Pollution in Rural Areas

সম্পাদক সমীপেষু: গ্রামের দূষণ

গ্রামের বদলে যাওয়া জীবনযাপনের ধরন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়মের তোয়াক্কা না করে চালু থাকা ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা, গণপরিবহণ ব্যবস্থা, নির্বিচারে বৃক্ষছেদন ইত্যাদির সৌজন্যে গ্রামবাংলার পরিবেশ আর আগের মতো নির্মল নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৬
Share:

শহরের থেকে গ্রামে বায়ুদূষণ অনেক কম, এমন একটি প্রচলিত ধারণা সাধারণ জনমনে গেঁথে আছে। জয়ন্ত বসুর ‘দূষণে গ্রাম-শহর ভেদ নেই’ (১৯-১) শীর্ষক প্রবন্ধটি সাধারণের সেই অস্বচ্ছ ধারণার পর্দা সরিয়ে তথ্যভিত্তিক প্রকৃত সত্য সামনে নিয়ে এল। গ্রামের বদলে যাওয়া জীবনযাপনের ধরন, দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়মের তোয়াক্কা না করে চালু থাকা ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা, গণপরিবহণ ব্যবস্থা, নির্বিচারে বৃক্ষছেদন ইত্যাদির সৌজন্যে গ্রামবাংলার পরিবেশ আর আগের মতো নির্মল নেই। সেখানকার বাতাস এখন দূষণ-বাহক অস্বাস্থ্যকর কণাদের উপস্থিতি সমৃদ্ধ।

Advertisement

পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক ও দূষণ সৃষ্টিকারী স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, পাথরকুচি তৈরির ক্রাশার, ডিজ়েল চালিত অগুনতি (অবৈধ) অটো-ট্রেকার-ইঞ্জিন ভ্যান, অন্য দিকে পুরসভার জঞ্জালের ভ্যাট, মেডিক্যাল বর্জ্য, ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলে উৎপন্ন ধুলো-ঝড় গ্রামবাংলার বাতাসকে প্রতিনিয়ত বিষিয়ে চলেছে। উপরন্তু রাস্তা তৈরি বা সম্প্রসারণ, প্রশাসনিক কার্যালয় তৈরি, ব্যক্তিগত নির্মাণ, খাল-বিল-পুকুর সংস্কার, ম্যানগ্রোভ অরণ্যে মেছো ভেড়ি তৈরি— এ সবের উদ্দেশ্যে গাছপালা কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগ-সহ কম্পিউটার, মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে যে কোনও স্থানের তাৎক্ষণিক তাপমাত্রা, বাতাসের দূষণ মাত্রার পরিমাপের পরিসংখ্যান এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সেখান থেকেও জেনে নিতে অসুবিধা হয় না যে, বায়ুদূষণে সত্যিই গ্রাম-শহর ভেদ নেই।

দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি অর্থ বরাদ্দ, নির্দিষ্ট প্রশাসন কর্তৃক সেই অর্থপ্রাপ্তি এবং প্রাপ্ত অর্থের যথাযথ ব্যবহার সংক্রান্ত শংসাপত্র জমা দিলেই কাগজে-কলমে প্রকল্পের সার্থকতার কাগুজে প্রমাণ প্রতিষ্ঠা পায় বটে, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় না। পরিবেশ দিবস উদ্‌যাপন, বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে পরিবেশ সম্পর্কিত সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব, পরিবেশবিদদের মতামত গ্রহণ, পরিবেশ রক্ষায় সর্বজনীন অঙ্গীকার গ্রহণ— সবই নিয়মমাফিক হয় বটে, কিন্তু তাতে দূষণ কমে না।

Advertisement

অরিন্দম দাস হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শীতঘুম

গ্রামবাংলার দূষণ নিয়ে জয়ন্ত বসুর লেখাটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই প্রাসঙ্গিক। পরিবেশ যদি খারাপ হয় আমাদের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। কাজেই পরিবেশকে ভাল রাখতে গেলে চার পাশের দিকে সঠিক ভাবে নজর দিতে হবে, যে কাজটা প্রায়ই আমরা করি না। জল, আলো, বাতাস, মাটি— সবই পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে বাতাস দূষিত হলে আমাদের পক্ষে ভাল ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অথচ, গ্রাম হোক, কিংবা শহর— মানুষের বেহিসাবি কাজের জন্য আজ সকলকেই ভুগতে হচ্ছে। বরং বায়ুদূষণের মাত্রা এখন শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। গ্রামে প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এবং শাসক দলের বদান্যতায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এমন সব কাজ হচ্ছে, যা পরিবেশকে ভীষণ ভাবে দূষিত করছে। চালকল থেকে বেআইনি ইটভাটা— সব কিছুই এর মধ্যে পড়ে।

সবচেয়ে বড় কথা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতব্যবস্থায় পরিবেশ বিষয়ক আধিকারিক থাকলেও, তা নেহাতই নিয়মমাফিক। এ ছাড়াও বলা হয়েছিল প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে পরিবেশ বিষয়ক এক জন করে শিক্ষক নেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার জন্য। সেই কাজ হয়েছে কী? দূষণ নিয়ে যাঁদের সবচেয়ে বেশি সরব হওয়ার কথা ছিল, সেই রাজনৈতিক দলগুলো যেন শীতঘুমে চলে গিয়েছে। কাজেই পরিবেশের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অবহেলা করার দরুন তার বিষময় ফল আমাদের ভুগতে হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে কবে সচেতন হবে, বা কবে তাদের ঘুম ভাঙবে?

অভিজিৎ দত্তজিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

কেন্দ্রে বই

‘মেলা ও ঝামেলা’ (১৫-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ যদি গুরুত্ব সহকারে সে বিষয়গুলিতে দৃষ্টিপাত করেন, তবে অবশ্যই বই বিক্রেতা ও ক্রেতারা উপকৃত হবেন। তবে আরও কিছু বিষয় আছে। প্রথমত বলি, খাবারের দোকান অবশ্যই মেলাকে কেন্দ্র করে থাকবে। তবে তার কোনওটি যেন মেলাপ্রাঙ্গণের মাঝখানে না হয়, সেটা দেখা প্রয়োজন। বইমেলাতে খাওয়ার জন্য চিহ্নিত জায়গায় ভিড় হোক, অসুবিধা নেই। কিন্তু বইয়ের স্টলগুলোতে কিছু মানুষ, আর তাঁদের মাঝে ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা খাবারের জায়গায় উপচে পড়া ভিড় সত্যিই দৃষ্টিকটু। দ্বিতীয়ত, যে সব সংবাদ সংস্থার বই প্রকাশনা বিভাগ রয়েছে, তারা ছাড়া অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের স্টলের আধিক্য দেখা যাচ্ছে, যে স্টলগুলোতে এক জন ‘সেলেব্রিটি’ গায়ক-গায়িকা বা খেলোয়াড়কে আনা হয়। এ ভাবে যুব সম্প্রদায়কে বই কেনা থেকে বিরত করে সে দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা হয়, যা বইমেলা প্রাঙ্গণে বড়ই বেমানান লাগে। এটা তো বইমেলা। অবশ্যই ব্যবসায়িক দিকটা থাকবে। তবে সেটা বোধ হয় বইকেন্দ্রিক হওয়া দরকার। বই প্রাধান্য না পেলে হুজুগে মানুষের জমায়েতের ফলে শীতের বিকেলে অন্যান্য মেলার মতো একটু খাওয়া, একটু আড্ডার জায়গা হয়ে উঠবে কলকাতা বইমেলা।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

উনুনের ধোঁয়া

সম্পাদকীয় ‘অপরাধ’ (৬-২)-এ যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে, তা খুবই প্রাসঙ্গিক। পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যবস্থা করা নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু কয়লা-কাঠের উনুন জ্বালালে সেই তথ্য লালবাজারে পাঠানো হবে— এই প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন মাথায় আসছে।

প্রথমত, এই নিয়ম কি শুধুমাত্র কলকাতায় প্রযোজ্য? যদি তা-ই হয়, তবে শহরতলি কিংবা গ্রামে কি পরিবেশ দূষণ হয় না? সব আলোচনার আগে আমাদের জানা উচিত, এখনও কেন কয়লা-কাঠের উনুন জ্বালাতে হচ্ছে? এটা কি নিছকই ইচ্ছাকৃত স্বভাবে, না সত্যিকারের অভাবে? চিত্রটা খুবই স্পষ্ট। ব্যক্তিগত মত, যাঁরা এই নিয়ম জারি করেছেন, তাঁরা সবাই এক-এক জন ধৃতরাষ্ট্র কিংবা গান্ধারী সেজে আছেন। শুধু নিয়মের কচকচানি নয়, বাস্তবের দিকে চোখ দিলে দেখা যাবে, যাঁরা এই উনুন জ্বালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের আর্থিক সচ্ছলতা একেবারেই নেই। এক কথায় তাঁরা নিরুপায়। কেরোসিন তেলের লিটার একশো টাকার উপরে। সরকারি ভর্তুকি তুলে দেওয়া হয়েছে। আর রান্নার গ্যাসের দাম হাজার টাকা ছুঁই ছুঁই। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ১৮ টাকা। উজ্জ্বলা যোজনায় ভর্তুকি তিনশো টাকা। দারিদ্রসীমার মধ্যে ও নীচে যাঁরা আছেন, তাঁদের পক্ষে কি এই গ্যাস সিলিন্ডার কিংবা ভর্তুকিহীন কেরোসিন ক্রয় করা সম্ভব? ভর্তুকি ঘোষণার পরও রান্নার গ্যাস দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে। নয়তো এই অস্বাস্থ্যকর ধোঁয়া কে আর ইচ্ছাকৃত ভাবে গ্রহণ করতে চায়?

শুধু নিয়ম জারি করে আস্ফালন দেখানো নয়, কিংবা ভোটের তাগিদে বছরের পর বছর উজ্জ্বলা যোজনায় নতুন কত সংযোগ হল, তার হিসাব দাখিল নয়, সরকারি নীতি সংশোধন করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ট্র্যাফিক পুলিশের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে এই কাজ চোর-পুলিশ খেলায় পর্যবসিত হবে।

তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন