‘‘সড়ক বাঁচাতে নামের ‘দাওয়াই’’’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বর্ষায় কলকাতার রাস্তাগুলির দুরবস্থা দেখে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ ও পুর কমিশনারের ইঞ্জিনিয়ারদের দাওয়াই প্রসঙ্গে, অভিজ্ঞতার নিরিখে কয়েকটি কথা বলতে চাই। পূর্ত দফতর বা পুরসভাগুলিতে এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে একটি দল (যেখানে আছেন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বা ওভারসিয়ার, তার উপরে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও সবার উপরে এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার), দফতরের যে কোনও কাজ দেখভাল করে এবং প্রত্যেকের দায়িত্ব সমান নয়। পূর্ত দফতরের কোড অনুযায়ী দায়িত্বের ভাগ কলকাতা শহরাঞ্চলে প্রথম জনের ১০০%, দ্বিতীয় জনের ২০-২৫% এবং এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের ৫-১০%। কারণটা আর কিছুই নয়, এক এক জনের হাতে কাজের পরিমাণের ও পদের তারতম্য অনুসারে এই দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছে। সুতরাং সাইনবোর্ডে এঁদের মধ্যে কোন ইঞ্জিনিয়ারের নাম লেখা থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। কারণ কাজটির ব্যর্থতার জন্য কোনও বিশেষ এক জনকে দায়ী করা উচিত হবে না। বরঞ্চ এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে পুরো টিমটিকে দায়ী করা যেতে পারে এবং প্রধান হিসেবে সাইনবোর্ডে এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের নামটি থাকলে যথাযথ হবে। এই ধরনের সাইনবোর্ডের ব্যবহার প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার কাজে গ্রামাঞ্চলে হয়ে থাকে। এত সব করেও কি রাস্তাগুলির অবস্থা পুরোপুরি ফেরানো যাবে?
গঙ্গার তীরে অবস্থিত কলকাতার সার্বিক মাটির চরিত্র এবং কলকাতার নিজস্ব আধার বা প্রোফাইলটি, যা জল জমার পক্ষে অনুকূল— তা কি টেকসই ও শক্তিশালী রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়? নতুন রাস্তা করতে গিয়ে ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস বা আইআরসি নির্দেশিকা অনুযায়ী যে সাবগ্রেড বা মাটির ভিতটি সচরাচর পাওয়া যায়, সেটির চরিত্র পরীক্ষা করে, আগামী ২০ বা বেশি বছরের যানবাহনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে, রাস্তাটির ডিজ়াইন (অর্থাৎ রাস্তায় বিভিন্ন স্টেজে কী কী মেটিরিয়াল কত থিকনেসের দিতে হবে) নির্ধারণ করা হয়। কাজটি করার সময় ওই ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা উপযুক্ত কনসোলিডেশন ও কম্পাকশন নির্দেশিকা অনুযায়ী করা উচিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তত্ত্বাবধানে ঘাটতি, বাবুরা কেউ সময় দেন না। কনট্রাক্টর যা খুশি (নিজের লাভ দেখে) করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপাদানগুলির উৎকৃষ্টতা যাচাই না করেই কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। যেখানে যেমন দরকার যথেষ্ট কনসোলিডেশন ও কম্পাকশন করা হয় না। রাস্তা করার সময়ে যথেষ্ট স্লোপ বা ঢাল মেনটেন করা হয় না, ফলে বর্ষায় বেশি জল এক জায়গায় জমে ক্ষতের সৃষ্টি করে ও ক্রমশ বিশালাকার গর্তে পরিণতি পায়। আবার অনেক জায়গায়, রাস্তার দু’পাশে বা এক পাশে ড্রেনেজের ব্যবস্থা থাকে না, থাকলেও বর্ষায় মজে গেলে পরিষ্কার করার কথা কেউ ভাবেন না। অনেক রাস্তার বিশেষ কোনও অংশে বিটুমেন বেশি পুড়ে গিয়ে আঠালো ভাব হারিয়ে ফেলে এবং পাথরগুলিকে এক সঙ্গে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে বৃষ্টির জল খুব সহজেই মাটির ভিতরে প্রবেশ করে রাস্তাটিকে দ্রুত নষ্ট করে। এই সব কারণে অনেক খরচ করা সত্ত্বেও রাস্তা টেকে না।
আর সবার উপরে আছে দফতরের এক বৃহৎ অংশের দুর্নীতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক পার্টিগুলিকে চাঁদা দিতে কনট্রাক্টরদের বাধ্য করা। এর ফলে ১০০ টাকার কাজে রাস্তায় কাজ হয় বড়জোর ৫০-৬০ টাকার। সব্বাইকে দিতে যদি এত টাকা যায়, তবে কনট্রাক্টরবাবুর কী দোষ খারাপ মাল সাপ্লাই করায়? বাবুদের খুশি করলেই যখন ঝামেলা মিটে যাচ্ছে!
তবে কলকাতার রাস্তায় গর্তের যা সমস্যা, তাতে বিদেশে তাৎক্ষণিক ‘পটহোল’ মেরামতির জন্য ব্যবহৃত একটি বিশেষ অত্যাধুনিক যন্ত্র কিনতে পারলে ভাল হয়। আর উচিত হবে প্রত্যেক বর্ষার আগে প্রত্যেকটি রাস্তা তরতাজা রাখা, যাতে বর্ষা বেশি ক্ষতি করতে না পারে। প্রত্যেক ধাপে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য প্রত্যেকটি বরোতে একটি অত্যাধুনিক ‘কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি’ তৈরি করতে হবে, যাতে বিশেষজ্ঞ দিয়ে কাজটির ও মেটিরিয়ালগুলির গুণমান সহজেই নিরূপণ করা যায়।
মৃণাল মুখোপাধ্যায়
প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার,
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
রাস্তা জলমগ্ন
আমি সোদপুর নাটাগড় অঞ্চলের বাসিন্দা। এই অঞ্চলের জল নিকাশি ব্যবস্থার হাল গত কয়েক বছরে অতি করুণ অবস্থায় পৌঁছেছে। সুলেখার মোড় থেকে এইচ বি টাউন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে কোনও নর্দমা নেই। বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় রাস্তা জলমগ্ন হয়ে থাকে। রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে এই রুটের বাস প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়, অটো অন্য দিক দিয়ে ঘুরে যায়। যার ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়, ভাড়াও বেশি দিতে হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত, যা প্রায় মারণফাঁদ তৈরি করে রেখেছে। প্রতি দিন প্রতি বেলায় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের। স্থানীয় মিউনিসিপাল অফিসে বার বার জানানো সত্ত্বেও কোনও উদ্যোগ
করা হয়নি। নতুন রাস্তা তৈরির আশ্বাস দিলেও সে কাজে অকারণ দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষণীয়।
অনুরূপা সিনহা
কলকাতা-১১৩
বাঙুরে গুন্ডামি
গত ৩০ জুলাই আমি আর আমার দিদি এই রাজ্যের নিউরোলজির একমাত্র সরকারি হাসপাতাল বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে যাচ্ছিলাম। আমি ওখানে তিন মাস অন্তর যাই। হাসপাতালের সামনে কয়েক জন অল্পবয়সি ছেলে আমাদের গাড়ি আটকে দিয়ে বলল, গাড়ি হাসপাতালের ভিতরে যাবে না, আমাদের পায়ে হেঁটে হাসপাতালে ঢুকতে হবে। আমরা কিন্তু দেখছিলাম, অনেক গাড়ি হাসপাতালের মধ্যে যাওয়া-আসা করছে। আমরা তখন প্রশ্ন করলাম, অন্য গাড়ি যখন হাসপাতালে ঢুকছে, তখন আমরা কেন ঢুকতে পারব না? আমার শরীর খারাপ লাগছিল, তবুও কিছুতেই তারা গাড়ি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে দেবে না। আমরা প্রতিবাদ করছি দেখে গুন্ডাদের বক্তব্য: আমরা মহিলা বলে আমাদের কিছু করছে না, ছেলে হলে পিঠের চামড়া তুলে নিত। আমাদের পায়ে হেঁটেই হাসপাতালে ঢুকতে হল। ভিতরে এক জন পুলিশকে দেখলাম; তাঁকে সব কিছু জানালাম। তাঁর বক্তব্য— এই ঘটনা প্রায়শই এখানে হয়। তাঁরা লোকাল থানায় সব জানিয়েছেন কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। আমরা যেন হাসপাতালের সুপারকে সব জানাই।
স্বাতী ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৮
ফুটপাত নেই
দমদম নাগেরবাজারের মুখ থেকে ষাটগাছি মোড় পর্যন্ত যশোর রোডের দু’প্রান্তে বস্তুত ফুটপাত বলে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। কেননা ফুটপাত দু’টির তিন-চতুর্থাংশই বিবিধ সব্জি,আনাজপাতি, ফল ও মাংস বিক্রেতাদের দখলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পথচারীরা বাধ্য হয়ে নেমে আসছেন রাস্তায়। এতে সব চেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ছেন প্রবীণ নাগরিকেরা। অশক্ত শরীরে গাড়ি চলাচলের রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁদের। অথচ নাগেরবাজারের ঢিল ছোড়া দূরত্বেই অবস্থিত দক্ষিণ দমদম পুরসভা।
সমীর কুমার ঘোষ
কলকাতা-৬৫
নোংরা জল
বাগুইআটির প্রধান প্রবেশপথের দু’দিকে দুটো বাজার। প্রতি দিন হাজার হাজার লোকের ভিড়। এ রকম কর্মব্যস্ত রাস্তায় বাজারের মলমূত্রের নোংরা জল বয়ে চলেছে। সমগ্র অঞ্চলটা দুর্গন্ধময়। অথচ বাজার সমিতির কোনও গা নেই। পায়ে পায়ে নোংরা জল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিতোষ দাস
বাগুইআটি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।