Netaji Subhash Chandra Bose

সম্পাদক সমীপেষু: ইতিহাস অজানাই

স্বাধীনতার পরে ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনায় আগ্রহী হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৮
Share:

১৯৪৫ ও ১৯৪৬ বছর দু’টি আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের ধূসর এলাকা হয়ে আছে— সুরঞ্জন দাসের এই অভিমত যথার্থ (‘সে দিনের দেশজোড়া দ্রোহ’, ১৩-২)। কিন্তু রাসবিহারী বসু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের হাতে গড়া আজাদ হিন্দ ফৌজের (আইএনএ) সৃষ্টি বা তাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধেও আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা আছে কি? উত্তরটা নেতিবাচক, নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনাতেও। এর পিছনে রয়েছে এক বিচিত্র আখ্যান। স্বাধীনতার পরে ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনায় আগ্রহী হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী নেহরু বলেন, আইএনএ-র স্বতন্ত্র ইতিহাস লেখা উচিত এবং এর জন্য যোগ্য ইতিহাসবিদ তিনি স্বয়ং নির্বাচন করবেন। তিনি নির্বাচন করেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রতুলচন্দ্র গুপ্তকে। নেহরু তাঁকে বলেন, লেখা শেষ হলে তিনি যেন তা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন। নেহরু আরও বলেন যে, তাঁর কাছে আইএনএ-র বেশ কিছু ফাইল আছে; তিনি তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বার করে প্রতুলচন্দ্রের ইতিবৃত্তের সঙ্গে যোগ করে দেবেন। এর চেয়ে লোভনীয় প্রস্তাব আর কিছু হতে পারে না। প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত তাঁর প্রায় পাঁচশো পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে দেন। এর পর তিনি যত বার অনুসন্ধান করেছেন, একই উত্তর পেয়েছেন— প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত, সময় নেই। এই অবস্থায় ১৯৬৪ সালে নেহরু প্রয়াত হন, ১৯৯০ সালে প্রতুলচন্দ্র। আইএনএ-র ইতিহাস ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাণ্ডুলিপিটি আবিষ্কৃত হয়েছে দিল্লির এক মহাফেজখানায়। কিন্তু তার উপর ‘ক্লাসিফায়েড’ তকমা লেগে গিয়েছে। সুতরাং কোনও দিন তা আমরা হাতে পাব কি না, জানা নেই। এই নিয়ে তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন, কোর্ট-কাছারি সবই হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সুরাহা হয়নি। নেহরু ও প্রতুলচন্দ্র গুপ্তের এই বিনিময়ের কথা জানা যায় অধ্যাপিকা ও নেতাজি-অনুসন্ধিৎসু পূরবী রায়ের একটি ভাষণে, যা ইউটিউবে উপলব্ধ। পূরবী রায় প্রতুল গুপ্তের আত্মীয়।

Advertisement

দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৩

কান্নাকাটি

Advertisement

অশ্রু কি ক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশ, না কি প্রতিক্রিয়ার? না কি এই দুইয়েরই? সম্পাদকীয় (‘অশ্রু কয় প্রকার’, ১৬-২) নিবন্ধ পড়ে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। অশ্রু কত রকমের, জানা নেই। মানুষ দুঃখেও কাঁদে, সুখেও কাঁদে। আবার, প্রিয়জনের মৃত্যুর গভীর শোকেও কোনও মানুষ অশ্রুহীন। অশ্রুমোচন আর অশ্রুগোপন সব সময় সহজ পথ ধরে হাঁটে না। তাই প্রশ্ন, “কেন নয়ন আপনি ভেসে যায় জলে।”

অন্য দিকে, সুখেও কেঁদে ওঠে মন। কথায় কথায় যার চোখে জল, তাকে কি ছিঁচকাঁদুনে বলা যায়? বাচ্চারা দৃষ্টি আকর্ষণের বা দাবি আদায়ের পন্থা হিসেবে জোরে শব্দ করে কাঁদে, তাতে সব সময়ে যে চোখে জল থাকে, তা নয়। কেউ কেউ বলে থাকেন, পুরুষের চোখে জল শোভনীয় নয়। কান্না নাকি মেয়েদেরই সাজে। আজ অবশ্য এমন কথা অচল। অনেকের আবার অন্যের কান্না দেখলেই কান্না পায়।

আবেগ যদি অশ্রু উৎপাদনের কারণ হয়, সেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ, প্রকাশ্যে চোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পড়া সংযত করার দক্ষতা এক আশ্চর্য ক্ষমতা। যাঁর স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ কথায় কথায় কান্নায় রূপান্তরিত হয়, তিনি সহজেই সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যেতে পারেন। মহাকবি লিখে গিয়েছেন, দুনিয়াটা নাট্যমঞ্চের মতো। এখানে অজস্র আবেগের আছাড়ি-পিছাড়ি তো আমাদের অজানা নয়।

রাজা-রাজড়ারা যে কাঁদেন না, তা নয়। রাজা হরিশ্চন্দ্র অশ্রুমোচন করেছেন পুত্র রোহিতাশ্বের সদ্গতির অভাবে। অযোধ্যাপতি দশরথ বুক চাপড়ে বিলাপ করেছেন রাম বনগমন করলে। রামচন্দ্র অশ্রু ঝরিয়েছেন সীতাকে হারিয়ে। ওবামা বা ট্রাম্পের কান্না দেখা গিয়েছে গণমাধ্যমে। এই কান্না মানবিক না রাজকীয়, অশ্রুগ্রন্থির বাহুল্য না শৈথিল্য— কী এর কারণ? বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মিডিয়ার সামনে হুটহাট চোখে জল এসে যাওয়া কোনও দস্তুর না ফিকির, তা আমাদের জানা নেই। সে কথা বলতে পারেন কান্নাকাটি হাসনহাটির সওদাগরেরাই।

রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া

অতীতের শিক্ষা

জয়া মিত্রের ‘প্রকৃতির ক্রিয়া, না মানুষের?’ (১৬-২) সময়োপযোগী এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। নদীতে বাঁধ নির্মাণ, পাহাড় ভেঙে পাকা সড়ক তৈরি, টানেলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ইত্যাদি মনুষ্যকৃত দুষ্কর্মে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রকৃতি ভারসাম্য হারায়, জলের তোড়ে বা তুষারধসে জনপদ নিশ্চিহ্ন করে, শত শত মানুষের প্রাণ নেয়। উত্তরাখণ্ডে ২০১৩ সালে এবং সম্প্রতি ফের পাহাড় তছনছ হওয়ার মতো বিপর্যয় সেটাই আবার প্রমাণ করল। কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা আমরা নিইনি।

এই সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পিছনে বিশ্ব উষ্ণায়নের ভূমিকা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সে-ও তো মনুষ্যসৃষ্ট। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, হিমালয়ের হিমবাহগুলি এই শতাব্দীর শুরু থেকে গলে যাচ্ছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে। দুই মেরুর বরফ ও হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গতিতে গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে এক দিন হয়তো আমাদের সাধের সুন্দরবনের বেশ কিছু অংশ তলিয়ে যেতে পারে। বছর দশেক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে এমন ইঙ্গিত নাকি ছিল। এ বিষয়ে আরও জানতে পারলে ভাল লাগত।

রঞ্জিত কুমার দাস, বালি, হাওড়া

উত্তরাধিকার

সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির ভ্যালেন্টাইন’স ডে, শঙ্খ অধিকারীর এই কথা মোটেই মানতে পারি না (‘চকিত চাহনি’, ১৭-২)। মেরেকেটে দুই দশক গোলাপ ফুল, ক্যাডবেরি ও গিফট-এর বাজার-অর্থনীতি তার স্বার্থে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’, ‘রোজ় ডে’, ইত্যাদি সংস্কৃতির আমদানি করছে। সরস্বতী পুজোর নেপথ্যে আছে ভারতীয় তন্ত্রে হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ এবং সব শেষে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির সুপ্রাচীন ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। ১৯১৫ সালে চন্দননগরে সরস্বতী পুজোর দিনে কর্মী-জীবনকে আদর্শ করে দেশসেবার উদ্দেশ্যে অরুণচন্দ্র দত্তের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হল ‘সন্তান সঙ্ঘ’। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বন্দেমাতরম্ মন্ত্রে ফুঁসছে বাংলা। ফরাসডাঙায় সমাজসেবার আড়ালে অরবিন্দ ঘোষ, মতিলাল রায়ের আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছেন সন্তানরা। চন্দননগরের এই প্রাচীন ক্লাব থেকে ডাক এসেছে নজরুল ইসলামের। কী কাণ্ড! হিন্দুদের সরস্বতী পুজো, উদ্বোধন করবেন মুসলমান? নজরুল এ ডাক উপেক্ষা করতে পারলেন না। তিনি যে শ্যামাসঙ্গীত লিখেছেন, ‘মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়’, ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’। ‘কালী’ শব্দে ছিল দেশপ্রেমের ইঙ্গিত, বিপ্লবের মন্ত্র। সন্তান সঙ্ঘ ঠিক চিনেছিল। সরস্বতী পুজোর দিনে এই প্রতিষ্ঠা আজও স্মরণীয়।

সে দিন নজরুল এখানেই প্রথম পাঠ করেছিলেন ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতা, যা লেখা হয়েছিল ১৩৩১ বঙ্গাব্দে (১৯২৪)। ‘দ্বীপান্তর’ বলতে বুঝিয়েছিলেন আন্দামান ও সেলুলার জেল। শিরোনামে আন্দামান হয়ে গেল ভারত মা। “আসে নাই ফিরে ভারত-ভারতী/ মা’র কতদিন দ্বীপান্তর?/ পুণ্য বেদীর শূন্যে ধ্বনিল/ ক্রন্দন – ‘দেড় শত বছর।’” এই কবিতারই শেষে রয়েছে, “তবে তাই হোক। ঢাক অঞ্জলি,/ বাজাও পাঞ্চজন্য শাঁখ!/ দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক!” সরস্বতী পুজোর দিনে এই আবাহনের উত্তরাধিকার নিয়ে চলেছে আজকের বাংলা ও বাঙালি। তার কি ‘ভ্যালেন্টাইন’ স্মরণ সাজে?

শুভ্রাংশু কুমার রায়, ফটকগোড়া, চন্দননগর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন