লন্ডন ডায়েরি

১৮৪৯-এর অগস্টে চুনার দুর্গ থেকে বাঁদির ছদ্মবেশে পালিয়ে যান জিন্দন। ফেলে গিয়েছিলেন একটা চিরকুট: আমাকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিলে। দেখো, কেমন জাদুবলে বেরিয়ে এসেছি!

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১১:২৭
Share:

বহুমূল্য: মুক্তো খচিত সোনার কানের দুল। ডান দিকে, মহারানি জিন্দন কৌর

লন্ডনে নিলামে রানি জিন্দনের কানের দুল

Advertisement

পঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহের রানি ছিলেন তিনি। ১৮৩৯-এ রণজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর যাতে তাঁর শিশুপুত্র দলীপ সিংহ সিংহাসন পায়, তা নিশ্চিত করেছিলেন মহারানি জিন্দন কৌর। ১৮৪৬ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের পর রানি কারারুদ্ধ হন, দলীপও হন সিংহাসনচ্যুত। রাজকোষ লুট করে কোহিনুর নিয়ে যায় ব্রিটিশরা। ১৮৪৯-এর অগস্টে চুনার দুর্গ থেকে বাঁদির ছদ্মবেশে পালিয়ে যান জিন্দন। ফেলে গিয়েছিলেন একটা চিরকুট: আমাকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিলে। দেখো, কেমন জাদুবলে বেরিয়ে এসেছি! এ সপ্তাহে মহারানির এক জোড়া সোনা আর মুক্তোর বাহারি দুল লন্ডনের বনহ্যামে নিলামে উঠল। ভাবা হয়েছিল দাম উঠবে ২০-৩০ হাজার পাউন্ড, বিক্রি হল ১ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ডে! ব্রিটিশদের কাছে রানি ছিলেন মূর্তিমান সঙ্কট, কারণ তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। পালিয়ে গিয়েছিলেন নেপালে, সেখানে নেপালরাজ তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখেন। দলীপকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, দীক্ষিত করা হয় খ্রিস্টধর্মে। ১৮৬১-তে মা-ছেলের পুনর্মিলন হয়। জিন্দন ইংল্যান্ড যান, ১৮৬৩-তে মৃত্যু হয় তাঁর। শেষ ইচ্ছা অনুসারে পরের বছর তাঁর দেহ ভারতে আনা হয়, বম্বেতে দাহকার্য শেষে গোদাবরীতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভস্ম। ১৯২৪-এ তাঁর পৌত্রী রাজকুমারী বাম্বা সাদারল্যান্ড তাঁর ভস্মাবশেষ রেখে আসেন লাহৌরে রণজিৎ সিংহের সমাধিতে।

Advertisement

ইংল্যান্ডে লাল শাক

বাগান ব্রিটিশদের খুব প্রিয়। রেডিয়ো-টিভিতে বাগান করা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলো সারা দেশে দারুণ জনপ্রিয়। বিবিসি সম্প্রতি ‘ভারতীয় উদ্যান’ নিয়ে এই মরসুমে কিছু অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেছে। জনপ্রিয় ব্রিটিশ টিভি গার্ডেনার ও উপস্থাপক মন্টি ডন ঠিক করেছেন, ব্রিটিশ উদ্যানগুলির উপর দক্ষিণ এশীয় প্রভাব নিয়ে কথা বলবেন। কথা বলবেন গ্লস্টারশায়ারের সেজ়িনকোট হাউস নিয়ে। উনিশ শতকে মুঘল স্থাপত্যরীতিতে এই হাউস তৈরি হয়— মিনার, গম্বুজ, রেলিংয়ে জালির কাজ এর বৈশিষ্ট্য। উদ্যানের দুই পরিকল্পক ক্লিভ ওয়েস্ট ও মনোজ মালডে-র ব্রিটিশ-এশীয় ঐতিহ্য ছাপ ফেলেছে তাঁদের কাজেও। ‘গার্ডনার্স ওয়ার্ল্ড’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা যাবেন ব্ল্যাকবার্ন-এ, এশীয়রা সেখানে মুলো, লাল শাক, চিচিঙ্গা ফলাচ্ছেন। হয়তো এক দিন বাঙালির পাতের মোচা, এঁচড়, পুঁই শাকও মিলবে!

নীলনয়না!

রাজপরিবারে আর এক নবজাতক এসেছে, সারা দেশ অপেক্ষা করছে আগামী মাসে হ্যারি আর মেগানের বিয়ের। প্রচারমাধ্যমের সবটুকু মনোযোগের কেন্দ্রে এখন রাজপরিবারের তরুণ সদস্যরা। সে জন্যেই কি ডাচেস অব কর্নওয়ালকে নিয়ে টিভিতে ‘দ্য রিয়েল ক্যামিলা’ নামে একটা ডকু-ফিচার দেখানো হল? সেখানে যাঁরাই এলেন, ক্যামিলাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। ক্যামিলার বন্ধু, অভিনেত্রী জোয়ানা লামলি ও টিভি-উপস্থাপক জাইলস ব্র্যানড্রেথ বললেন, ও অনবদ্য, দুর্দান্ত এক জন মানুষ! ক্যামিলার স্বামী রাজকুমার চার্লস বললেন, ও পৃথিবীর সেরা শ্রোতা। উপস্থিত এক দর্শক উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ওঁর চোখের মতো এমন সুন্দর নীল চোখ আমি আর দেখিনি!

ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়ন

প্রতিভা: শ্রেয়স সিংহ

ওর বয়সি বেশির ভাগ ছেলে ব্যস্ত ফুটবল খেলতে। কিন্তু ন’বছর বয়সি শ্রেয়স রয়্যাল সিংহ অবসর সময় আর গোটা গরমের ছুটিটা কাটায় দাবার বোর্ডের সামনে, আর ওর চেয়ে অন্তত বছর দশেক বেশি বয়সিদের হারিয়েও দেয়! স্কুলপড়ুয়া ছেলেটিকে বলা হচ্ছে এই প্রজন্মের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়। ব্রিটেনের প্রথম আনুষ্ঠানিক দাবা চ্যাম্পিয়ন হবে সে, বাজির দর এমনই। কিন্তু সত্যি এটাই, আর পাঁচ মাস পর শ্রেয়সের বাবা জিতেন্দ্র সিংহের ‘ওয়ার্ক ভিসা’ শেষ হয়ে যাবে, ওঁকে ভারতে ফিরে আসতে হবে। জিতেন্দ্র একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত, ২০১২ সালে স্ত্রী অঞ্জুকে নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে ইংল্যান্ডে আসেন। দেশের অফিসে লম্বা ছুটির আবেদন জানিয়েছেন, যুক্তি: তাঁর ছেলে হতে চলেছে এ দেশের জাতীয় সম্পদ। ওঁর দরখাস্ত জোরদার হয়েছে শ্রেয়সের প্রশিক্ষক জুলিয়ান সিম্পোল আর ইংলিশ চেস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ডমিনিক লসন-এর সুপারিশে, ওঁরাও চান শ্রেয়স ইংল্যান্ডে থাকুক। জুলিয়ান লিখেছেন, ‘‘এই শিশুটির মতো প্রতিভাবান আর কাউকে আমি দেখিনি। ভবিষ্যতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা আছে ওর। আমরা চাই ব্রিটেনের হয়ে ও সেই সম্মান আনুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন