লন্ডন ডায়েরি

লন্ডনে ছিলেন ১৮৭৬ অবধি, ভাই থিয়ো-কে চিঠিতে লিখেছেন, লন্ডনকে ভালবাসেন তিনি। আর্ট গ্যালারি, পার্কগুলোয় ঘুরতেন, দেখতেন দারিদ্র ও বৈভব দুইই। উৎসাহী ছিলেন জনজীবন নিয়ে, বাড়িতে পাঠানো তাঁর পোস্টকার্ডগুলো লন্ডনের সাধারণ মানুষের স্কেচে ভরা।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share:

লন্ডনকে ভালবাসি, লিখেছিলেন ভ্যান গঘ

Advertisement

১৮৭৩ সালে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে প্রথম লন্ডনে আসেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। এক গ্যালারিতে আর্ট ডিলারের কাজে প্রশিক্ষণ নিতেন, দক্ষিণ লন্ডনের বাড়ি থেকে রোজ টেমসের ও পারে অফিসে যেতেন হেঁটে, মাথায় টপ হ্যাট। ফিরতি পথে সন্ধেয় প্রায়ই টেমসের পাড়ে ছবি আঁকতেন। লন্ডনে ছিলেন ১৮৭৬ অবধি, ভাই থিয়ো-কে চিঠিতে লিখেছেন, লন্ডনকে ভালবাসেন তিনি। আর্ট গ্যালারি, পার্কগুলোয় ঘুরতেন, দেখতেন দারিদ্র ও বৈভব দুইই। উৎসাহী ছিলেন জনজীবন নিয়ে, বাড়িতে পাঠানো তাঁর পোস্টকার্ডগুলো লন্ডনের সাধারণ মানুষের স্কেচে ভরা। পড়তেন চার্লস ডিকেন্স, জর্জ এলিয়টের বই, প্রিয় ছিল কনস্টেবল আর টার্নারের ছবি। ‘দ্য গ্রাফিক’ ও ‘লন্ডন নিউজ়’-এ ছাপা স্কেচগুলো মন দিয়ে দেখতেন, ওগুলোকে বলতেন ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’। ২০০০-এর উপর এমন প্রিন্ট তাঁর সংগ্রহে ছিল, অনেকগুলো স্কেচই পরে তাঁর আঁকা ছবির মডেল হয়ে ওঠে। ফ্রান্সে মানসিক সংশোধনাগারে থাকাকালীন সেগুলোই ছিল তাঁর প্রেরণা। টেট ব্রিটেন-এ ‘ভ্যান গঘ ও ব্রিটেন’ প্রদর্শনীতে দেখা গেল শিল্পীর ৪৫টি ছবি। আছে তাঁর বিখ্যাত আত্মপ্রতিকৃতি, ‘স্টারি নাইট ওভার দ্য রোন’, ‘সানফ্লাওয়ার্স’, আর লন্ডন নিয়ে আঁকা তাঁর একমাত্র ছবি ‘দ্য প্রিজ়ন কোর্টইয়ার্ড’ (১৮৯০)। নিউগেট কারাগারে বন্দিদের ব্যায়াম করার দৃশ্য ১৮৭২ সালে এনগ্রেভিংয়ে ধরেছিলেন শিল্পী গুস্তাভ ডোর, সেটিকে ভিত্তি করেই তাঁর বিখ্যাত হলদে রঙে ছবিটি এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ।

ঐতিহাসিক: গুস্তাভ ডোর-এর এনগ্রেভিং। ডান দিকে, ১৮৯০-এ ভ্যান গঘের আঁকা ছবি

Advertisement

চুল দেব, বই নয়

ব্রিটেনের মিউজ়িয়ামগুলোকে প্রায়ই নানান দেশ থেকে শুনতে হয়, আমাদের জিনিস ফেরত দাও। গ্রিস যেমন কয়েক দশক ধরে ফেরত চাইছে পার্থেনন-এর ‘এলগিন মার্বলস’। ‘কোহিনুর ফিরিয়ে দাও’-ও আজকের দাবি নয়। কিছুই ফেরেনি। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল আর্মি মিউজ়িয়াম অবশ্য ফিরিয়ে দিল উনিশ শতকে ইথিয়োপিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় থিয়োডর-এর চুলের দু’টি গুচ্ছ। ১৮৬৮-র এপ্রিলে যুদ্ধে থিয়োডরের সেনাকে পরাজিত করার পর সম্রাটের ওই চুল নিয়েছিল ব্রিটিশরা। ইথিয়োপিয়া এই স্মারক ফেরত চেয়েছিল, সম্রাটের দেহাবশেষের সঙ্গে সমাধিস্থ করবে বলে। লন্ডনে প্রত্যর্পণ-অনুষ্ঠানে নাচলেন, উলু দিলেন একশোরও বেশি ইথিয়োপিয়ান বংশোদ্ভূত মানুষ। আর্মি মিউজ়িয়াম অবশ্য বলেছে, চুল ফেরত দিলেও তাদের সংগ্রহে থাকা ইথিয়োপিয়ান ধর্মগ্রন্থগুলো ফেরত দেবে না। উইন্ডসরের রয়াল লাইব্রেরি আর অক্সফোর্ডের বোডলেয়ান লাইব্রেরিতে নাকি প্রায় ১৫০০ জিনিসপত্র আছে, বেশির ভাগই ধর্মগ্রন্থ।

জালিয়ানওয়ালাবাগ

১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ। ব্রিটেনে এমপিরা বলছেন, ব্রিটিশ সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ করুক। হাউস অব লর্ডস-এ এক বিতর্কে লর্ড কর্ন বিলিমোরিয়া জানালেন, এ বার সত্যিই তা হতে পারে। চ্যানেল ফোর দেখাচ্ছে তথ্যচিত্র, উপস্থাপনায় ব্রিটিশ শিখ লেখক সতনাম সাঙ্ঘেরা। জালিয়ানওয়ালাবাগের পশ্চাৎপট ফিরে দেখবেন সতনাম, সেই ঘটনায় যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁদের উত্তরসূরিদের সঙ্গে, এবং যারা দায়ী ছিল তাদের পরিজনদের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি।

‘কারি’ কারে কয়

প্রাচীন: সপ্তদশ শতকের রান্নার বই

১৬৮৮ সালের একটা রান্নার বই, যাতে নাকি ব্রিটেনে ‘কারি’ তৈরির প্রাচীনতম রেসিপি আছে— নিলামে উঠছে। বইয়ে আছে যক্ষ্মা, প্লেগ বাগে আনার ঘরোয়া টোটকাও— ঘোড়ার মল, শামুক-জল! বইয়ের দর ৬০০০ পাউন্ড উঠবে, মনে করা হচ্ছে। একটা পাতায় কারি তৈরির সচিত্র বর্ণনা, রাঁধুনিকে বলা হচ্ছে খরগোশ, মুরগির মাংস বা মাছ ব্যবহার করতে। এই রেসিপি ঠিক কবে বইয়ে যোগ করা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়, নিলাম সংস্থা বলছে সম্ভবত ১৭৫০-এর দিকে। কারির রেসিপি প্রথম পাওয়া যায় ১৭৪৭-এ, প্রকাশ করেছিলেন লন্ডনের রন্ধনশিল্পী হানা গ্লাস। সেখানে বলা আছে, মাংসটা বাদামি না হওয়া পর্যন্ত মাখনে ভাজতে হবে, তার পর যোগ করতে হবে কারি মশলা। মিসেস সারা জ্যাকসন নামে এক মহিলার হাত ধরে ১৬৮৮ সালে শুরু হয় এই বইয়ের পথ চলা। তার পর সে ঘুরেছে বহু ঠিকানা, বহু প্রজন্ম। একশো বছর ধরে যোগ হয়েছে আরও অনেক কিছু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন