শোভনলাল দত্তগুপ্তের ‘যে পতন ছিল অনিবার্য’ (২৪-১) লেখাটি পড়ে কিছু কথা মনে হল। ১৯৮৩ সালে আমার সঙ্গে পরিচয় হয় সদ্য সোভিয়েট ইউনিয়ন ফেরত শঙ্কর দাসের। তিনি ১৩ বছর মস্কোতে পড়াশোনা করে কেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট করে আমার কর্মস্থল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-তে পুল অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। আমরা দু’জনেই বাঁকুড়ার ছেলে, প্রায় সমবয়সি, তাই পরিচয় বন্ধুত্বে পরিণত হল খুব শিগগিরই। শঙ্করের মাঝেমাঝে ডাক পড়ত অনুবাদক হয়ে কাজের জন্য, যখন সোভিয়েট প্রতিনিধিরা সরকারি কাজে কলকাতা আসতেন। শঙ্কর এক বার রাজভবনের এমন একটি অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছিলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোভিয়েট প্রতিনিধির বক্তব্য বাংলায় এবং এখানকার প্রতিনিধিদের কথা রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। সেই সময় সোভিয়েট ইউনিয়ন আমার কাছে আশ্চর্য বামপন্থী ভাবনাচিন্তার স্বপ্নময় দেশ। সব কিছু মনে হত একটি অভ্রান্ত মডেল, রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’র সতর্কতা স্বীকার করতে মন চাইত না। সেই ১৯৮৩ সালে শঙ্কর বলেছিলেন, “এই সোভিয়েটের পতন হতেই হবে। সোভিয়েট দেশের শ্রমিকরা কাজের সময় কাজ করে না, যাতে ওভারটাইমের সুযোগ পেয়ে যায় এবং যথারীতি বেশি উপার্জন করতে পারে। শ্রমিকেরা এই অলস একটি ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। এক জন শ্রমিক অধ্যাপকের থেকে অনেক বেশি উপার্জন করে। এই ব্যবস্থা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না।” সে দিন অবিশ্বাস্য মনে হলেও কয়েক বছর পরেই সেই কথা সত্য প্রমাণিত হল।
শ্যামল দানা
কলকাতা-৯৪
রাশিয়ার পথ
সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের ৩০ বছর বাদে তার ময়নাতদন্ত করেছেন আবাহন দত্ত (‘ত্রিশ বছর, কেউ কথা রাখেনি’, ২৪-১)। সত্যটা হল, রাশিয়ার গৌরবজনক ইতিহাস সেই দেশের উত্তরাধিকারীরাই যেন শেষ করে দিলেন অতি মার্ক্সবাদী হতে গিয়ে। সর্বহারার বিচার পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে পার্টির গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার স্পর্শে অন্ধ স্তাবকদল, অর্থাৎ পার্টির বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীরাই সমস্ত সোভিয়েট ব্যবস্থা ঘিরে নেয়। এবং, তা পার্টি-প্রধান স্তালিনের নির্দেশেই। লেনিনের জীবদ্দশার শেষ প্রান্তে তাঁর স্ত্রীই এ কথা জানিয়েছেন। এর পরেও কি বুঝতে অসুবিধা হয়, কেন লেনিনের আমলের সমস্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মকর্তাদের অধিকাংশকেই স্তালিন জমানায় হয় ফায়ারিং স্কোয়াড নয়তো গুলাগের সশ্রম কারাবাসে আজীবন বন্দি করে রাখা হয়? কেন ডক্টর জ়িভাগো-র লেখক বরিস পাস্তেরনাক-কে নোবেল পুরস্কার নিতে দেওয়া হয় না? এ সব তো কোনও মার্ক্সবাদের পরিচয় দেয় না! সোভিয়েটের জন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গর্ভে, তার আড়াই দশকের মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্ব তোলপাড়, সেখানে এক সম্পূর্ণ নতুন সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বজায় রাখতে স্তালিনকে নির্দয় হতে হয়েছে।
প্রবন্ধকার যথার্থ ভাবেই দেখিয়েছেন, সে দেশকে দৃঢ় ভাবে ধরে রাখতে গিয়ে অমানবিকতা ফুটে উঠেছে, আবার সমরকৌশলে হিটলারের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তিও দরকার ছিল। রাশিয়া-সহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি নিয়ে যে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল, তা-ও বিস্ময়কর। ১৯৮৯-৯০ সালে সেখানেই অভ্যন্তরীণ বিপর্যয় ডেকে আনে স্তালিনের পরবর্তী প্রজন্ম। তা পুঁজিবাদকে স্বস্তি দেয়। কিন্তু এখনও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমেরিকার বন্ধুত্ব নেই। সমাজতন্ত্র বা গণতন্ত্র যা-ই হোক, তা রুশ জনগণই ঠিক করবে। মনে রাখতে হবে, ৭৪ বছরের সমাজতন্ত্র এবং পরবর্তী ৩০ বছরের গণতন্ত্রের যা ইতিহাস, তাতে সোজা পথে চলা খুব সহজ নয়। তদুপরি ১৯৮৯-৯০’এর মাৎস্যন্যায়, যা বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। এমনই কিছু হয়েছিল চিনের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারেও। তারা কঠোর ভাবে দমন করেছিল। রাশিয়া সে পথে হাঁটেনি।
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
রাস্তা নেই
প্রতাপগড়, নিমতার বাসিন্দা আমরা। বাড়ির সামনে রাস্তা নেই। জায়গাটায় সারা বছর জল জমে থাকে, যার ফলে মেয়ের স্কুলে যেতে খুবই অসুবিধা হয়। মেয়ে গত বছর সবুজ সাথী-র সাইকেল পেয়েছে। সাইকেল, কন্যাশ্রীর অনুদান, এ সবেরই উদ্দেশ্য স্কুলে যাওয়া। পড়াশোনা না করতে পারলে ওই টাকা পাওয়ার উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হচ্ছে।
সমীর কুমার মণ্ডল
কলকাতা-৪৯
ভ্রান্ত প্রতিবেদন
“‘শেষ কথা’ তিনিই, বোঝালেন মমতা” (২৮-১) শীর্ষক সংবাদটির প্রেক্ষিতে এই চিঠির অবতারণা। নিজস্ব সংবাদদাতা লিখেছেন, “অভিষেক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে রদবদল হয় বেশ কয়েকটি জেলা কমিটিতেও। পুরনোদের সরিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুনদের জেলা সভাপতি সহ বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে বসানো হয়। যা নিয়ে দলের পুরনোদের একাংশ ক্ষুব্ধ... মমতা অবশ্য এ সব নিয়ে বৈঠকে বিশদ কিছু বলেননি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তাঁর এ দিনের কিছু কিছু বক্তব্যে বিষয়টির আভাস আছে” ইত্যাদি। উল্লেখ্য, মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পরে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদল হয়। এর ফলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও একাধিক জেলায় বিভিন্ন পদাধিকারী নিযুক্ত হন। বলা বাহুল্য, সর্বোচ্চ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি অনুসারেই দলে রদবদল হয়। এই রদবদল সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সুচিন্তিত পদক্ষেপ। ফলে দলের কোথাও কোনও ক্ষোভ দেখা দেয়নি। জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ-সহ সমস্ত পদাধিকারী গুরুত্ব সহকারে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং, এ বিষয়ে আপনাদের সংবাদপত্রে যা লেখা হয়েছে, তা উদ্ভট মস্তিষ্কের উর্বর কল্পনাপ্রসূত প্রতিবেদন ছাড়া আর কিছু নয়। দ্বিতীয়ত, এক দিকে লেখা হয়েছে ‘মমতা অবশ্য এ সব নিয়ে বৈঠকে বিশদে কিছু বলেননি’, আবার ‘রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের’ অছিলায় ভিন্ন মত তুলে ধরা হয়েছে, যা শুরুতেই উল্লেখ করেছি। এই তথাকথিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সংযোজিত কাহিনিটি সংবাদদাতা মুখরোচক চানাচুর বা চাটনি হিসাবে পরিবেশন করেছেন, তা নিয়ে আমাদের মনে কোনও সংশয় নেই। কারণ, তা শুধু পরস্পরবিরোধী নয়, সত্যের অপলাপও বটে। আর একটি কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু আমাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রীই নন, বাংলার কোটি কোটি জনতার নয়নের মণি।
আশা করি, ভবিষ্যতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল সম্পর্কে সংবাদদাতা এই ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতে দল দ্বিধা করবে না।
সুখেন্দুশেখর রায়
মুখ্য সচেতক, রাজ্যসভা ও জাতীয় মুখপাত্র, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবাদপত্রে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা সাংসদ সুখেন্দুশেখরবাবু যা লিখেছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে, প্রতিবেদনে কোনও তথ্যগত ভুল নেই। আপত্তি শুধু ‘রাজনৈতিক পযর্বেক্ষকদের’ অংশে যা তাঁর মতে, ‘উদ্ভট মস্তিষ্কের উর্বর কল্পনাপ্রসূত প্রতিবেদন’।
এই প্রসঙ্গে শুধু একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সোনারপুর টাউন তৃণমূল কংগ্রেসে সভাপতি বদলের ঘটনা। সেখানে বহু দিনের পুরনোকে সরিয়ে নতুনকে বসানোর পরে সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে নেমে এসেছিল। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের পুরনো সহকর্মী হিসাবে আগের ব্যক্তিকেই সভাপতি পদে ফেরাতে বলেন। অবশেষে কিছু দিন পরে মমতার নির্দেশটি কার্যকর হয়। এ সব খবরই সংবাদপত্রে প্রকাশিত।