সম্পাদক সমীপেষু : ১৯, ২০ এবং ২১

‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...’’। ভোলেনি কোন্নগর, ভোলেনি বাবলা গ্রাম। ভাষা আন্দোলনের এক জন শহিদ শফিউর রহমান আদতে ছিলেন কোন্নগরের সন্তান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...’’। ভোলেনি কোন্নগর, ভোলেনি বাবলা গ্রাম। ভাষা আন্দোলনের এক জন শহিদ শফিউর রহমান আদতে ছিলেন কোন্নগরের সন্তান। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পিতা মাহবুবুর রহমান ঢাকায় গিয়ে হেমেন্দ্র রোডে বসবাস করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি শোকমিছিলে নবাবপুর রোডে রথখোলার খোশমহল রেস্তরাঁর কাছে, পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ শফিউরকে গুলি করে। মুর্শিদাবাদের সালারের কাছে বাবলা গ্রামের সন্তান ছিলেন আবুল বরকত। দেশভাগের পর চলে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বছর (১৯৫২) রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পরীক্ষার্থী।

Advertisement

একুশে ফেব্রুয়ারির অন্যতম এই শহিদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে গুলি করা হয়। শহিদদের রক্ত ব্যর্থ হয়নি। তার পর পদ্মার জল অনেক গড়িয়েছে।

১৯৭১ পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাঙালির আপনদেশ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর, আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলা ভাষা পাকাপাকি ভাবে সম্মান পেল, যখন ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

Advertisement

তবে মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে আরও ৬টি ভাষার জন্য আলাদা আলাদা আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস আছে— ১) ২০ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক ফরাসি ভাষা দিবস’ ২) ২০ এপ্রিল ‘আন্তর্জাতিক চিনা ভাষা দিবস’ চিনা বর্ণমালার প্রতিষ্ঠাতা সঙ্ জি হৈ কে স্মরণ করে। ৩) ২৩ এপ্রিল ‘আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা দিবস’ শেক্সপিয়রের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে। ৪) ৬ জুন ‘আন্তর্জাতিক রুশ ভাষা দিবস’ আলেকজ়ান্ডার পুশকিনের জন্মবার্ষিকী স্মরণে। ৫) ২১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক স্প্যানিশ ভাষা দিবস’। ৬) ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’। ২১ ফেব্রুয়ারি

বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলেও বাঙালিরা পৃথিবীর সব মাতৃভাষাকেই সম্মান জানায়।

পিছনে তাকালে দেখা যায়, অনেক আগে ১৯১৮ সালে বিশ্বভারতীতে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অবিভক্ত ভারতে সর্বসাধারণের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। সমস্যাকে কেন্দ্র করেই তা এক দিন আন্দোলনে রূপ পেল। বাংলা ভাষা আন্দোলন একটি নয়, দু’টি নয়, কমপক্ষে তিনটি। একুশে ও উনিশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে আরও চর্চা হোক। তবে বিশের সাফল্য যেন চাপা পড়ে না যায়।

১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তৎকালীন মানভূম জেলার সদর মহকুমা পুরুলিয়ায় শতকরা ৮৭ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বাস ছিল। তৎকালীন বিহার নিয়ন্ত্রিত মানভূম-পুরুলিয়ায় বাংলা ভাষাভাষীদের আকস্মিক ভাবে তীব্র সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কারণ ১৯৪৮ সালে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানভূম জেলার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা হরফে সাইনবোর্ড দেওয়া যাবে না। এমনকি, বাংলা ভাষাভাষীদের স্কুলে বাংলা ভাষায় প্রার্থনাসঙ্গীতও চলবে না, তার পরিবর্তে ‘রামধুন’ আবশ্যিক। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনে বাংলা ভাষা চলবে না।

শুরু হল মুক্তির লড়াই। ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল অতুলচন্দ্র ঘোষ, নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত, লাবণ্যপ্রভা ঘোষ প্রমুখের নেতৃত্বে পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা থেকে প্রায় ১০ জন মহিলা-সহ ১০০৫ জন পদযাত্রায় অংশ নিলেন। কলকাতা এসে তাঁরা আইন অমান্য করেন এবং ৭ মে কারাবরণ করেন। ১৩ দিন পর, ২০ মে তাঁরা মুক্তি পান। বাংলাভাষীদের লড়াইয়ের পরে পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের অংশ হল। টুসু নামক লোকায়ত গানে এর প্রচার হয়। সত্যাগ্রহই ছিল এর মূল আদর্শ। তাই ২০ মে আর একটা ভাষা আন্দোলন দিবস পালন হোক। মিলে যাক ১৯, ২০, ২১।

রমজান আলি

বর্ধমান

বাংলা তারিখ

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় সাহেবদের ঠিক করা দিনে। যদিও রক্ত আমাদেরই ঝরেছিল। আমরা ওই দিনটাকে বাংলায় ৮ ফাল্গুন বলি না কেন? যে বছর ২১শে বাংলায় যে তারিখে পড়বে, সে তারিখই বলব। বা ৮ ফাল্গুনই বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস পালন করব।

বিলীন পাল

চন্দননগর, হুগলি

খাতা দেখার ফি

২০১১-র ৯ অগস্ট, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে, পরীক্ষার্থীকে দেওয়া হল পরীক্ষার মান নির্ণয়ের পরে পরীক্ষার খাতার প্রতিলিপি দেখতে পাওয়ার অধিকার। ‘তথ্যের অধিকার আইন’ অনুসারে, সমস্ত পরীক্ষার, এমনকি চাকরির পরীক্ষার খাতাও পরীক্ষার্থী দেখতে পাবেন। সারা দেশের মধ্যে আমাদের রাজ্যেই ‘রাজ্য তথ্য কমিশন’ ২০০৭ সালে প্রথম এই অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। যা তার পর ২০০৮-এ কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের ২০১১-য় দেওয়া মান্যতার মাধ্যমে সারা দেশে চালু হয়।

কিন্তু এর প্রতিরোধের চেষ্টাও চলতে থাকে। এই রায়কে কার্যকর করা থেকে আটকানোর জন্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দরজায় যারা গিয়েছিল, সেই পরীক্ষা নেওয়ার নিয়ামক সংস্থাগুলো এ বার অন্য রাস্তা নিল। জানিয়ে দিল, তারা পরীক্ষার খাতা দেখাবে বটে, কিন্তু সে জন্য পেপার পিছু আলাদা আলাদা ফি দিতে হবে, আর আমাদের রাজ্যে সংস্থাভেদে এই ফি-র পরিমাণ নির্দিষ্ট হল ১০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা অবধি, যেখানে কিনা ‘তথ্যের অধিকার অাইন’ অনুয়ায়ী এই ফি নির্দিষ্ট আছে প্রতি পাতা ২ টাকা মাত্র, অর্থাৎ খাতা ৫ পাতার হলে ১০ টাকা, খাতা ৭ পাতার হলে ১৪ টাকা। নিয়ম ভেঙে ফি এত বেশি নেওয়ার কারণ কী? নিশ্চয়ই, যাতে বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই দারিদ্রের কারণে এই সুযোগ না নিতে পারে।

এর প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদের ঢেউ বিভিন্ন রাজ্য কমিশনের সঙ্গে দিল্লি ও রাজস্থান হাইকোর্টের দরজায়ও পৌঁছয়। সর্বত্রই আদালতের আদেশে এই অপচেষ্টা বন্ধ হয়।

কিন্তু যে রাজ্য এই স্বচ্ছতার পথ দেখিয়েছিল, সেই পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা এখনও সেই তিমিরেই। বাড়তি ফি নেওয়ার যে রীতি চালু হয়েছিল, তা আজও চলছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখতে দিতে হয় খাতা পিছু ১০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০ টাকা।

এর বিরুদ্ধেও লড়াই চলছে। পাঁচ বছর ধরে মাধ্যমিক বোর্ড থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বোপরি শিক্ষামন্ত্রী, সবার কাছেই বিভিন্ন আদালতের সমস্ত রায়ের প্রতিলিপি দিয়ে বার বার আবেদন জানানো হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। এ বছরেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষা উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে, পর পর উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা হবে, ফল বেরোবে। কে জানে, গরিব ছাত্রেরা এ বারেও তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না!

অমিতাভ চৌধুরী

সভাপতি, ইনফর্মেশন অ্যান্ড অ্যাকশন ফর পিপলস রাইট

ফোনের গুঁতো

ইদানীং মোবাইল ফোন জিনিসটা ক্ষতিকর ও উল্টো ক্ষেত্রে অহরহ ব্যবহৃত হয়ে চলেছে।

গৃহস্থালির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অপ্রয়োজনীয় অবান্তর কথাবার্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলতে থাকে। অফিসেও অহরহ ফোনের আনাগোনা। সব ক্ষেত্রেই কাজের ক্ষতি ও সময়ের অপব্যবহার।

গোপনীয়তা ও মিথ্যাচারের এক নম্বর মাধ্যম ফোন। আরও অনেক খারাপ কাজ ও জালিয়াতির মাধ্যম হিসেবেও ফোন ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। শৈশব নষ্ট হচ্ছে। স্কুল কলেজের সুস্থ পাঠাভ্যাস চুলোয় যাচ্ছে। সুশিক্ষা-দীক্ষায় ছাই পড়েছে। ফোন কানে রেললাইন পার হতে গিয়ে অনেক বিপদ এমনকি প্রাণহানিও ঘটছে।

এই সমস্ত দুষ্টুমি, নষ্টামি ও বিপত্তির হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায়। ফোনের কল-রেট বৃদ্ধি করা হোক। প্রতি মিনিটে কল-রেট পাঁচ টাকা থেকে আট টাকা করা হলে, এত ফোন করবে না লোকে।

চন্দ্রনাথ ভড়

আঁটপুর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন