আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন হল-এ জিন্নার ছবি রাখা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জিন্নার ভূমিকাকে কখনওই অস্বীকার করা যাবে না। ১৯১৬ সালে জিন্না সম্পর্কে সরোজিনী নাইডু বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দূত।’’ মহামান্য তিলকের বিরুদ্ধে যখন দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল, জিন্না তাঁর হয়ে মামলা লড়ে তাঁকে মুক্ত করেছিলেন। ২০০৫-এ যখন আডবাণী করাচিতে জিন্নার সমাধি দেখতে যান, ‘ভিজ়িটর্স বুক’-এ জিন্না সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘‘অনেক মানুষ ইতিহাসে অমোচনীয় ছাপ রেখে যান, কিন্তু খুব কম মানুষই সত্যি ইতিহাস তৈরি করতে পারেন।...’’ জিন্না ১১ অগস্ট, ১৯৪৭ সালে যে বক্তৃতাটি দেন— যেখানে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের যে কোনও ধর্মাচরণের অধিকার আছে, এবং ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায়ের প্রশ্নে কোনও বৈষম্যেই পাকিস্তান বিশ্বাস করবে না— সেটির কথাও আডবাণী শ্রদ্ধা-সহ উল্লেখ করেন।
১৯৩৮ থেকে এই ছবি ইউনিয়ন হলে টাঙানো, এবং ছবিটির একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য অাছে। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল। এত দিন পর্যন্ত ছবিটা নিয়ে কোনও প্রশ্নই ওঠেনি। এখন হঠাৎ বিজেপি ও তার দোসর দলগুলো এই নিয়ে বিতর্ক তুলে একটা বিভাজনের রাজনীতিতে মত্ত হয়েছে।
আর একটা প্রশ্নও হয়তো উঠতে পারে: তা হলে কি সংসদে যে গ্রুপ ফটোগ্রাফটিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জিন্না উভয়েই আছেন, এ বার কি সেটাকে সরানোর দাবি উঠবে?
সানোয়াজ খান নাকোল, হাওড়া
সমস্যা হরফে
‘কী করে বাংলা শেখাই’ (১৫-৫) নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন ইন্দ্রজিৎ রায়। প্রকৃতপক্ষে বাংলা শেখার সমস্যা হল তার লেখার জটিলতায়। ইংরেজিতে হরফ পাশাপাশি পর পর বসিয়ে লেখা হয়, ফলে তা শিশুরা সহজে শেখে, লেখে। ইংরেজির হরফগুলিও সরল। বাংলায় স্বরচিহ্নগুলি হরফকে ঘিরে বসে, ব্যঞ্জনচিহ্ন/ফলাও বস্তুত তা-ই। এ ভাবে লেখায়— হরফ ঘেরা হয় বেশি, শেখা হয় কম। আর সবচেয়ে জটিল অবস্থা হল যুক্তবর্ণ নিয়ে। হরফের নানা টুকরো অংশ নিয়ে দলা পাকিয়ে যে সব হরফ-মণ্ড বানানো হয়, তা শেখা মাতৃভাষীর পক্ষেও কঠিন। এর সুরাহা হওয়া দরকার। বাংলায় সব যুক্তবর্ণ যদি স্বচ্ছ করে লেখা যায়, তবে বাংলা শেখার সমস্যা কমবে। ষ্ণ =ষ+ঞ নয়, বরং ষ+ণ— সহজ গঠনের যুক্তবর্ণে সেটা বোঝা গেলে লাভ অনেক।
বাংলা লেখা তিন তলা (3-Tier), তাই তা লেখার এবং শেখার জটিলতা অনেক বেশি— খর্জুর শব্দে ‘র্জু’ তিন তলা, তাই লেখার খাড়াই/উচ্চতা সর্বদা তিন তলা রাখতেই হয়। শপথ, পরখ, কলম, নরম ইত্যাদি লিখলেও লেখার খাড়াই তিন তলা বজায় রাখতে হয়, পরবর্তী নানা লিখনের জন্য।
এই তিন তলা ব্যবস্থাকে সরল এক তলা করা এবং লেখার স্বরচিহ্নের অপসারণ বা অবলোপ ঘটানো হবে বাংলা লেখা বদলের অভিমুখ। ইংরেজির মতো হরফ পাশাপাশি পর পর বসিয়ে লিখতে পারলে তখন বাংলা শেখা, এবং বাংলা পড়া নিয়ে সমস্যা থাকবে না।
মনোজকুমার দ. গিরিশ কলকাতা-৩৯
ইচ্ছেটা নেই
বাঙালি প্রজন্ম এখন মাতৃভাষা ছেড়ে জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালীয় (আর ইংরেজি তো আছেই) শেখার জন্য বিভিন্ন কোর্স করছে। নিজে এক জন বাংলার শিক্ষিকা হয়ে দেখেছি বাংলা ভাষাটাকে আদর করবার কেউ নেই। কেন এত অনীহা— সে প্রশ্ন সবার মধ্যে থাকলেও, ভাষাটার প্রতি আকর্ষণ বড় একটা দেখা যায় না। তাই বলে বর্তমান বাংলা শিক্ষণপদ্ধতি কিন্তু পিছপা হয়ে থাকেনি। ছড়া ও ছবিতে শব্দ ও বর্ণ শেখানোর পদ্ধতি সমৃদ্ধ পুস্তক এখন সর্বত্র, যেখানে পাতা-জোড়া ছবিই প্রাধান্য পেয়েছে। কেউ এখন শুধুমাত্র ‘সহজপাঠ’ ও ‘বর্ণপরিচয়’-এর আঁচলের তলায় নেই।
নিবন্ধে লেখা হয়েছে “কোনও লিখিত শব্দকে পড়তে বা উচ্চারণ করার সময় আমাদের মস্তিষ্ক আঙ্কিক সূত্র ধরে কম্পিউটারের মতো কাজ করে, যেমন ক্+আ+ল্+ই=কালি।’’ ঠিকই। এই ভাবেই আমরা বাংলা ভাষা শিখিয়ে থাকি এবং এই পদ্ধতি বহু দিনের। ব্যাকরণের ভাষায় একে ‘বর্ণ বিশ্লেষণ’ বলা হয়। পদ্ধতি, বিষয়বস্তু সব ঠিকই আছে। আসলে দাতা ও গ্রহীতার সমস্যা, অর্থাৎ শেখানো ও শিক্ষাগ্রহণের ইচ্ছের তাগিদটাই কমে গিয়েছে।
বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিন্তা করতে গেলে ইংরেজি শেখাটাও গোলমেলে। একটা ছোট্ট বাচ্চা প্রথম ধাপে এটাও বুঝে উঠতে পারে না: SO= সো, GO= গো, কিন্তু TO=টু , DO=ডু কেন? বাংলার ভাষাবিশারদগণ বহু পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাগ্যন্ত্রের উচ্চারণের ভিত্তিতে ধ্বনি তথা বর্ণের উচ্চারণের স্থান নির্ণয় করেছেন। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতেই কী ভাবে বাংলা ভাষাকে আরও সুষ্ঠু ভাবে বলতে ও লিখতে পারা যায়, তাই নিয়ে প্রচুর ব্যাকরণ বইও তৈরি হয়েছে। শেখার ইচ্ছে থাকলে, শেখা যাবে।
তনুশ্রী ভট্টাচার্য গুরু তেগবাহাদুর পাবলিক স্কুল, দুর্গাপুর
মা-বাবা দায়ী
যে ‘বর্ণপরিচয়’ ও ‘সহজপাঠ’ আপামর বাঙালিকে বাংলা শেখাল, সেই বইগুলি আজ কী ভাবে অবৈজ্ঞানিক ও অনুপযুক্ত হয়ে গেল? ইন্দ্রজিৎবাবু লিখছেন: ‘‘বাংলায় ‘লেখাপড়া’ না শেখার জন্য কিন্তু বাবা-মায়েদের অপারগতা, আমাদের সন্তানদের অনীহা অথবা ইংরেজি মাধ্যমকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। মূল কারণ হল বাংলা ভাষা শেখানোর পদ্ধতি ও সরঞ্জামহীনতা।’’ তিনি মনে করেন, ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সহজপাঠ’ কালজয়ী হলেও আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে লেখা হয়নি। মাতৃভাষা শেখার জন্য সত্যিই কি প্রয়োজন এত আয়োজনের? না। সত্যিটা হল, আধুনিক মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের ইংরেজি শেখাতে অধিক আগ্রহী। তাঁরা ভাবেন, বাংলা শিখে কী হবে? ইংরেজি ও বাংলা শেখার পদ্ধতি মূলত একই। ছবি ও ছড়া বা রাইম। যেমন, ‘অ’ শেখানো হয় ‘‘অজগর আসছে তেড়ে, আমটি আমি খাব পেড়ে’’ ছড়া দিয়ে। সঙ্গে মোটা বড় হরফে ‘অ’, ‘আ’, আর ‘আম’ ও ‘অজগর’-এর ছবি। আর 'A' শেখানো হয় "A for apple" দিয়ে। সঙ্গে বড় মোটা হরফে 'A' আর 'apple'-এর ছবি। এর পিছনে কি বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই? বাঙালি সন্তানদের বাংলা শেখার পথে মাতৃভাষার প্রতি মা-বাবাদের চরম অনীহা এবং বর্তমান ইংরেজিমুখী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাই প্রধান বাধা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অভাব নয়।
সমরেশ কুমার দাস সেলেসি, মিজোরাম
চাপানো হচ্ছে
১৬-৫ তারিখে সোনারপুর স্টেশনে একটা ডিজিটাল বোর্ড দেখে ভিরমি খেলাম। বাংলায় লেখা আছে: ‘‘সোনারপুর রেলবে স্টেশন পর স্বাগত হো।’’ এই ভাবে ভারতীয় রেল বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকে অপমান করছে। কেন্দ্রীয় সরকার সারা ভারতে এই ভাবে জবরদস্তি হিন্দিকে চাপিয়ে দিচ্ছেন। যখন থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে লোকাল ট্রেন টিকিট দেওয়া শুরু হল, তখন থেকেই টিকিটে ওঁরা বাংলা লিপিকে মুছে দিয়েছেন স্টেশনের নাম লেখার ক্ষেত্রে। পুরনো টিকিটে বাংলা লিপিতেও স্টেশনের নাম থাকত, কিন্তু আজ তা নেই। শুধু হিন্দি আর ইংরেজিতে স্টেশনের নাম দেওয়া হচ্ছে। আর ওই দু’টি ভাষা না জানা অসংখ্য বাঙালি মানুষ যদি ভুল স্টেশনের টিকিটও পেয়ে যান, তা তাঁরা যাচাই করতেও পারছেন না। এই ধরনের একাধিক কৌশলে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের বিপদে ফেলছেন রেল কর্তৃপক্ষ, যা বহুভাষিক এই দেশের পক্ষে ক্ষতিকর ও বাংলা ভাষার পক্ষে অপমানজনক।
মাল্যবান চট্টোপাধ্যায় কলকাতা-৪১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়