সম্পাদক সমীপেষু: উদ্যোগ ও পরিণতি

সে দিনের সেই বিধবাবিবাহের অন্যতম সাক্ষী হুতোম লিখেছেন যে, বিধবাবিবাহের অতিথি-অভ্যাগতরা অনেকেই পরে গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন। রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ব্রাহ্মণদের টাকাপয়সা দিয়ে ও প্রায়শ্চিত্ত করে জাতে উঠতে হয়েছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৩
Share:

‘ইতিহাসে বাড়ি বদল’ (রবিবাসরীয়, ২৩-৯) শীর্ষক লেখায় শেখর ভৌমিক প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতার ১২নং সুকিয়া স্ট্রিটের রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যে বিধবাবিবাহের সূচনা হয়েছিল তার সাফল্য কত দূর? এ প্রসঙ্গে তিনি প্রথম বিধবাবিবাহের পাত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন যে স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায়শ্চিত্ত করে জাতে ওঠেন, সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

Advertisement

আবার সে দিনের সেই বিধবাবিবাহের অন্যতম সাক্ষী হুতোম লিখেছেন যে, বিধবাবিবাহের অতিথি-অভ্যাগতরা অনেকেই পরে গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন। রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ব্রাহ্মণদের টাকাপয়সা দিয়ে ও প্রায়শ্চিত্ত করে জাতে উঠতে হয়েছিল।

এই মহান সামাজিক উদ্যোগের এ হেন করুণ পরিণতি থেকে, তখনকার দিনের হিন্দু সমাজে রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যবাদের চাপ কতটা ছিল সে সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়। তবে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের পক্ষেও বাংলার তথা ভারতীয় সমাজে যে দারুণ একটা আলোড়নের সূচনা হয়েছিল তাকে কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। ১৩১৫-র বৈশাখ (১৯০৮ সাল) সংখ্যার ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কলকাতার প্রথম বিধবাবিবাহের পর থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বিধবাবিবাহের মোট সংখ্যা হয়েছিল ৮১, যা বিদ্যাসাগর ও তাঁর সঙ্গীসাথিদের সমাজ সংস্কারের প্রয়াসের প্রাথমিক পর্যায়ের সাফল্যকেই সূচিত করে।

Advertisement

পীযূষ রায়

বেহালা

তটস্থ রোগী

আমি এক জন দীর্ঘ দিনের রিউমাটয়েড আর্থরাইটিসের রোগী। এক বিখ্যাত হাসপাতালের প্রখ্যাত ডাক্তারের অধীনে গত চার বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। গত মাসে আমি ওঁকে দেখাতে যাই, কিন্তু তিনি যে ওষুধ দেন, তাতে আমার হাত-পায়ের ফোলা বেড়ে যায়। ওঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে উনি আর একটা ওষুধ খেতে বলেন। তাতে ব্যথা ও ফোলা আরও বেড়ে যায়। তখন আমার স্বামী ওঁকে ফোনে যোগাযোগ করেন। ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশন দেখতে চান। আমার স্বামী ডাক্তারবাবুর ইমেল আইডি জানতে চান, যাতে প্রেসক্রিপশনটা পাঠানো যায়। উনি আইডি-টা বলেন, কিন্তু ফোনে সেটা পরিষ্কার বুঝতে না পারায় আমার স্বামী আর এক বার বলার জন্যে অনুরোধ করেন। তখন উনি চিৎকার করে অত্যন্ত অভদ্র ভাবে আমার স্বামীকে বলেন, ‘‘আপনি কি কালা? আমি এখন ব্যস্ত আছি, আমাকে বিরক্ত করবেন না!’’ বিভিন্ন নামজাদা চিকিৎসকের অভদ্র ব্যবহারের ভয়ে তটস্থ থাকাই এ দেশের সাধারণ মানুষের ভবিতব্য।


মাধুরী বন্দ্যোপাধ্যায়
আসানসোল

মাত্র ১০টি


জঙ্গলমহলে বৃহৎ গঞ্জ শিলদা। আশেপাশের ৫০টির বেশি গ্রাম এই গঞ্জের উপর নির্ভরশীল। গুরুত্বের বিচারে ঝাড়গ্রাম শহরের পরেই শিলদার স্থান। অথচ শিলদার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র ১০টি শয্যা। এতে কুলোয় না। অনেক রোগীকেই বারান্দায় খাটিয়ায় অথবা মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসার কাজ সারতে হয়।


কুহেলি লাহা
শিলদা, ঝাড়গ্রাম

পুরো পেনশন


রাজ্য সরকারের নিয়মানুযায়ী, মূল পেনশন-প্রাপক মারা যাওয়ার পর, তাঁর পরিবার অর্ধেক পেনশন পায়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সেই পরিবারকে চরম দৈন্য ও অার্থিক অনটনের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। যেমন আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারকে করতে হচ্ছে। আইন বদলে, যদি পরিবারকে পুরো পেনশনটিই দেওয়ার নিয়ম হয়, অনেকে উপকৃত হবেন।


গীতা মাইতি
দুর্গাচক, পূর্ব মেদিনীপুর

পরামর্শ


সেতু ভেঙে যাওয়ার পর মাঝেরহাটের দক্ষিণের বিরাট অংশ ও মূল কলকাতার যোগাযোগ বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে খুব তৎপরতার সঙ্গে টালিগঞ্জ মেট্রোর সঙ্গে বেহালা, শখেরবাজার/চৌরাস্তা ও ঠাকুরপুকুরের যোগাযোগের জন্য বেশ কিছু সরকারি বাসের ব্যবস্থা হয়েছে, যা কাজেও লাগছে। নিত্যযাত্রী হিসেবে মনে হয়েছে, আরও কিছু ব্যবস্থা করা যায়।
টালিগঞ্জ মেট্রো থেকে বাসগুলি করুণাময়ী সেতু দিয়ে চলে। পাশাপাশি, নীচে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো ও ওপরে পূর্ব রেলের টালিগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন চারু মার্কেট থেকে মহাবীরতলা-বি এল শাহ রোড হয়ে শখেরবাজার চৌরাস্তার দিকে বেশ কিছু বাস চালালে, উভয় ট্রেনের যাত্রীরাই উপকৃত হবেন, বাসের পক্ষেও তা লাভজনক হবে এবং করুণাময়ী সেতুর উপর চাপ কমবে।
এখন ধর্মতলা ছেড়ে খিদিরপুর-গার্ডেনরিচ হয়ে তারাতলা আসতে অতিরিক্ত সময় লাগে কখনও আধ ঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা বা আরও বেশি। চক্ররেলের বিবাদী বাগ-মাঝেরহাট পথে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার আলোচনার ভিত্তিতে মাঝেরহাট স্টেশন চত্বরে কিছু দিনের জন্য দূরপাল্লার (দক্ষিণের) বাস স্ট্যান্ডের ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করুন। এতে সময় বাঁচবে, দূষণ কমবে, রেলযাত্রী বাড়বে, বাসের ‘ট্রিপ’সংখ্যাও বাড়বে। দক্ষিণের দূরপাল্লার কিছু বাস জোকা-এম জি রোড-টালিগঞ্জ মেট্রো হয়ে ধর্মতলা এবং কিছু বাস তারাতলা-রাসবিহারী হয়ে ধর্মতলা আসুক।


দীপ্তেশ মণ্ডল
চালুয়াড়ি, দ. ২৪ পরগনা

অগ্নিত্রাতা


তিলোত্তমা কলকাতার বুকে ভয়ঙ্কর সব অগ্নিকাণ্ডে বিপিন গনত্রার সাহসী অবদানের কথা এই কাগজে পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পাড়ার ক্লাবের বাৎসরিক উৎসবে তাঁকে সংবর্ধনা জানালে এক দিকে তাঁর এই মহৎ কাজে উৎসাহ জোগানো যাবে, তেমনই মানুষ হিসাবে সামাজিক ঋণশোধের কিঞ্চিৎ সুযোগ পাওয়া যাবে। সেই উদ্দেশ্যে, ঠিকানা না জেনেও জনা চারেক অনুজকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দমকল অফিসে খোঁজ করতেই ওখানকার সহৃদয় কর্মচারীবৃন্দ সঙ্গে সঙ্গে ফোন করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখি, বাঁ দিকের ফুটপাত ধরে হেঁটে আসছেন রোগা, লম্বা, ইস্পাতের মতো পেটানো চেহারার এক মানুষ, হেঁটে হাঁপিয়ে গিয়েছেন। আমরা ওঁর সম্পূর্ণ অচেনা, তবু প্রথম দর্শনেই জড়িয়ে ধরলেন এবং জোর করেই নিয়ে গেলেন তাঁর পাঁচ ফুট বাই তিন ফুটের ছোট্ট মন্দিরে। সেটিকে একটি ক্ষুদ্র সংগ্রহশালা বললে ভুল হবে না। আমাদের বসতে বলেই, একটা স্টিলের গেলাস হাতে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ওই এক চিলতে ঘরে বসে দেখছি, পলেস্তারা খসা চার দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য মানপত্র। দেওয়ালে জায়গা না পেয়ে ঘরের এক কোণে অনাদরে পড়ে আছে কয়েকটি। বিপিনবাবু গেলাসে করে চা এনে আমাদের দিয়ে, বলতে শুরু করলেন, চল্লিশ বছর ধরে কী ভাবে অগ্নিকাণ্ডে বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করে চলেছেন। পদ্মশ্রীর পদকটি দেখার ইচ্ছে জানালাম, দেওয়ালে টাঙানো ফুটো রেশনব্যাগ থেকে অযত্নে মলিন মূল্যবান বস্তুটি বার করে দেখালেন। কথায় কথায় জানালেন, তাঁর এক চিলতে কুঠুরিতে জমি-কারবারির করাল দৃষ্টি পড়েছে। তা ছাড়া ষাটোর্ধ্ব শরীরে নানা ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। তবু আজও কোথাও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিপন্নকে উদ্ধার করতে। এমন মহৎ ও সাহসী সৈনিককে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং সরকারের দায়িত্ব।


স্বপন কুমার ঘোষ
মধ্য ঝোড়হাট, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন