Unemployment

সম্পাদক সমীপেষু: হিংসা ও বেকারত্ব

পঞ্চায়েত ভোটে এক দিনে মৃত্যু হয় ৪০ জনের। এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? এই ভোট-হিংসার অন্যতম কারণ, রাজ্যের এই বেকারত্ব ও কর্মহীনতা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:১৭
Share:

Sourced by the ABP

বর্তমানে রাজ্যের কর্মসংস্থানের ছবিটি তুলে ধরা হয়েছে ‘বিষাদযোগ’ (২১-১০) সম্পাদকীয় প্রবন্ধে। রাজ্যে নতুন কোনও শিল্প, কলকারখানার দেখা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং (আইটিআই, পলিটেকনিক, বি টেক ইত্যাদি) পাশ করে কম বেতনে অন্য রাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রাজ্যের প্রার্থীরা। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রায় বন্ধ। পিএইচ ডি, এমএ ডিগ্রিধারীরা ডোমের চাকরির জন্য আবেদন করছেন। সামান্য যে ক’টি নিয়োগ হচ্ছে, প্রায় প্রত্যেকটি নিয়োগে রয়েছে বিপুল দুর্নীতি, অনিয়ম, মামলা-মকদ্দমা। একটি নিয়োগ তিন-চার বছরের আগে সম্পূর্ণ হয় না। যেমন, উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ ন’বছরেও সম্পূর্ণ হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগে একশো দিনের কাজও বন্ধ। শ্রমিকরা কষ্টার্জিত প্রাপ্য পাচ্ছেন না। বস্ত্রশিল্প-সহ সব শিল্পের করুণ দশা।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটে এক দিনে মৃত্যু হয় ৪০ জনের। এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? এই ভোট-হিংসার অন্যতম কারণ, রাজ্যের এই বেকারত্ব ও কর্মহীনতা। পূর্ব ভারতে আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা সামগ্রিক উন্নয়নে এগিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এ রাজ্যের শাসক দলের দূরদর্শী পরিকল্পনা, গঠনমূলক সুস্থায়ী উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনও রূপরেখা আছে কি? শুধুমাত্র পাইয়ে-দেওয়ার রাজনীতি, মেলা, মোচ্ছবের মন-ভোলানো রাজনীতি দিয়েই কি রাজ্য চলবে? কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য সব কিছুই জড়িত।

অনিমেষ দেবনাথ, বেতপুকুর, পূর্ব বর্ধমান

Advertisement

সময়ের চেতনা

অগ্নি রায়ের ‘অফুরন্ত রৌদ্রের তিমির’ (রবিবাসরীয়, ২৯-১০) প্রবন্ধটি পড়ে এই চিঠি। জীবনানন্দীয় সময়চেতনার প্রসঙ্গে শঙ্খ ঘোষের লেখা উদ্ধৃত করেছেন প্রবন্ধকার। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়। কবি সময় সম্বন্ধে নতুন জ্ঞান অর্জনের যে কথা বলেছেন, সে জ্ঞানের দ্বারে পৌঁছনোর উপায় কী? জীবনানন্দের ‘মাংসের ঘ্রাণে’ গল্পটিতে পড়ি, “অমূল্য জানে, সময় সব মুছে ফেলতে পারে। হয়ত একটা নতুন জীবনই তাকে এনে দেবে, এই সময়”— এই সময়চেতনায় পরিপুষ্ট হতে গেলে চিন্তা ও মননকে কোন পথে পরিচালিত করতে হবে?

ইতিহাসের প্রথাগত পাঠ, বিশ্লেষণ ও বিচারে যে বোধ গড়ে ওঠে, জীবনানন্দ তো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, ইতিহাস ‘অর্ধসত্যে কামাচ্ছন্ন কালের কিনারায়’। কাজেই এ পথে হেঁটে সময়-সম্বন্ধীয় জ্ঞানপ্রকল্পটি রচনা করা যাবে না। আর যে ব্রহ্মজ্ঞানে আমরা তাবড় মনীষীদের আস্থা রাখতে দেখি, সে ধোঁয়াটে কল্পনার জগতেও তো তিনি অনুপস্থিত। তাঁর কথায়, “এখন ব্রহ্ম না থাকার মতো, আত্মা খুব সম্ভব নেই...।”

আর ভগবান? অমূল্যর ভাবনায় ‘ভগবান সময়ের চেয়েও প্রাণহীন’ হয়ে উঠেছিল। জীবনানন্দীয় ধ্যান হল, সময়কে বোঝার জন্য নতুন ধরনের কোনও ভাবনা গড়ে তোলা জরুরি, যেখানে সময়চেতনা হয়ে উঠবে ‘সঙ্গতি-সাধক অপরিহার্য সত্যের মতো’। কবি তাঁর বিভিন্ন রচনায় ‘সময়ের ঢেউ’, ‘সময়কণিকা’, ‘সময়পুরুষ’, ‘সময়ের সুতো’ প্রভৃতি শব্দবন্ধের উল্লেখ করেছেন।

‘আলোর উৎস হতে অন্ধকারকে’ দেখার ভঙ্গিটি জীবনানন্দে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, এ কথাও মানতে হবে। বাংলা সাহিত্যে নির্জ্ঞান মনের অকথ্য ভাষাকে উজাড় করে দেওয়ার এমন অসাধারণ ক্ষমতা আর কে দেখাতে পেরেছেন? ‘গভীর পবিত্র অন্ধকার’ কেমন করে রচিত হয়, সে সংরাগটিকেও আমরা খুঁজে নিই জীবনানন্দের কবিতায়।

শিবাশিস দত্ত কলকাতা-৮৪

বানান বদল

‘অফুরন্ত রৌদ্রের তিমিরে’ শীর্ষক প্রবন্ধে অগ্নি রায় লিখেছেন, “এই পরি-পাওয়া মানুষটির এক উত্তরপুরুষ, গাউপারা গ্রামের মুনশি বাড়ির দাশগুপ্ত পরিবারের সর্বানন্দ দাশগুপ্ত…।” এ দিকে গোপালচন্দ্র রায়ের জীবনানন্দ গ্রন্থে রয়েছে এক অন্য তথ্য। গোপালচন্দ্র লিখছেন, “এঁদের আসল পদবী ছিল— দাসগুপ্ত। তা থেকে এঁরা হয়েছিলেন— দাস। আর দাস বলতে দাশ নয়, দাস-ই।”

জীবনানন্দের বাবা তাঁর বিভিন্ন রচনায় নিজের নাম লিখতেন সত্যানন্দ দাস। জীবনানন্দও কলেজ-জীবন অবধি দাসই লিখতেন। পরে চিত্তরঞ্জন দাশের কথায় ‘দাস’ ছেড়ে ‘দাশ’-এ আসেন। তবে জীবনানন্দ পত্র-পত্রিকায় প্রথম দিকে ‘দাশগুপ্ত’ই লিখতেন। পরে গ্রন্থপ্রকাশের সময় থেকে ‘দাশ’-এ পাকাপাকি চলে আসেন। প্রসঙ্গত, চিত্তরঞ্জন দাশের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন জীবনানন্দ। চিত্তরঞ্জন যখন বৈদ্যজাতির লোকদের ‘দাস’-এর পরিবর্তে ‘দাশ’ বা ‘দাশগুপ্ত’ ব্যবহার করতে বলেছিলেন, তখন জীবনানন্দ তাঁকে সম্মান জানিয়ে নিজের নামের বানান বদল করেন।

গোপালচন্দ্রের বইতে জীবনানন্দের ‘পদবী পরিবর্তন’ শীর্ষক আলাদা একটি অধ্যায়ই রয়েছে। সেটিতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

সুদীপ জোয়ারদার খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

ভয়ের পরিধি

শ্রীদীপ ভট্টাচার্য তাঁর ‘জাতিগণনায় ভয় পান কারা’ (২৭-১০) প্রবন্ধে বলেছেন, জাতিগণনা হলে অতি সংখ্যালঘু উচ্চবর্ণের মানুষেরা প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। কারণ, উচ্চবর্ণের মানুষেরা আজও আধিপত্য করছে পিছিয়ে পড়া লোকেদের উপরে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিহারের জাতিগণনার তথ্য উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও সংরক্ষণ নীতি ভারতের সব এলাকার জন্য, এবং সব সংরক্ষিত জাতির জন্য কি প্রযোজ্য? শুধু বিহারের জাতিগণনার তথ্য দিয়ে কি গোটা ভারতের তথ্য উঠে আসে? অনেক সম্প্রদায় সংরক্ষণের আওতায় থাকলেও বিত্ত ও সমৃদ্ধির উপরতলায় পৌঁছেছেন। অথচ, তাঁরা সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই চলেছেন। আজও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় মেধাতালিকায় স্থান করে নেয় অনেক কম নম্বরপ্রাপ্ত পড়ুয়া শুধুমাত্র সংরক্ষণ নীতিকে হাতিয়ার করে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তো সংরক্ষণের জাল অনেক ভাবে বিছিয়ে রয়েছে। আর কত দিন চলবে এই ব্যবস্থা? জাতিগণনার সঙ্গে যদি সংরক্ষণ নীতির পরিবর্তন আনা হয়, তবে উচ্চবিত্ত সংরক্ষিত শ্রেণিও অসুবিধায় পড়তে পারে।

রাজলক্ষ্মী পাল কৃষ্ণনগর, নদিয়া

নতুন মডেল

‘হাব অ্যান্ড স্পোক, প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে আইআইএম-এ’ (২৭-১০) সংবাদ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ‘হাব অ্যান্ড স্পোক লার্নিং সিস্টেম’-এর সারমর্ম হল, সব স্কুলের শিক্ষার মানকে একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত উন্নীত করা, স্কুলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামো এবং মানবসম্পদের সুষম বণ্টন, এক সঙ্গে পড়াশোনা করা বিদ্যালয়গুলির সম্প্রসারণ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং স্কুলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। বাছাই করা কয়েকটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে নিয়ে হবে লার্নিং হাব। এই উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলি আশপাশের পিছিয়ে পড়া স্কুলগুলোকে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং ছাত্র বিনিময়ের মাধ্যমে দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের মানোন্নয়ন করা হবে। প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এই প্রকল্প শুরু করা হচ্ছে। এই এডুকেশন হাব পদ্ধতি সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার অবনমন রুখতে পারবে বলে অনেকের ধারণা। সাধারণ নাগরিককেও এগিয়ে এসে সন্তানদের বিদ্যালয়মুখো করতে হবে। যে কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্যে ছাত্রছাত্রীরা এই ক্লাসগুলোতে যাচ্ছে না, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে অনুরোধ রাখব, এই এডুকেশন হাব পদ্ধতিতে রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

রামমোহন চক্রবর্তী নবদ্বীপ, নদিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন