সম্পাদক সমীপেষু: পদত্যাগের মূল কারণ

ওই সময়ের খবরের কাগজ ঘাঁটলেই দেখা যাবে, অশোকবাবুর আমলে রাজ্যের ওভারড্রাফটের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০১:১৬
Share:

প্রয়াত অশোক মিত্র সম্পর্কে দেবকীনন্দন মণ্ডল গত ১৩ মে তাঁর চিঠিতে অনেক তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে তাঁর তথ্য বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে অশোকবাবুর লড়াই দেশ জুড়ে বিতর্ক তুললেও, বাস্তবে কেন্দ্র থেকে ওই সময়ে বাড়তি টাকা আসেনি। বাড়েনি রাজ্যের নিজস্বও আয়ও। উল্টে শিক্ষকদের বেতনবৃদ্ধির জন্য ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে। ওই সময়ের খবরের কাগজ ঘাঁটলেই দেখা যাবে, অশোকবাবুর আমলে রাজ্যের ওভারড্রাফটের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অশোকবাবু যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তা যে পেরে উঠছিলেন না—এটা সাম্প্রতিক অনেক লেখাতেও উঠে এসেছে। দেবকীনন্দনবাবু চিঠিতে লিখেছেন, ওই সময়ে শিক্ষককুলের মাইনে ও প্রমোশনের বিষয়টি নিয়ে জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর মতের অমিল হয়েছিল। এর পরেই তিনি পদত্যাগ করেন। বাস্তবে কিন্তু শিক্ষককুলের মাইনে এর অনেক আগেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে মতের অমিল হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানেন, কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে অশোকবাবু যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাতে বলা হয়েছিল, বেশি ছাত্র রয়েছে এমন কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন বৃদ্ধি ছোট কলেজের অধ্যক্ষদের তুলনায় বেশি হবে। কিন্তু জ্যোতিবাবু এই বৈষম্যে রাজি ছিলেন না। অশোকবাবু এটিকে অর্থ দফতরের কাজে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেছিলেন। এর পরেই তিনি পদত্যাগ করেন।

Advertisement

রাজা বসুমজুমদার কলকাতা-১০৭

Advertisement

সবাই পাবেন?

‘ফেল করলেও মিশ্রপাঠে নষ্ট হবে না বছর’ (৮-৫) শীর্ষক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে হাজিরা আর অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন মিলিয়ে ২০ থাকছে কলেজের হাতে। যা প্রায় সকলেই পাবেন। এই মন্তব্য যথেষ্ট বিভ্রান্তিমূলক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে এই নম্বরের ব্যবস্থা রেখেছে। তাই নম্বর সকলেই পাবেন বলার অর্থ, প্রয়োজনীয় হাজিরা না থাকলে বা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে ভাল না করলেও কলেজ নম্বর দিয়ে দেবে। এই নিশ্চয়তা কোনও তরফ থেকেই দেওয়া হয়নি। কিন্তু ছাপার অক্ষরে তা দেখলে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসা বা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের পরীক্ষা যত্ন সহকারে দেওয়ায় উৎসাহ হারাবে।

রক্তিম সুর হেরম্বচন্দ্র কলেজ

প্রতিবেদকের উত্তর: হাজিরা ও অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন মিলিয়ে ২০ নম্বর থাকার ফলে তা সকলে পাবেন বলে মতামতটি শিক্ষা শিবিরের, আমাদের নয়। যেটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা রয়েছে। শিক্ষা শিবিরের মত, ধরেই নেওয়া হয় পড়ুয়ারা নিয়মিত ক্লাসে আসবেন এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাতেও তাঁরা ভাল ফল করবেন।

বঞ্চনা

নন্দদুলাল রায়চৌধুরীর ‘মহার্ঘভাতা’ শীর্ষক পত্রে (১২-৪) পরিবেশিত কয়েকটি ভুল তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই চিঠি। পত্রলেখক লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা ২ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে এ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার পরিমাণ বেড়ে হল ৪৫ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, জানুয়ারি মাস থেকে ১০ শতাংশের একটি কিস্তি দেবেন। তবুও পাওনা রইল ৩৫ শতাংশ।’’ জানাই, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ শতাংশের (১০ শতাংশ নয়) এক কিস্তি ডিএ দেওয়ায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বেড়ে হয়েছে ১০০ শতাংশ। ফলে তাঁদের বকেয়া মহার্ঘভাতার পরিমাণ দাঁড়ায় পুরনো স্কেলের ২৫ (১২৫-১০০) শতাংশ+নতুন স্কেলে ৭ শতাংশ, যা পুরনো স্কেলের কম-বেশি ১৮ শতাংশের (৭x Factor ২.৫৭) সমান। ফলে মোট বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪৩ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ নয়।

রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বঞ্চনার ইতিহাস সুপ্রাচীন। রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন যখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাচ্ছিলেন না, তৎকালীন বিরোধী নেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন, যে সরকার তার কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দিতে পারে না, তাদের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। ১৯৭৭ সালে সেই জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তাঁর সাড়ে তেইশ বছরের শাসনকালে রাজ্য সরকার কখনও কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয়নি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাড়ে দশ বছরের সময়কালেও এর অন্যথা হয়নি। পঞ্চম রাজ্য বেতন কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক, ২০০৬ থেকে নতুন বেতনহার কার্যকর হয়। ২০১১ সালে যখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, তখন দু’কিস্তি (১৬ শতাংশ) ডিএ বাকি ছিল। অর্থাৎ পঞ্চম বেতন কমিশন নির্ধারিত বেতনহার চালু হওয়ার পর প্রথম পাঁচ বছরে নির্ধারিত ১০টির পরিবর্তে ৮ কিস্তি ডিএ দিয়েছিল বাম সরকার।

আর তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে তো ডিএ বঞ্চনা একেবারে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। প্রতি বছর দু’টির পরিবর্তে নিয়ম করে জানুয়ারিতে একটি করে, ৭ বছরে নির্দিষ্ট ১৪ বারের পরিবর্তে ৭ বারে ৮ কিস্তি (শেষ তিন বছরে কিছু বেশি দেওয়ায় তা ৭ কিস্তির পরিবর্তে ৮ কিস্তির সমান) মহার্ঘভাতা প্রদান করেছে তৃণমূল সরকার (২০১৮-র জানুয়ারির ১৫ শতাংশ ডিএ নিয়ে)। অর্থাৎ রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ৭ বছরের তৃণমূল জমানায় ৬ কিস্তি ডিএ থেকে চিরতরে বঞ্চিত হলেন। অথচ বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরা শুধু কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দেবেন না, বকেয়া ডিএ-র সব প্রাপ্যও মিটিয়ে দেবেন।

প্রায় দু’বছর হল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্গঠনের জন্য ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বাধীন সেই কমিশনের কার্যকাল কয়েক মাস অন্তর বেড়েই চলেছে। তাই ডিএ না পেয়ে, পে কমিশন না পেয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা আর্থিক বঞ্চনার যূপকাষ্ঠে বলি হয়েই চলেছেন।

সজলকান্তি ঘোষ শ্রীনিকেতন, বারুইপুর

গাড়িতে বোর্ড

সরকারি বড় চাকুরে বা জনপ্রতিনিধিদের গাড়িতে যথেচ্ছ লালবাতি ও নীলবাতি মহামান্য আদালতের নির্দেশের পর অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হলেও, এখন দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সামনে-পিছনে ‘অ্যাডভোকেট’, ‘কেএমসি’, ‘এমএলএ’, ‘আর্মি’, ‘জজ’, ‘কেপি’ বা ‘পুলিশ’ প্রভৃতি লেখার চল খুব বেড়ে গিয়েছে। এঁদেরই বাড়ির কেউ হয়তো বিকেলে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে, উইন্ডস্ক্রিনে লাগিয়ে নিয়েছেন বোর্ডখানা। এতে অনেক সময় অল্পবিস্তর ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমি যে অন্যদের মতো এলেবেলে নই, সেটা প্রমাণে আত্মপ্রসাদ লাভ করা যায়।

আনন্দ বক্সী কলকাতা-৮৪

উমা ভারতী

উমা ভারতী সৎ। তিনি অন্তত মেলোড্রামা করতে চাননি। আসলে বিজেপি নেতাদের দলিত একাত্ম বোধ তৈরি করার কর্মসূচিটি একটা প্রহসন। ভোট রাজনীতির কথা মাথায় রেখে যে এই কর্মসূচি তা স্পষ্ট। দলিত বাড়িতে রাত কাটালেও, নেতাদের জন্য বাইরে থেকে রান্না, খাওয়ার প্লেট, সোফা আনা প্রভৃতি ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এগুলি হল, দলিতের ঘরে ঢুকে দলিতকে নিচু জাত বলার সামিল। নেতাদের ব্যবহারের ভাব অনেকটা ‘‘জলে নামব কিন্তু চুল ভেজাব না।’’ তাই উমা ভারতীর নিজের সীমাবদ্ধতায় থেকে দলিতদের ডেকে ভিখারি ভোজন করানোর প্রস্তাবটি বেশি শ্রেয়। তাতে অন্তত প্রহসন থাকে না।

বিজন মুখোপাধ্যায় ই-মেল মারফত

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন