রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র।
মহাগঠবন্ধন বা বিজেপি বিরোধী মহাজোটের সমীকরণটা আদৌ নিশ্ছিদ্র কি না, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিল বিজেপি। নির্বাচন যত কাছে আসছে, ততই সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায় বর্তাচ্ছে যেন বিরোধী দলগুলির উপর। রাজ্যে রাজ্যে কী ছবি, বাংলার ছবিটাই বা কী রকম, তা নিয়ে বিশ্লেষণ এখন তুঙ্গে। সেই সব বিচার-বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসা প্রশ্নচিহ্নগুলোর অভিমুখ কোন দিকে তা বিরোধী শিবিরের অজানা নয়।
বিজেপি বিরোধিতা বা মোদী বিরোধিতায় এককাট্টা হওয়া যে সময়ের দাবি, গোটা দেশের অগেরুয়া রাজনৈতিক শিবির সে কথা উপলব্ধি করেছিল সময় মতোই। কিন্তু নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতায় পৌঁছনোর আলোচনা যখন থেকে শুরু হল, তখন থেকেই বিরোধী ঐক্যের ছড়ানো-ছেটানো চেহারাটা স্পষ্ট হতে থাকল। যে সব রাজ্যে বিজেপির অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস এখনও, সেই সব রাজ্যে মহাগঠবন্ধনের আলোচনা থমকে থমকে এগলো। তবে কংগ্রেসকে বাদ রেখে অন্যরাও যে একত্র হয়ে যেতে পারল মসৃণ ভাবে, তেমন নয়।
উত্তরপ্রদেশে অন্যতম দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি হাত মিলিয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এই জোট দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির রণক্ষেত্রে বিজেপি-কে যথেষ্ট চাপে রাখছে। কিন্তু কংগ্রেসকে জোটে না রাখা কী বার্তা রাখল গোটা দেশের সামনে? পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী যখন কংগ্রেসের হয়ে নেমে পড়লেন ময়দানে, তখন কংগ্রেসকে আর অগুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করার অবকাশ কি রইল অখিলেশ-মায়াবতীদের সামনে?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: দু’জনেই ‘লম্বা-চওড়া ভাষণ’ দেন, মোদী-মমতাকে তীব্র আক্রমণ রাহুলের
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কর্নাটক বা মহারাষ্ট্র বা বিহারে বরং বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের চেহারাটা স্বস্তিদায়ক বিরোধী শিবিরের পক্ষে। তামিলনাড়ুতেও ইউপিএ মজবুত চ্যালেঞ্জ ছোড়ার আভাস দিচ্ছে। কিন্তু কেরল বা অন্ধ্র বা ওড়িশা বা বাংলা বা দিল্লি বা সুবিশাল হিন্দি বলয়ে বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের ছবিটা ম্লানই রয়ে গিয়েছে এখনও। জাতীয় মঞ্চে পাশাপাশি আসছে যে সব শক্তি, মোদী বিরোধিতাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করছে যে সব শক্তি, রাজ্যে রাজ্যে ফিরে তারাই পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কেরলে হাত মেলানোর কথা ভাবতেই পারে না কংগ্রেস-বাম। বাংলায় বরং কংগ্রেস-সিপিএম সমঝোতার ছবিটা অনেক বেশি সম্ভাবনাময় ছিল। কিন্তু তাও ভেস্তে গেল শেষ পর্যন্ত। আর তৃণমূল-সিপিএম পরস্পরের প্রতি এখনও অতটা উদার হয়ে উঠতে পারেনি। অতএব বাংলায় লড়াই দাঁড়াল চতুর্মুখী।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বাংলার চাঁচলে জনসভা করে গেলেন। সে সভা থেকে যতটা তোপ দাগলেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, ততটাই আগুন ঝরালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করেও। মোদী-মমতাকে প্রায় একাসনে বসিয়ে কাঠগড়ায় তুললেন রাহুল। অবধারিত কটাক্ষ ফিরিয়ে দিল তৃণমূলও। বাংলায় কংগ্রেস আদৌ রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তোলা হল। সেই একই দিনে বাম শীর্ষ নেতা বিমান বসু কংগ্রেসকে তীব্র কটাক্ষে বিঁধলেন রাজ্যে জোট ভেস্তে যাওয়া প্রসঙ্গে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও পাল্টা আক্রমণে গেল। মোদী বিরোধিতায় যত বেশি সম্ভব ঐক্যবদ্ধ থাকার তত্ত্ব বা তাগিদ কোথায় গেল তা হলে?
সর্ব ভারতীয় স্তরে বার বার এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদী বিরোধিতার বার্তা দিয়েছে এই দলগুলো। বৃহত্তর বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে দেশবাসীর সামনে উত্থাপন করতে পেরেছে তারা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ঐক্যের চেহারাটা আদৌ কি ততটা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠল? বিরোধী শিবিরেরই উচিত এ প্রশ্নটার উত্তর খোঁজা।