Vlogging

সম্পাদক সমীপেষু: দৌরাত্ম্য নয়, পেশা

আজ বিশ্ব জুড়ে একটি জনপ্রিয় ও স্বাধীন পেশা ভ্লগিং, যার মধ্যে দৌরাত্ম্য তো দূর, কোনও অন্যায় নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৩১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘ভ্লগার দৌরাত্ম্য’ (১০-৭) শীর্ষক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে বলছি, ভ্লগারদের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর ও ভুল।

Advertisement

প্রথমেই জানাই, আজ বিশ্ব জুড়ে একটি জনপ্রিয় ও স্বাধীন পেশা ভ্লগিং, যার মধ্যে দৌরাত্ম্য তো দূর, কোনও অন্যায় নেই। প্রসঙ্গত, বহু অন্য বিষয়ের পেশাদাররাও বর্তমানে এই পেশায় সাফল্যের সঙ্গে রয়েছেন, যাঁদের সাহায্য সরকারি পর্যটন বিভাগ ও বিভিন্ন নামীদামি ভ্রমণ পত্রিকারাও নেয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গার ছবি, বেড়ানোর তথ্য রুচিশীল ও বাণিজ্যিক ভাবে সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরায় কোনও ভুল নেই। ট্রেন চলাকালীন ভিডিয়ো করা, ফটো তোলা বা কথা বলায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, যত ক্ষণ না তা অন্য যাত্রীর ব্যক্তিগত জায়গায় আঘাত করছে। সে জন্যই পেশাদার ভ্লগাররা এই কাজের সময় আশপাশের যাত্রীদের থেকে অনুমতি নিয়ে থাকেন। কোনও যাত্রীর মুখ তাঁরা একক ভাবে ক্যামেরায় দেখান না। ভিড়, গোলমাল, দুর্ঘটনা ইত্যাদি সমষ্টিগত ছবি দেখানোয় ও সঠিক তথ্য পরিবেশনায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তা ছাড়া প্রত্যেক পেশাদার ভ্লগার তাঁদের যাত্রার আগে রেলের অনুমতি নেন ও তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করেন। বেড়ানোর জায়গাতেও তাঁরা একই নিয়ম অনুসরণ করেন।

ডাউন পুরী হাওড়া বন্দে ভারত যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিল, তার খবর সবার আগে ভ্লগাররাই তুলে ধরেছিলেন। বস্তুত, তাঁদের খবর পরিবেশনের বেশ খানিক পরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম খবর পায়। এ ছাড়াও সে দিন অনেক ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াই প্রতিষ্ঠিত পেশাদার ভ্লগারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ও তৎকালীন পরিস্থিতির খবর নেন। ওই দিনের সমস্ত সঠিক তথ্যই তাঁরা ইউটিউবে পরিবেশন করেছিলেন। অথচ, সে দিনই যাত্রীদের একাংশ ইচ্ছাকৃত এবং নজিরবিহীন ভাবে তাঁদের আক্রমণ ও হেনস্থা করেছিলেন। সে সময়ও ভ্লগাররা কাউকে বিরক্ত না করেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছিলেন। পরে হেনস্থাকারীদের বিরুদ্ধে হাওড়া জিআরপি-তে অভিযোগ দায়ের হয়।

Advertisement

আরও একটি তথ্য সকলের জানা উচিত। রেল-সহ সরকারি পর্যটন বিভাগ তাদের বিশেষ অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনে পেশাদার ভ্লগারদের আমন্ত্রণ জানায় ও বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে তাঁদের সঙ্গে গাঁটছড়াও বাঁধে। বিশেষ ট্রেন ও কর্মসূচির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া, তার ভাল দিকের পাশাপাশি খুঁতগুলো তুলে ধরা ভ্লগারদের নৈতিক ও পেশাগত বাধ্যবাধকতার মধ্যেই পড়ে। যদি কেউ ভাবেন শুধু বেড়িয়ে, ভিডিয়ো করে আয় হচ্ছে, তা হাস্যকর। কারণ, বহু পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা, নিখুঁত এডিটিং ও ক্রমাগত রুচিশীল ও বাস্তবসম্মত পরিবেশনা হলে তবেই এক জন ভ্লগার প্রতিষ্ঠা পান। কাজেই একটা স্বাধীন, প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন পেশার অযথা দুর্নাম করা উচিত নয়।

অরিত্র মুখোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি

প্রাণঘাতী

“পড়ুয়াদের ‘কবরস্থান’ আইআইটি, খোলা চিঠিতে ক্ষোভ” (১৬-৭) সংবাদটি পড়ে মনে হল, সংরক্ষণের উদ্দেশ্য কী ছিল আর কী হল। স্বাধীনতা-উত্তর পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর দায়িত্ব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিতে যখন পিছিয়ে গেল শিক্ষিত সমাজ, তখন নতুন রাষ্ট্রের আধারে গণতান্ত্রিক ভাবে তা প্রতিষ্ঠিত হল সাংবিধানিক অধিকারের মাধ্যমে। ভাবা হয়েছিল সাংবিধানিক অধিকার অর্জন ও প্রয়োগের সুফলে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার প্রভাবে কয়েক দশক বাদে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর সমাজে আর দরকার হবে না সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার। কিন্তু দীর্ঘ সাত দশক পর এখন দেখা যাচ্ছে দেশ গড়ার উদার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বদলে দেশ ভাঙার দলীয় সঙ্কীর্ণ রাজনীতির শিকার হয়ে বিশ্বে বৃহত্তম গণতন্ত্রে সমগ্র সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি হাঁসফাঁস করছে। সংরক্ষণের সুবিধা পেয়েও আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। এর জন্য কে দায়ী?

দিল্লি আইআইটি-র জনৈক জনজাতিভুক্ত পড়ুয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের অনেকের র‌্যাঙ্কিং পিছনে থাকলেও আসন সংরক্ষণের জন্য আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে তারা পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এর পরে সাধারণ বিভাগের পড়ুয়াদের সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না এবং শেষ পর্যন্ত চাকরিও পায় না। এর সঙ্গে পড়াশোনার সময় জাতিগত মর্যাদার ফারাক ও সেই সূত্রে অবমাননার ব্যাপার থাকে, যা অনেক সময় প্রকাশ না হলেও আচার-আচরণে অনিচ্ছাকৃত ভাবে লুকিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালে চুনী কোটাল থেকে ২০১৬ সালে রোহিত ভেমুলা হয়ে ২০২৩-এ আয়ুষ আসনা-র নাম জুড়ে দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু তাতে সমাধান হয় না, সমস্যা বরং বেড়ে যায়।

সমস্যাগুলো বিচার করলে এখনই কিছু পদক্ষেপ করা যায়। এক, বর্তমান বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তি-জনসংযোগ-বাণিজ্য মিলে এক অভাবনীয় দ্রুত পরিবর্তনশীল জগৎ তৈরি করেছে, যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এই জগৎ থেকে পালানোর জো নেই। আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা এই জগতের অন্যতম উদ্ভাবক। সুতরাং, এই জগতে ছাত্রকে এই বিষয়ে বিশেষ ভাবে জানতে হবেই। দুই, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির জগতে উদ্ভাবন ঘটে চলেছে সূচক হারে। ইতিমধ্যেই মেটা ভার্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ইত্যাদি আমাদের দৃশ্যমান জগতে যে বিপ্লব এনেছে, তাতে ডিজিটাল বৈষম্য আরও অভিনব সব সমস্যা আনছে। এর ফলে, সাধারণ পড়ুয়ারা হিমশিম খাচ্ছে। জীবনের লক্ষ্য, কাজের জায়গায় জীবিকার ধরন-ধারণ— সবেতেই দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা। এই অস্থিরতা সামলাতে বিশেষ উপদেশ বা পরামর্শ দিতে অথবা কাউন্সেলিং করতে হবে উচ্চশিক্ষার্থীদের। আর সেটা করতে হবে আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় যোগ দেওয়ার আগেই।

অতএব, সংরক্ষণের প্রত্যাশিত উপযোগিতা পেতে উচ্চশিক্ষার্থীকে হয় নিজের চেষ্টায় উপযুক্ত হতে হবে অথবা আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানকে এই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আবশ্যিক পাঠক্রম করতে হবে। প্রয়োজনে এদের যোগ্য করে তোলার জন্য এক বছর অতিরিক্ত লাগতে পারে। এক বছর পর সেই উচ্চশিক্ষার্থী নিজেই বুঝতে পারবে সে উপযুক্ত কি না। তখন সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে। ‘কবরস্থান’ শব্দটি এদের জীবনে শেষ কথা হতে পারে না।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, ফটকগোড়া, হুগলি

অধ্যায় বাদ

সিবিএসই দশম শ্রেণির নতুন পাঠ্যসূচিতে শিক্ষার্থীদের পড়ার ভার কমানোর অজুহাতে বিভিন্ন বিষয়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, বা তার অংশবিশেষ বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে জীববিজ্ঞানে ‘জীবের বিবর্তন’ যেমন বাদ দেওয়া হয়েছে, তেমনই রসায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘পর্যায় সারণি’ অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ পড়েছে।

পর্যায় সারণিতে মৌলগুলিকে তাদের ধর্ম অনুযায়ী সাজানোর ফলে রসায়ন চর্চাকে সুসংহত রূপ দান করা সম্ভব হয়েছে। এর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা মৌলদের ধর্মকে বিচ্ছিন্ন ভাবে মুখস্থ করার পরিবর্তে মৌলদের ধর্ম পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কী ভাবে ও কেন পরিবর্তিত হয়, তা বুঝতে পারে। রসায়ন বিষয়টি তাদের কাছে আর কিছু তথ্যের সমষ্টিমাত্র থাকে না, বরং যুক্তিনির্ভর ও বোধগম্য হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও তারা আগের শ্রেণিতে পড়া পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সঙ্গে মৌলদের ধর্মের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। সোডিয়ামের সঙ্গে পটাশিয়ামের ধর্মের মিল এবং ক্লোরিনের ধর্মের অমিল তখন আর আকস্মিক মনে হয় না, যুক্তি দিয়ে উপলব্ধি করা সম্ভব হয়। এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ দিলে ছাত্রছাত্রীদের বোঝা কমার পরিবর্তে তাদের শিক্ষার ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এক জন শিক্ষক হিসাবে এই পদক্ষেপকে কখনওই সমর্থন করতে পারি না। এই বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীদের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে, এই আশা রাখি।

বাসব অধিকারী, কলকাতা-১৫৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন