উত্তর-পূর্বের অভিমুখ

সঙ্কটের প্রধান সূত্রটি নিহিত রহিয়াছে নাগরিক পঞ্জি প্রণয়ন ও নাগরিকতা (সংশোধনী) বিল (২০১৬)-এর মধ্যে। সাধারণত মনে করা হয়, অসমের রাজনীতিই এই দুইটি বিষয়ে প্রভাবিত হইতেছে। সেখানকার অধিবাসীরাই ইহা লইয়া প্রবল উদ্বেগ ও অশান্তির মধ্যে দিন কাটাইতেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share:

গত কয়েক বৎসরে উত্তর-পূর্ব ভারতের চালচিত্র অনেকখানি বদলাইয়া গিয়াছে, এবং সেই বদলের অভিমুখ দাঁড়াইয়াছে ভারতীয় জনতা পার্টি। গত লোকসভা নির্বাচনে দেশের এই অংশে বিজেপি যে শক্তি লইয়া নামিয়াছিল এবং এই বারের জাতীয় নির্বাচনে যে অবতারে তাহারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতেছে, দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব বিরাট। অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও ত্রিপুরায় এখন এই দলের মুখ্যমন্ত্রীরা শাসন করিতেছেন, আর মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে স্থানীয় শক্তির সহিত মিলিত ভাবে বিজেপি তাহার ক্ষমতা জারি রাখিয়াছে। আঞ্চলিক রাজনীতির দিক দিয়াও বিজেপির রিপোর্ট কার্ড বিশেষ উল্লেখ্য, কেননা আঞ্চলিক দলগুলির সহিত হাত না মিলাইলে যে বিজেপি দেশের এই অংশে শাসক হিসাবে উঠিয়া আসিতে পারিবে না, তাহা বুঝিয়া গিয়া জোট-রাজনীতির কঠিন পরীক্ষায় বিজেপি দলের রিপোর্ট কার্ড এখনও পর্যন্ত ভালই বলিতে হইবে। আরও একটি বিষয়ে বিজেপি ইত্যবসরে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়াছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতির নিজস্ব সমস্যাগুলির মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তকে তীব্র করিয়া তুলিয়াছে। তাহাতে দলের ভালর সঙ্গে মন্দও কম হয় নাই। কিন্তু গত পাঁচ বৎসরে স্থানীয় বিষয়গুলি যে অবস্থানে ছিল, এখন যে সেই তুলনায় অনেক ভিন্ন স্তরে পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে বিজেপির ‘অবদান’টি অস্বীকার করা যাইবে না। নিন্দুকরা অবশ্যই কথাটি ভিন্ন ভাবে বলিবেন। বলিবেন যে, দেশের উত্তর-পূর্বাংশের রাজনৈতিক বিপদগুলিকে সমগ্র দেশের রাজনৈতিক বিপদ করিয়া তুলিয়াছে বিজেপি, এবং ঘটনাচক্রে এই অংশের রাজনৈতিক বিপদগুলিকে অনেক গুণ বাড়াইয়া ভয়ানক করিয়া তুলিয়াছে। অর্থাৎ, যে দিক দিয়াই দেখা যাক না কেন, এই বারের জাতীয় নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে আর দেশের মূল ভূখণ্ড হইতে বিচ্ছিন্ন বলা যাইবে না। নানা দিক দিয়া তাহাদের সঙ্কটগুলি এখন জাতীয় সঙ্কটে উত্তীর্ণ।

Advertisement

সঙ্কটের প্রধান সূত্রটি নিহিত রহিয়াছে নাগরিক পঞ্জি প্রণয়ন ও নাগরিকতা (সংশোধনী) বিল (২০১৬)-এর মধ্যে। সাধারণত মনে করা হয়, অসমের রাজনীতিই এই দুইটি বিষয়ে প্রভাবিত হইতেছে। সেখানকার অধিবাসীরাই ইহা লইয়া প্রবল উদ্বেগ ও অশান্তির মধ্যে দিন কাটাইতেছেন। কথাটি আংশিক সত্য। সত্যের বাকি অংশটি লুকাইয়া আছে বাংলাদেশ-সন্নিহিত উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে, যেখানে নাগরিকত্ব বিল লইয়া উত্তেজনা ক্রমে ছড়াইয়া পড়িতেছে। পঁচিশটি লোকসভা আসনের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ জুটি যদিও অন্তত একুশটিতে সরাসরি জয় দেখিতেছেন, স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব এবং স্থানীয় রাজনৈতিক শরিকরা ততটা নিশ্চিত নহেন। নাগরিকত্ব বিল ধীরে এই রাজ্যগুলিতে একটি শাঁখের করাত হিসাবে আত্মপ্রকাশ করিতেছে। ভূমিপুত্ররা বিক্ষুব্ধ হইতেছেন ইহার ফলে ‘বহিরাগত’দের পাকাপাকি ব্যবস্থা হইতেছে বলিয়া। আর বিভিন্ন সময়ে এই সব প্রদেশে আগত মানুষজন ক্ষুব্ধ হইতেছেন বিলটির কিছুমাত্র অগ্রগতি না দেখিয়া। বিজেপিকে তাঁহারা কতখানি হাত খুলিয়া ভোট দিবেন, এখনই বলা যায় না। তবে ইতিমধ্যে একটি বিষয়ে বিজেপি নিজের পিঠ চাপড়াইতে পারে। ভোটের হিসাবকে মাছের চোখ করিয়া তাঁহারা আগাইয়াছেন, এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতির ভাষা, ভাব ও বক্তব্য তাঁহাদের হস্তক্ষেপেই এতখানি পাল্টাইয়াছে। এই পরিবর্তন সাময়িক নহে। কে জানে, আগুন লইয়া খেলিতে গিয়া আগুন ছড়াইয়া পড়িলে তাহা সামাল দিবার উপায় হিন্দুত্ববাদী নেতারা জানেন কি না। যদি না জানিয়া থাকেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু এই আগুনে দেশের উত্তর-পূর্বাংশ ভয়ঙ্কর ভাবে বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হইতে চলিয়াছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন