেশিন। সরকারি দফতরে টাইপিস্ট হিসেবে ঢোকা যেত এসএসসি, পিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৬
Share:

১৮৭০ সালে আমেরিকায় কেরানির কাজে ছিলেন মাত্র আড়াই শতাংশ মহিলা, ১৯৩০ সালে দাঁড়াল ৫২%। প্রতীকী ছবি।

তৃষ্ণা বসাক তাঁর ‘মেয়েদের নিজস্ব পরিচয়ের যন্ত্র’ (১০-২) প্রবন্ধে উস্কে দিয়েছেন সদ্য অতীতে চলে-যাওয়া টাইপরাইটার মেশিনের বহুল ব্যবহৃত স্মৃতিটিকে। লেখাপড়ায় মাঝারি মাপের ছেলেমেয়েদের স্কুল ফাইনাল বা হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পরেই বলা হত টাইপ স্কুলে ভর্তি হতে, তাতে সরকারি দফতরে মিলে যেতে পারে একটা ক্লার্ক-টাইপিস্টের চাকরি। সঙ্গে শর্টহ্যান্ড শিখে নিতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। পাড়ায় দু’একটা টাইপ স্কুল নেই, এমন অঞ্চল ছিল বিরল। সেই সব স্কুলে সরস্বতী পুজো হত ঘটা করে। লেখকের মতে, মেয়েদের কাজের জগতে টেনে আনার মুখ্য চালিকাশক্তি এই মেশিন। ১৮৭০ সালে আমেরিকায় কেরানির কাজে ছিলেন মাত্র আড়াই শতাংশ মহিলা, ১৯৩০ সালে সে সংখ্যা দাঁড়াল ৫২%। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি দফতরে টাইপিস্ট হিসেবে ঢোকা যেত এসএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে। ১৯৭৮ সালে এজি বেঙ্গলে চাকরিতে ঢুকে দেখলাম, সেখানে দোতলার একটি বিশাল হল জুড়ে রয়েছে একটি টাইপিং পুল, যেখানে কাজ করতেন ৫০-৬০ জন, বেশির ভাগ মহিলা কর্মী। বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় শোনা যেত এই টাইপের কনসার্ট। প্রথম বাজারে টাইপরাইটার আনে রেমিংটন কোম্পানি, দেখতে ছিল অনেকটা সেলাই মেশিনের মতো। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, এমনকি আশির দশকের এই মেশিনের বিপুল ব্যবহার ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিসে। ফিল্মে, গল্পে এই যন্ত্রের ব্যবহার দেখা যেত অফিসের আবহ দেখাতে। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘অবতরণিকা’ গল্পে অফিসের আবহ তৈরির করেছে টাইপরাইটারের খুটখাট। পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ছবিতে টাইপরাইটার-এর চলার তালে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিয়ানো বাজানোর দৃশ্য কি ভোলা যায়?

Advertisement

ভারতে এক সময় বছরে ৫০,০০০ টাইপ মেশিন তৈরি করত যারা, সেই গোদরেজ সংস্থা ২০০৯ সালে এই মেশিন প্রস্তুত করা বন্ধ করে দেয়, চাহিদা না থাকার জন্য। কম্পিউটার আসায় টাইপরাইটার-এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। কোনও এক দিন হয়তো আরও উন্নত আবিষ্কার কম্পিউটারকেও স্মৃতির অন্তরালে ঠেলে দেবে।

দিলীপকুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

Advertisement

বাংলার ব্যবহার

ঈশা দাশগুপ্তের ‘নিজের ভাষায় পড়ার অধিকার’ (৯-২) শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী। প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত হয়েও কিছু বলতে চাই। সরকারি দফতরে দৈনন্দিন নথিপত্রের কাজে বাংলা ভাষার বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিয়ে নির্দেশিকা অনেক বার দেওয়া হয়েছে, চালুও হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে উৎসাহে ভাটা পড়েছে। তার কারণ, ব্রিটিশ রাজের জন্য ইংরেজিতে মোসাহেবির সংস্কৃতি আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে মজ্জাগত। এ বার আসা যাক শিক্ষাক্ষেত্রের বাংলা ভাষার প্রয়োগের বিষয়ে। বিভিন্ন বিষয়ে, এমনকি সাম্মানিক স্নাতক, স্নাতকোত্তরের পাঠ্যবইগুলির বঙ্গানুবাদ হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দ্বারা। কিন্তু বিদেশি লেখকদের বইগুলির বঙ্গানুবাদ করা যেমন দুরূহ, তেমন তা বোঝাও কষ্টকর। এ ছাড়াও কারিগরি, চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে বাংলা প্রতিশব্দগুলি বেশ খটমট! উচ্চশিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজে এখনও ইংরেজি ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে অফিস কাছারিতে বাংলার ব্যবহার অবশ্যই নিশ্চিত করা যেতে পারে।

সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি

সরকারি ভাষা

‘বাংলার দশা’ (৪-২) শীর্ষক প্রদীপ চক্রবর্তীর পত্র প্রসঙ্গে এই লেখা। ওড়িশা থেকে মহারাষ্ট্র, ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে ভূমিজ ভাষা-কেন্দ্রিক দফতর স্বমহিমায় বিরাজ করে। সেগুলি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভূমিজ ভাষার উন্নয়নে নিমজ্জিত থাকে, রাজ্যের সব ক্ষেত্রে তার ব্যবহার আবশ্যক করে। বেঙ্গালুরু শহরে মেট্রো রেলের সূচনাপর্বে স্টেশনগুলির নামফলকে কন্নড়ের সঙ্গে হিন্দিও ছিল। রাজ্যের জনগণের তীব্র প্রতিবাদের সামনে নতজানু হয়ে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ নামফলক থেকে হিন্দি সরিয়ে দিল। মহারাষ্ট্রের ডাক বিভাগে (যা কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত) চাকরি পেতে হলে প্রার্থীকে মরাঠি ভাষা জানতেই হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ গুজরাতের বুকে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তা লিপিবদ্ধ হয়েছিল বিশুদ্ধ হিন্দি ভাষায়, ভূমিজ ভাষা গুজরাতি ব্যবহার করেনি। তার প্রতিবাদে গুজরাতি কৃষকরা যে মামলা করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাত হাই কোর্ট ২০১২ সালে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে, গুজরাতিদের জন্য হিন্দি হল বিদেশি ভাষা। এই রায়ের মর্মার্থ এই যে, হিন্দি উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা; অবশিষ্ট ভারতে তা স্রেফ এক বিদেশি ভাষা বই কিছু নয়। ভারত বিভিন্ন অঞ্চলের এক সমষ্টি, আর প্রতিটি অঞ্চল স্বতন্ত্র ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যতে সমৃদ্ধ। সুতরাং, এই বৈচিত্রপূর্ণ দেশকে কোন স্পর্ধায় কেবল হিন্দির পদতলে পিষ্ট করা যায়! গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সরকার ও নাগরিক সচেতন ভাবে আপন ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা এবং হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিবাদ করে।

ব্যতিক্রম যেন শুধু পশ্চিমবঙ্গ! রাজ্যের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে, নানা সংস্থায় বাংলা ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে খোদ বাঙালি ‘প্রাদেশিকতা’ রূপে গণ্য করে! তাই বাংলার বুকে অবস্থিত রেল স্টেশন, বিমানবন্দর, ডাকঘর, ব্যাঙ্কে বাংলাকে সরিয়ে, বা লঘু করে, হিন্দি আরোপ বাঙালির জাত্যভিমানকে আঘাত করে না। রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করেনি, যদিও হিন্দি, উর্দু, নেপালি, তেলুগু প্রভৃতি ভাষাকে ‘সরকারি ভাষা’-য় উন্নীত করছে। আর বাংলার মাটিতে হিন্দিতে কথা বলে বাঙালি যে কত ধন্য ও কৃতার্থ বোধ করে, সে তো প্রতি দিন ট্রেনে-বাসে, মেট্রোতে, বাজারে, অফিসে, চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি!

ভারতের প্রতিটি রাজ্য যখন রাজ্য সরকারি চাকরিতে (বহু রাজ্যে সেখানে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায়, শিল্পে ও বেসরকারি অফিসেও) ভূমিজ ভাষার ব্যবহার আবশ্যক করে ভূমিপুত্রদের স্বার্থ ও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করেছে (সে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেই হোক বা পরিষেবা পাওয়ার লক্ষ্যে), তখন এক বর্ণ বাংলা না জেনেও অন্য রাজ্যের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে অনায়াসে রাজ্য সরকারি ক্ষেত্র-সহ সর্বত্র চাকরি করে যাচ্ছেন! যদিও কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় কর্মরত বাঙালি, বা পশ্চিমবঙ্গবাসী কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় হিন্দিতে কাজকর্ম করার জন্য! বহু বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাওয়ার শর্ত, প্রার্থীকে হিন্দি জানতে হবে! আজ ভাষা সাম্রাজ্যবাদীরা নির্দ্বিধায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে, এমনকি ব্যাঙ্কেও বাংলাকে অবলুপ্ত করে হিন্দি আরোপ করে চলেছে।

কাজল চট্টোপাধ্যায়, সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

সময়সূচি

মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়সূচি মাঝেমধ্যে বদলায়, এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনের কারণে ইতিহাস পরীক্ষার দিনক্ষণ পরিবর্তিত হয়ে হল ১ মার্চ। ২ মার্চ অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন। পুরনো রুটিনে ১ মার্চ ছুটি ছিল। অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন এ-যাবৎ কাল ছুটি থাকার চল আছে। দুর্বল ছেলেমেয়েদের অঙ্ক ভীতি চিরকাল। সাধারণত সে কথা মাথায় রেখে রুটিন করা হয়।

চিরকাল বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো মানতে কষ্ট হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করার আগে সর্বদলীয় বৈঠক করেন। শাসকগোষ্ঠী-সহ বিরোধীরা সেখানে উপস্থিত থেকে নির্ঘণ্ট ঠিক করেন। প্রশ্ন হল, তাঁরা কি এক বছর আগে নির্ঘণ্টগুলো মনে রাখেন না? ‘সবার আগে শিক্ষা’— এ কথা আজও আমাদের অধরা রয়ে গেল!

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন