Editorial News

গণতন্ত্র লজ্জিত

কল্যাণ সিংহ কি জানেন না, তাঁর দায়বদ্ধতা কোনও একটা রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়? নিশ্চয়ই জানেন। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। উত্তরপ্রদেশের মতো বৃহৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন একাধিকবার।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪০
Share:

এমন দিনও দেখতে হল ভারতীয় গনতন্ত্রকে! নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগের বিহিত করতে হস্তক্ষেপ করতে হল স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে। কার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পরামর্শ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠাতে হল রাষ্ট্রপতিকে? একটা অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রের পক্ষে কত বড় লজ্জা, ভাবতে পারছি আমরা? রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহ এই লজ্জার মুখে দাঁড় করিয়েছেন দেশকে। তিনি লজ্জার মুখে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের গণতন্ত্রকে, ভারতের সংবিধানকে। একটা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন কল্যাণ সিংহ। ছোটখাট পদ নয়, একটা প্রদেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। তা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিন্দুমাত্র পরোয়া করেননি তিনি। সমস্ত প্রথা, রীতি এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা অস্বীকার করে প্রকাশ্যে বিজেপির হয়ে সওয়াল করেছেন। নরেন্দ্র মোদীকে আবার প্রধানমন্ত্রী করার আহ্বান জানিয়েছেন।

Advertisement

কল্যাণ সিংহ কি জানেন না, তাঁর দায়বদ্ধতা কোনও একটা রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়? নিশ্চয়ই জানেন। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। উত্তরপ্রদেশের মতো বৃহৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন একাধিকবার। এখন রাজস্থানের রাজ্যপাল। এ হেন ব্যক্তিত্ব নিজের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা এবং এক্তিয়ারের সীমা জানেন না, এমন কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না। কল্যাণ নিজেও তেমন কোনও সাফাই দেননি। তা হলে কি জেনেশুনেই এমন ঘটনা ঘটালেন তিনি? তাই যদি হয়, সে ক্ষেত্রে আরও মারাত্মক এই প্রবণতা। চাইলেই সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি, এমন ধারণা তৈরি হওয়া দেশের পক্ষে বিপজ্জনক।

সংবিধান লঙ্ঘনের প্রবণতা বা সাংবিধানিক মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দেওয়ার চেষ্টা এই প্রথম দেখা গেল, এমন নয়। এই জমানাতেই ঘটেছে সে সব। মেঘালয়ের রাজ্যপালের কাছ থেকে কাশ্মীরিদের সম্পর্কে অত্যন্ত অসংবেদনশীল মন্তব্য এসেছে এর আগে। কোনও সাংবিধানিক পদাধিকারী তো দূরের কথা, কোনও সাধারণ নাগরিকের মুখ থেকেও ওই রকম মন্তব্য কাঙ্খিত নয়। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা মেঘালয়ের রাজ্যপাল করেননি। আরও বিস্ময়কর হল এই যে, তার জন্য ওই রাজ্যপালকে খুব একটা সমস্যায়ও পড়তে হয়নি। বিরোধী দলগুলোর হইচই, মিডিয়ায় একটু চর্চা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু কলরব— এর বাইরে তেমন কিছুই হয়নি। হয়নি বলেই আরও এক ধাপ এগোলেন আর এক রাজ্যপাল। সে দিনই যদি জবাবদিহি করতে হত মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়কে, তা হলে রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহ এত দূর এগোনোর সাহস পেতেন না।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিরোধী দলের অভিযোগ পেয়ে দেশের নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এতই গুরুতর অভিযোগ যে, কমিশনের চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। গণতন্ত্রের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে যাচ্ছে। ভারতের মতো সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের কিন্তু এটা প্রাপ্য ছিল না।

আরও পড়ুন: কল্যাণ সিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা? তৎপর রাষ্ট্রপতি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন