সম্পাদক সমীপেষু: লঘু পাপে গুরু দণ্ড

দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড থেকে শুরু করে কামদুনির ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যেখানে অপরাধীদের ফাঁসির সাজা হ‌ওয়া প্রয়োজন, সেখানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির ক‌ই?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা নিঃসন্দেহে সংবিধানবিরোধী কাজ। কিন্তু স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল থেকে শুরু করে সমাজের নানা ক্ষেত্রে সলমন খানের অফুরন্ত সাহায্যের হাত সব সময় উদার। তাঁর এই সামাজিক কাজকর্ম ও দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে আদালত কি শাস্তির মেয়াদ কিছুটা কমাতে পারত না? যেখানে দেশে ধর্ষণ‌ ও পৈশাচিক ভাবে মানুষকে খুনের দায়ে হাজার হাজার কেস ফাইল আটকে রয়েছে! দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড থেকে শুরু করে কামদুনির ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যেখানে অপরাধীদের ফাঁসির সাজা হ‌ওয়া প্রয়োজন, সেখানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির ক‌ই? তুল্যমূল্য বিচার করে সলমনের দোষ ঢাকা এ চিঠির উদ্দেশ্য নয়। তবে বিচার হওয়া উচিত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু। সলমনের খুব বড় সাজা হলে এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। শাস্তি পুরোপুরি মকুব করতে কোনও সচেতন নাগরিক‌ই বলবেন না। কিন্তু দণ্ড কিছুটা শিথিল করা যেত।

Advertisement

মোঃ আবু তাহের ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ

দায় বর্তাবেই

Advertisement

ঋতম্ মুখোপাধ্যায় ও দেবোত্তম চক্রবর্তীর (২৭-৩) চিঠি দুটিতেই ইংরেজি তুলে দেওয়ার প্রথম প্রস্তাবক হিসাবে কংগ্রেস সরকার ও তাদের নিয়োজিত শিক্ষা কমিশনগুলোর কথা বলা হয়েছে। তথ্যগুলো অবশ্যই ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট তো ক্ষমতায় এসেছিল পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের ভ্রান্ত এবং ক্ষতিকর নীতিগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সেগুলো পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে। তা হলে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এবং তাদের নিয়োজিত কমিশনগুলোর সুপারিশ তারা এসেই কার্যকর করা শুরু করল কেন? ১৯৭৮ সালে, যখন বামফ্রন্ট ইংরেজি তোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, তখন ইন্দিরা সরকারকে পরাজিত করে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে জনতা সরকার, যারা কিনা সিপিএম-এর ‘বন্ধু সরকার’। কাজেই পূর্বতন কেন্দ্রীয় বা রাজ্য শিক্ষা কমিশন কারওই সুপারিশ মানার বাধ্যবাধকতা বামফ্রন্ট সরকারের ছিল না। তাই ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজি তোলার দায় পুরোপুরি বামফ্রন্ট সরকার এবং তার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ওপরই বর্তায়।

এ ছাড়া ইংরেজি তোলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা যে দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তার নেতৃত্বে ছিলেন ভাষাচার্য ড. সুকুমার সেন, ইতিহাসবিদ ড. নীহাররঞ্জন রায়, প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত, প্রমথনাথ বিশী, মানিক মুখোপাধ্যায়, ড. সুশীল কুমার মুখোপাধ্যায়, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ। এঁরা বহু মিছিল, সভা-সমিতি, ডেপুটেশন, গণস্বাক্ষর প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারকে সিদ্ধান্ত রদ করতে বলেছিলেন। দীর্ঘ কুড়ি বছরে বামফ্রন্ট সরকারের কোনও মন্ত্রীই এঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসা দূরে থাক, এক বারও দেখা পর্যন্ত করেননি, উল্টে ‘বুড়ো বয়সে এদের ভীমরতি হয়েছে’ কটূক্তি করেছেন। যে সমস্ত স্কুলে সরকারি নির্দেশ না মেনে ইংরেজি পড়ানো চালু রাখা হয়েছিল, সেখানকার শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে ইংরেজি পড়ানো বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আজ আম থলে সব হারিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইলেও ইতিহাস ক্ষমা করবে কেন?

পার্থ ভট্টাচার্য ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

অবৈজ্ঞানিক

শিশুর পাঠ্যতালিকায় একটি বিদেশি ভাষার ভার সংযোজিত করাটা কতটা মনস্তত্ত্ব-আশ্রয়ী এবং বিজ্ঞানসম্মত, তা আলোচনা করা দরকার। প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া কোনও রাজনৈতিক গিমিক ছিল না। একাধিক কমিটি-কমিশন দীর্ঘ দিন ক্ষেত্রসমীক্ষা করে, শিশু-মনস্তত্ত্ব অনুসন্ধানের পর, শিশুর বিদ্যানুশীলনকে ভয়মুক্ত এবং ভারমুক্ত করার অভিপ্রায়ে এই পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু প্রাথমিক পাঠ্যতালিকায় ইংরেজি ভাষাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার পিছনে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল; ছিল না কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটির বা মনোবিজ্ঞানীর সুচিন্তিত মতামত। মুদালিয়ার কমিশন (১৯৫২-৫৩) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিল ''English should be a compulsory school subject of the secondary school beginning from the middle school stage." এই 'middle school stage' কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। ইংরেজি ভাষা শিক্ষা জরুরি, কিন্তু তা শুরু হোক প্রাথমিকের পর থেকে। প্রাথমিক স্তরে পাঠরত শিক্ষার্থীর বয়স ৪ থেকে ৮ বছর। এই বয়সে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষার জন্য তাদের মন কতটা উপযোগী, তা নিয়ে স্বদেশে এবং বিদেশে বিস্তর গবেষণা হয়েছে।

বিশিষ্ট গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষার সঙ্গে অন্য একটি ভাষার শিক্ষা শিশুর শিক্ষাকে নিম্নগামী করে দেয়। শিশুর স্মৃতিশক্তি এবং উপলব্ধির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। শব্দভান্ডারের উপর তার দখল বাড়ে না। শুধু তা-ই নয়, যে সমস্ত শিশু প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা শেখে, তাদের অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার ক্ষমতা এবং দক্ষতা হ্রাস পায়।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলি প্রাথমিক স্তরে একমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়। ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি দেশে প্রাথমিক স্তরে প্রথম ভাষা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমাদের দেশ-সহ তৃতীয় দুনিয়ার গুটিকয়েক দেশে প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা এবং ইংরেজির মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে এক উদ্ভট পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই মানসিকতা অবৈজ্ঞানিক ও যুক্তিহীন।

কমল কুমার দাশ কলকাতা-৭৮

প্রশ্নে বিভ্রান্তি

এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাসের ‘ক’ বিভাগের ১.১০ নম্বর প্রশ্নে, ভারতসভার প্রথম সভাপতি কে ছিলেন— বলে চার জনের নাম দেওয়া হয়েছে: (ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (খ) আনন্দমোহন বসু (গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (ঘ) শিবনাথ শাস্ত্রী। ঠিক উত্তর নির্বাচন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষকদের কাছে পাঠানো নমুনা-উত্তরপত্রে, কৃষ্ণমোহনের নাম ঠিক বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তি এখানেই। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত বইগুলিতে ভারতসভার প্রাণপুরুষ, প্রধান উদ্যোক্তা হিসাবে সুরেন্দ্রনাথ ও আনন্দমোহন বসুর নাম থাকলেও, কোথাও প্রথম সভাপতির নাম উল্লেখ করা নেই। বাজারচলতি সহায়িকা গ্রন্থেও এমন কোনও তথ্য নেই। কলেজ ও উচ্চশিক্ষার কোনও কোনও গ্রন্থে, বা নেট সার্চ করলে দুটি নাম উঠে আসছে। শ্যামাচরণ সরকার ও রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগেশচন্দ্র বাগলের লেখা ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ১৮৭৬-১৯৫১’ অনুযায়ী, ১৮৭৮-এর জানুয়ারি মাসে রেভাঃ কৃষ্ণমোহন ভারতসভার সভাপতি হন। আর ভারতসভা স্থাপিত হয় ১৮৭৬-এর ২৬ জুলাই অ্যালবার্ট হল-এ (বর্তমান কফি হাউস)। ১৮৭৬-৭৭ সালে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রথম কমিটির যে তালিকা প্রকাশিত হয় সেখানে রেভাঃ কৃষ্ণমোহনের নামই ছিল না! তাঁর সভাপতিত্বের সময়কাল ১৮৭৮-১৮৮৫।

প্রলয় চক্রবর্তী কলকাতা-১২৪

সংক্রামক হলে?

প্রায় সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্সে লেখা থাকে: ‘সংক্রামক রোগীর জন্য নহে’। কোনও মুমূর্ষু রোগী, যাঁর সংক্রামক রোগ হয়েছে, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে তবে উপায় কী?

অমিতাভ চক্রবর্তী সুভাষপল্লি, পশ্চিম মেদিনীপুর

ভ্রম সংশোধন

একটি সংস্করণে ‘কী হবে আজ’ শীর্ষক খবরে (৯-৪) কয়েক জায়গায় রবিবার লেখা হয়েছে। দিনটি হবে সোমবার। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন