Society

সম্পাদক সমীপেষু: আজব সমীক্ষা

শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চাকরির অভাবের প্রসঙ্গে রাজ্যে বড় শিল্প না থাকার কথা বার বারই উঠে এসেছে। এখানে সরকারি ক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক নিয়োগ হয়ে থাকে এসএসসি এবং পিএসসি-র মাধ্যমে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:১২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘স্বেচ্ছায় কর্মহীন’ (১৫-১) প্রবন্ধে দেশের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব সম্পর্কে নানা তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে এক উজ্জ্বল চিত্র তুলে ধরেছেন সুগত মারজিৎ, যার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সচ্ছল পরিবারের পুত্রকন্যার পাশাপাশি জনৈক ভিক্ষুকের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, অনেক সময় তাঁরা স্বেচ্ছায় কর্মহীন থাকেন। অংশত সহমত হয়েও প্রশ্ন ওঠে, দেশে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ সচ্ছল বা বিত্তবান? মনে রাখা দরকার, আশি কোটি দরিদ্র পরিবারকে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে‌। বড়লোকের ‘বাউন্ডুলে’ সন্তান ছাড়া কেউ কি স্বেচ্ছায় কর্মহীন হয়ে থাকতে চান? রাজ্যে বেকারত্বের হার যদি এত কম হয়, তা হলে একশো দিনের কাজের এত চাহিদা কেন? ‘পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’-র ফলাফল উল্লেখ করে প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত বেতন না পাওয়ায় স্বেচ্ছায় কর্মহীন থাকেন। এই বক্তব‍্য কতটা অসার তার প্রমাণ, একটা ডোমের চাকরির জন্য স্নাতকোত্তর-সহ পিএইচ ডি ডিগ্ৰিধারীর আবেদন। স্বেচ্ছায় কর্মহীন থাকার চেয়ে অনেকেই বরং কম বেতনে কাজ করছেন, এমন উদাহরণ নিশ্চয়ই সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে অজস্র মিলবে।

Advertisement

শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চাকরির অভাবের প্রসঙ্গে রাজ্যে বড় শিল্প না থাকার কথা বার বারই উঠে এসেছে। এখানে সরকারি ক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক নিয়োগ হয়ে থাকে এসএসসি এবং পিএসসি-র মাধ্যমে। কয়েক বছর ধরে এসএসসি পরিচালিত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বন্ধ। ‘ক্লার্কশিপ’ এবং ‘মিসলেনিয়াস’ পরীক্ষার মাধ্যমে ইতিপূর্বে বহু শিক্ষিত যুবক-যুবতী চাকরি পেতেন। কিন্তু পিএসসি-র ওই সমস্ত পরীক্ষা এখন অনিয়মিত এবং ফল প্রকাশ ও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতায় বেকারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। যে সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন, তার উপর কতটা নির্ভর করে থাকা যায়?

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

Advertisement

কাজের সম্মান

সুগত মারজিৎ বলেছেন, ভারতে স্নাতক স্তরে যেখানে বেকার ১৩.৪ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ৭.৩ শতাংশ। অর্থাৎ, রাজ্যে বেকার সংখ্যা কম। যতই পরিসংখ্যান দেখানো হোক, এ রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বা অন্যত্র চাকরির সুযোগ কতটুকু? পশ্চিমবঙ্গের মেধাবীরা দক্ষিণ বা উত্তর ভারতের দিকে ক্রমশ ঝুঁকছেন। দূরের জেলাগুলিতে উচ্চমানের শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এখানে স্বেচ্ছায় বেকারত্ব গ্রহণ করছেন বহু যুবক এই ভেবে যে, শিক্ষিত হয়েও যদি কেউ নিম্নমানের কাজ করেন, তা হলে তার মানহানি হতে পারে। বা তার পরিবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকবে না। যদি কোনও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ঘরের ওয়্যারিং বা মেরামতির কাজ করতে চান আর পরিবারের অন্য পরিজন আর্থিক ভাবে সচ্ছল হয়, তবে এই ধরনের কাজ থেকে তাঁকে বিরত রাখা হয়। অথচ, বিদেশে বহু উচ্চ শিক্ষার্থী পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কাজ করে রোজগার করেন। বিদেশিদের মধ্যে এখনও এই উন্নাসিকতা আসেনি। কোনও কাজ ছোট নয়, কথাটা যতই আমরা বলি, বাস্তবে সম্মানহানির জন্য সেই কাজ করি না। এটা স্বেচ্ছায় কর্মহীনতা নয় কি? এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদেরও কম দক্ষতার কাজে ব্রতী হওয়া দরকার।

দিলীপ কুমার চন্দ্র, গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

দক্ষতার ক্ষেত্র

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে কেবলমাত্র চিকিৎসক ও নার্সিং পরিষেবায় যুক্ত মানুষদেরই চিহ্নিত করা হত। সম্প্রতি চিকিৎসা পরিষেবার প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রতি তাগিদ অনুভব করে মেডিক্যাল টেকনোলজি বিভাগকে উন্নীত করার উদ্যোগ করেছে রাজ্য সরকার। এ রাজ্যে এখন মোট পনেরোটি মেডিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে পঠনপাঠন হয়। সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাধারণ প্যারামেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে সর্বমোট ৫০টি জায়গায় এখন এই কোর্সগুলো পড়ানো হয়। আগে শুধুমাত্র ল্যাবরেটরি মেডিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে পঠনপাঠন করানো হলেও, ক্রমে চিকিৎসার প্রায় প্রতিটি বিভাগে, যেমন অপারেশন থিয়েটার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, পারফিউশন, রেডিয়ো ইমেজিং, ফিজ়িয়োথেরাপি প্রভৃতিতে আলাদা আলাদা করে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট নিয়োগ হতে থাকে। এঁরা নার্সিং বিভাগের সমতুল্য, অর্থাৎ গ্রুপ বি শ্রেণিভুক্ত, কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি ক্যাডার, যাঁরা শুধুমাত্র হাসপাতালের সুপার ও অপারেশন থিয়েটার বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের অধীনে থেকে সরাসরি স্বাস্থ্য ভবন ও হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু হিসাবে কাজ করেন। নার্সিং বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন তাঁরা কখনও নন, কিন্তু সুসম্পর্ক আবশ্যক।

২০২০ সালের পরে আমাদের রাজ্যে অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজিস্ট বিভাগের মূল কাজ অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের কাজে অ্যানেস্থেটিস্টকে সহায়তা করা, অপারেশন থিয়েটারের সমস্ত যন্ত্রপাতির হিসাব রেখে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে তার তদারকি করা। সমস্যা হল, রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য ভবন কর্তৃক নিয়োজিত অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজিস্টদের কর্মপদ্ধতি ও ভূমিকা সম্পর্কে এক প্রকার না জেনেই বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের নার্সিং বিভাগের অধীন মনে করছে। তাঁদের সরকারের পরিকল্পনার বিপরীত কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছে, বা বাধ্য করছে। কোথাও তাঁদের দিয়ে অস্থি ও স্নায়ু সার্জারিতে এক্স-রে দেখাতে অপারেশন থিয়েটার বিভাগে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, আবার কোথাও অটোক্লেভে যুক্ত করানো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক, কারণ সরকার উক্ত বিভাগগুলোতে পূর্বেই কর্মী নিয়োগ করেছে। তা ছাড়া, এটি অপারেশন টেকনোলজিস্টদের কাজের আওতাভুক্ত নয়।

২০১৫-১৬ সালে ভারত সরকারের অধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজিস্টদের কর্ম বিবরণীতে স্পষ্ট বলা রয়েছে, তাঁদের প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট বিভাগের অন্তর্গত হতে হবে এবং ‘টেকনোলজিস্ট’ বলতে হবে, কখনওই ‘টেকনিশিয়ান’ নয়। অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজিস্টদের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার সম্পর্কিত প্রযুক্তির সহায়ক হয়ে উঠতে হবে, এ কথাও ওই বিবরণীতে বলা আছে। এক্স-রে চালানো এবং ওটিতে রেডিয়োলজি বিভাগের কাজ, অটোক্লেভ করা— এগুলো ভারত সরকার নির্দেশিত পূর্ব নির্ধারিত কর্মবিবরণীর অন্তর্ভুক্ত নয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অধিকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

উৎপীড়ন

‘কতটা সীমা পেরোলে তবে’ (১৭-১) লেখায় শব্দদূষণ সমস্যা ও সচেতনতা নিয়ে আলোচনা ভাল লাগল। শব্দবাজির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল— এগুলি যখন খুশি, বিশেষ করে রাতের দিকে ফাটিয়ে অন্যকে বিরক্ত করা যায়। এই সমস্ত মানুষের মনে রাখা প্রয়োজন যে, ব্যক্তিগত আনন্দকে জোর করে সারা পাড়ার মানুষকে জানানো বিরক্তিকর। এই হঠাৎ-শব্দবাজি অনেক ক্ষেত্রেই প্রবীণ তথা শিশুদের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে এবং করেও।

হতেই পারে আনন্দ, কিন্তু তা সীমাহীন হলেই মুশকিল। মানুষের এই ‘অল্পতে সাধ মেটে না’ মানসিকতাই হল সবচেয়ে সমস্যার। প্রশাসনকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে, বন্ধ করতে হবে শব্দবাজির ব্যবহার, লাগাম টানতে হবে ডিজে ব্যবহারেও।

সুপ্রতীক দালাল, উত্তর ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন