দেশভাগের যন্ত্রণা তাড়া করে ফেরে আজও
সাক্ষী: দেশভাগের শিকার এই মানুষদের কথা নিয়েই তৈরি ‘ভয়েসেস অব পার্টিশন’
ডান্ডি শহরের কেনেথ মিলস-এর জন্ম ১৯৩৭-এর কলকাতায়। ভারতের স্মৃতি বলতে ওঁর মনে পড়ে আয়া বুধিয়ার কথা। ছোট্ট কেনেথকে গান শোনাতেন তিনি, মক্খন রোটি খা গয়া, ছোটা বাবা সো গয়া...। তাঁর স্মৃতিতে ভাসে বুধিয়ার শাড়ি, সর্ষের তেলের ঘ্রাণ। ১৯৪৭-এ হারুন আহমেদের বয়স ছিল এগারো। ওঁরা দিল্লিতে থাকতেন। এক দিন বাবা ওঁদের মরিস ট্রাভলার গাড়িটায় চড়ে কাজ থেকে ফিরলেন। খুব উত্তেজিত, হাতে একটা বন্দুক। মাকে বললেন এক্ষুনি বাচ্চাদের নিয়ে আসতে। মা তাঁর কাপড়গুলো গুছিয়ে নেওয়ার সময়টুকুও পাননি। চার দিকে দাঙ্গাহাঙ্গামা, তারই মধ্যে ওঁরা পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা হলেন। শেষে পৌঁছলেন একটা শরণার্থী শিবিরে। সেখানে মলমূত্রের দুর্গন্ধ, আশেপাশে শিশুদের কান্না— এখনও মনে পড়ে হারুনের। করাচির রাজ দাসওয়ানি প্রেমে পড়েছিলেন মুসলিম মেয়ে ইয়াসমিনের। তখন ওঁরা বারো কি তেরো, রোজ রাতে ছাদে দেখা করতেন লুকিয়ে। ভাবতেন, ধর্মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে এক দিন ঠিক বিয়ে করবেন ওঁরা। এখন মনে হয়, ঈশ্বর সদয় ছিলেন না সে দিন। দেশভাগ, প্রিয়জনবিচ্ছেদ ওঁদের অসহনীয় মনে হয়েছিল। ব্রিটিশ বা ভারতীয়, দেশভাগের সাক্ষী এই সব মানুষদের কথা রেকর্ড করেছে বিবিসি রেডিয়ো-ফোর, তিন পর্বের বেতার-তথ্যচিত্র ‘ভয়েসেস অব পার্টিশন’-এর জন্য। বর্ণনায় কবিতা পুরি, ওঁর নিজের পরিবারও দেশভাগের শিকার হয়েছিল। দেশভাগের যন্ত্রণা আর আতঙ্ক আজও এই মানুষগুলোকে তাড়া করে ফেরে, এই ব্রিটেনেও।
প্রাসাদে প্রদর্শনী
রানি ভিক্টোরিয়ার ছুটি কাটানোর প্রিয় জায়গা ছিল ‘অসবর্ন হাউস’। জীবনের শেষ দিকে, মুনশি আবদুল করিমের সঙ্গে ওঁর বন্ধুতার দিনগুলোয়, রানি এখানকার দরবারকক্ষটি তৈরি করান। এই প্রথম কোনও ছবির শুটিং হল সেখানে— ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’। ছবিতে ব্যবহৃত পোশাকের প্রদর্শনী চলছে এখানে। আছে অস্কার মনোনয়ন পাওয়া পোশাক-পরিকল্পক কনসোলাটা বয়েল-এর তৈরি সোনালি-কালো সিল্ক গাউন, ছবিতে পরেছেন জুডি ডে়ঞ্চ। ছবি-মুক্তির পর দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে আরও, আশা।
ডাকটিকিটের ৫০
রয়াল মেল-এর ডাকটিকিটে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবি ব্রিটেনে পরিচিত দৃশ্য। আর্নল্ড মেচিন-এর করা, রানির বিখ্যাত ভাস্কর্যের ছবি-সংবলিত সেই ডাকটিকিটের এ বছর সুবর্ণজয়ন্তী। উনিশ শতকের ‘পেনি ব্ল্যাক’ স্ট্যাম্পের আদলে মেচিন এর ডিজাইন তৈরি করেন। প্লাস্টারের ছাঁচ বানিয়ে, তাতে বসান নানা প্রতীক ও লিপি। স্ট্যাম্প অ্যাডভাইজরি কমিটি চেয়েছিল, রানির মাথায় সেই মুকুট থাকুক, পেনি ব্ল্যাক স্ট্যাম্পে ভিক্টোরিয়ার মাথাতেও যেমন ছিল। ফটোগ্রাফ দেখে মেচিন সেই মুকুটের মডেল বানালেন, নতুন একটা প্লাস্টারের ছাঁচও। সেই ছাঁচের ছবিই ব্যবহৃত হল স্ট্যাম্পে। ১৯৬৭-র সেই ছবি তার পর থেকে ২০০ বিলিয়নেরও বেশি স্ট্যাম্পে ছাপা হয়েছে!
বেফাঁস কথার রাজপুত্র
আলটপকা: প্রিন্স ফিলিপ
প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা এ সপ্তাহ থেকে আর কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। ৯৬ বছর বয়সি প্রিন্স সেই ১৯৪৭-এর নভেম্বরে এলিজাবেথকে বিয়ের পর থেকে এত বছর সব সময় রানির পাশে পাশে থাকতেন। এ বছরই ওঁদের বিয়ের ৭০ বছর পূর্তি। আলটপকা মন্তব্য করায় ডিউকের বদনাম আছে, আড়ালে অনেকেই ওঁকে ‘বেফাঁস কথার রাজপুত্র’ বলে থাকেন। ১৯৯৭ সালে রানির সঙ্গে ভারতে এসে জালিয়ানওয়ালাবাগ গিয়েছিলেন। সেখানে হতাহতের সংখ্যা দেখে বলেছিলেন, ‘‘দু’হাজার? সত্যি সত্যি এত জন... হয়নি, না? বাড়িয়ে লেখা আছে মনে হয়।’’ খুব শোরগোল পড়ে গিয়েছিল এই মন্তব্যে। চিন-এ পড়তে যাওয়া ব্রিটিশ ছাত্রদের এক বার বলেছিলেন, ‘‘আর বেশি দিন এখানে থাকলে তোমাদের সবার চোখও ওই রকম হয়ে যাবে।’’ ২০০২-এ অস্ট্রেলিয়া গিয়ে সেখানকার আদিবাসী বংশোদ্ভূত এক সফল উদ্যোগপতিকে বলেছিলেন, ‘‘তোমরা কি এখনও ওই বর্শা-টর্শা ছোড়ো?’’