লন্ডন ডায়েরি

ভারতের স্বাধীনতার সত্তর বছরে তনিকা ঠিক করেন, তাঁর পরিবারের ইতিহাসকে নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। শেক্সপিয়রের স্মৃতিধন্য গ্লোব থিয়েটারে ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিপেনডেন্স’-এ অভিনীত হচ্ছে তনিকার নাটক ‘লায়ন্স অ্যান্ড টাইগার্স’। বিনয়-বাদল-দীনেশই তিন মুখ্য চরিত্র।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:৪০
Share:

গ্লোব থিয়েটারের মঞ্চে বাঙালির বিপ্লবগাথা

Advertisement

বাঙালি নাট্যকার তনিকা গুপ্ত বড় হয়েছেন ব্রিটেনে, ঠাকুরদার কাছে তাঁর ছোট ভাই দীনেশ গুপ্তের গল্প শুনে। বিনয়-বাদল-দীনেশ, এই তিন তরুণ ১৯৩০ সালে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ঢোকেন, বাকিটা ইতিহাস। বিনয় ও বাদল সেই অভিযানেই মারা যান, দীনেশ পরে বন্দি ছিলেন আলিপুর জেলে। জেল থেকে চিঠি লিখতেন। তনিকার ঠাকুরদা ৯২টা চিঠি রেখে দিয়েছিলেন, বাংলা আর ইংরেজিতে লেখা। সেই চিঠিগুলো দেখে আর পড়ে তনিকার বেড়ে ওঠা। চিঠিতে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখা নিষিদ্ধ ছিল, ১৯ বছরের তরুণ দীনেশ লিখতেন বইপত্র-উপন্যাসের কথা, রবীন্দ্রনাথ থেকে শেক্সপিয়র, তুর্গেনেভ। ভারতের স্বাধীনতার সত্তর বছরে তনিকা ঠিক করেন, তাঁর পরিবারের ইতিহাসকে নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরবেন। শেক্সপিয়রের স্মৃতিধন্য গ্লোব থিয়েটারে ‘ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিপেনডেন্স’-এ অভিনীত হচ্ছে তনিকার নাটক ‘লায়ন্স অ্যান্ড টাইগার্স’। বিনয়-বাদল-দীনেশই তিন মুখ্য চরিত্র। নাটকে ফুটে উঠেছে অশান্ত অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে স্নিগ্ধ সংসারচিত্রও। নেহরু, সুভাষ, গাঁধী— এঁরাও আছেন, তবে নেপথ্যচরিত্রে। নাটক শেষ হয় আলিপুর জেলে দীনেশের ফাঁসি দিয়ে। নাটকে ‘লায়ন্স’ হল ব্রিটিশরা, আর ‘টাইগার্স’ ভারতীয়রা। আন্দামানের সেলুলার জেলের এক অফিসার বলেছিলেন, এ সেই জায়গা, যেখানে সিংহেরা বাঘেদের পরাস্ত করেছে। সেই উদ্ধৃতি থেকেই তনিকা নাটকের নামকরণ করেছেন। সেলুলার জেলে বন্দিদের উপর অত্যাচারের ভয়াবহতাও উঠে এসেছে নাটকে। ১০ সেপ্টেম্বর অবধি গ্লোব থিয়েটারে চলবে এই নাটক সহ নানা বাঙালি অনুষ্ঠান।

Advertisement

তথ্যচিত্রে মায়ের স্মৃতি

টেলিভিশনের চ্যানেলে চ্যানেলে তাঁকে নিয়ে দেখানো হচ্ছে অগুনতি তথ্যচিত্র।

এ থেকেই পরিষ্কার, মৃত্যুর এত বছর পরও রাজকুমারী ডায়ানা ব্রিটেনের মানুষের মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে আছেন। সম্প্রতি বিবিসিতে দেখানো হল ‘ডায়ানা: সেভেন ডেজ’ তথ্যচিত্র। রাজকুমারীর মৃত্যুর পরের সাত দিন, আর অসংখ্য মানুষের অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়াই এই ছবির বিষয়। মায়ের মৃত্যু আমূল বদলে দিয়েছিল দুই রাজকুমার উইলিয়ম আর হ্যারির জীবন। উইলিয়মের বয়স তখন পনেরো, হ্যারির বারো। ছবিতে দু’জনেই বলেছেন, মায়ের মৃত্যুর পরের দিনগুলোয় ওঁরা বাধ্য হয়েছিলেন ঘরের কাজ করতে। রাজপরিবার তখন বালমোরাল-এ, একেবারে নিশ্চুপ। বাইরে জনতার ক্রুদ্ধ তর্জন। উইলিয়ম বলেছেন, মা’র মৃত্যু যে এত বিরাট একটা ঘটনা, আমি বুঝতেই পারিনি। আর হ্যারির স্মৃতিতে ভাসে চোখের জল মুছে মুছে ভিজে যাওয়া অগুনতি হাত। ঠাকুমা, রানি এলিজাবেথই সেই দিনগুলোয় ওঁদের আগলে রেখেছিলেন। খবরের কাগজ পর্যন্ত কাছে ঘেঁষতে দিতেন না।

ফুলের জলসায় নীরব

শ্রদ্ধা: কেনসিংটনে ডায়ানা-স্মরণ

রাজকুমারী ডায়ানার ২০-তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেনসিংটন প্যালেসের গেট এখন ফুলে ফুলে ভরা। কুড়ি বছর আগের সেই ৩১ অগস্টও ছিল এক রবিবার, সকালে ঘুম থেকে জেগে ব্রিটেনবাসীরা অভিশপ্ত সেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েছিলেন। আকস্মিক ট্র্যাজেডির ঘোর কাটতে সবাই ফুল, কার্ড আর মোমবাতিতে ভরিয়ে দিয়েছিলেন কেনসিংটন প্যালেসের মূল প্রবেশদ্বার। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল সেই ফুলের জোয়ার, প্রাসাদের চার দিক দেখে মনে হচ্ছিল যেন ফুলের সমুদ্র। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। কুড়ি বছর আগের গ্রীষ্মই যেন ফিরে এসেছে আরও এক বার।

ভেনিসে ভিক্টোরিয়া

ডায়ানা ও তাঁর ট্র্যাজিক মৃত্যু নিয়ে স্টিফেন ফ্রিয়ার্স-এর চলচ্চিত্র ‘দ্য কুইন’ অস্কার জয় করেছিল। অভিনেত্রী হেলেন মিরেন অভিনয় করেছিলেন সেই ছবিতে। পরিচালক স্টিফেন ফ্রিয়ার্স-এর পরের ছবির বিষয়ও এক রানি। মহারানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর ভারতীয় বন্ধু আবদুল করিমের বন্ধুতা নিয়ে বানানো ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’ মুক্তি পাবে অচিরে। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে আজ এই ছবির আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার। এখানেই ফ্রিয়ার্স ভূষিত হবেন জীবনকৃতি সম্মানে। ব্রিটেন জুড়ে এই ছবি নিয়ে সবার এখন খুব উৎসাহ। লন্ডন থেকে ব্রাইটন, রাস্তায় ছুটে চলা বাসের গায়েও ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’-এর ব্যানার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন