তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
লজ্জার আরও এক পর্ব, সেই সঙ্গে স্বস্তিরও বটে। লজ্জা কেন? বাংলার প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশেরই কথাবার্তা বেলাগাম, মনে করছে নির্বাচন কমিশন। লজ্জার বিষয় বৈকি! আর স্বস্তি কেন? ১০ নেতার নামের তালিকা তৈরি করে নজরদারির আওতায় আনল কমিশন। ভোটের বাজারে এই নেতাদের যাবতীয় কার্যকলাপ এবং মন্তব্যের দিকে সতর্ক নজর রাখা হবে। অতএব স্বস্তি পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
ভোট এলে হুমকির ফুলঝুরি ছুটতে শুরু করে এ বাংলায়। কেউ বলেন গুড়-বাতাসা খাওয়াবেন বা পাঁচন প্রয়োগ করবেন বা নকুলদানা দেবেন। বাছা বাছা শব্দগুলোর আড়ালে যে হিংসার ইঙ্গিত থাকে, তা নিয়ে রাজ্যবাসীর খুব একটা সংশয় নেই। এই সব মন্তব্যের পাল্টাও আবার ভেসে আসে অন্য শিবির থেকে। হাতে বাঁশ নিয়ে ভোটের বা রাজনীতির ময়দানে নামার পরামর্শ দিতে শোনা যায়, কবরে পাঠানোর হুমকি আসে, রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে নুন ছড়িয়ে দেওয়ার শাসানিও শোনা যায়।
এগুলো কি আদৌ কোনও রাজনৈতিক কথাবার্তা? বাংলার রাজনীতি কি এতই দেউলিয়া হয়ে গেল যে, জনসভার মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক বার্তা দিতে ভুলেই গেলেন প্রথম সারির নেতারা? শুধু হুমকি আর শাসানি আর প্ররোচনা? আর তাতেই হাততালি এবং পাল্টা হাততালি? এই নিম্নগামীতায় লাগাম পরানো অত্যন্ত জরুরি ছিল। না হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশটা বিপন্ন হয়, গণতন্ত্রের অর্থই বদলে যেতে থাকে অলক্ষ্যে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সঙ্কুচিত হতে হচ্ছে এই ভেবে যে, আমাদের নেতাদের কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই। গণতন্ত্রের নামে অবাধে উস্কানি বা প্ররোচনা চলে এ রাজ্যে, কিন্তু তাতে লাগাম পরানো যায় না কিছুতেই, কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না অগণতান্ত্রিক খেউড়।
কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে পদক্ষেপ করল, তাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে হচ্ছে। নেতাদের বোধ-বুদ্ধি থাক বা না থাক, রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মনিয়ন্ত্রণ থাক বা না থাক, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় রাস টানার অন্য একটা উপায় অন্তত সামনে এল। আমাদের নেতারা নিজেরাই যদি সংযত হতে যেতেন, তাহলে অনেক বেশি আনন্দের বিষয় হত। কিন্তু তা যখন হওয়ার নয়, তখন কমিশনের মাধ্যমেই না হয় লাগামটা পরানো হোক। রাজনৈতিকভাবে লজ্জার বিষয় এটা। কিন্তু কমিশনের এই পদক্ষেপ অনেককেই তাঁদের সীমারেখাটা বুঝিয়ে দেবে, এটুকু আশা রাখছি।