ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের বিপুল জয় তাদের কতটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে, কোনও রাখঢাক না রেখেই খুব দ্রুত তার প্রমাণ দিল বিজেপি। বহুত্ববাদের চর্চার ঐতিহ্যকে পিছনে সরিয়ে, সহিষ্ণুতার প্রকাশ্য আভরণকে বর্জন করে কট্টরবাদের পথেই ফুল বিছিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। কট্টরপন্থী যোগী আদিত্যনাথকে লখনউয়ের সিংহাসনে বসিয়ে গোটা দেশে বার্তাটা স্পষ্ট করে দিল বিজেপি।
যোগী আদিত্যনাথ মানে বিতর্ক, অসহিষ্ণুতা ও মুসলিমবিদ্বেষ— এই বক্তব্যটি তিনি নিজেও কোনও দিন খারিজ করেননি। বস্তুত সযত্নে লালন করে এসেছেন এই ভাবমূর্তিটি কয়েক দশক ধরে। এমনটা নয় যে, সম্প্রতি তিনি পাল্টেছেন। এ বারের ভোটেও তাঁর কট্টর বক্তব্যের ঘোষণার ডেসিবেল বরং বাড়িয়েই গিয়েছেন এক পর্যায় থেকে আর এক পর্যায়ে। তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়ে পুরস্কার দিল দল।
এই পুরস্কারই যদি দেওয়ার ছিল, তবে শেষ মুহূর্তের এই গৈরিক চমক কেন? কেন পূর্ব ঘোষণা ছিল না? কেন ভোটে গেল না বিজেপি এই নামকে সামনে রেখেই? কারণ সেখানে আশঙ্কা ছিল। বহু ধর্ম বহু মত বহু জাতি বহু সম্প্রদায়ের বৃহত্ এই রাজ্য যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়? অতএব ঝোলাটি ঢাকা রাখার দরকার ছিল তখন। তখন ছিল উন্নয়ন অথবা নোটবন্দির নামে আমিরির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক বাতাবরণ।
ইঙ্গিত যে একেবারে ছিল না, তা কিন্তু নয়। ৪০৩টি আসনের একটিতেও মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করায়নি যে দল, ভোটের মুখে আদিত্যনাথরা রামমন্দির নির্মাণের সদম্ভ ঘোষণা করছিলেন দেখেও চুপ থেকেছিল যে দল, বিপুল ভাবে ক্ষমতায় এসে যোগীর মতো কট্টরপন্থীকেই তারা যে বেছে নেবে, এখন বোঝা যাচ্ছে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
এই বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট। বহুত্ববাদী এই দেশের মেরুদণ্ডে সেই বার্তায় হিমস্রোত এখন। এই দেশের মেরুদণ্ড অবশ্য অন্য ধাতুতে তৈরি। ইতিহাস সাক্ষী, বার বার ঋজুতার পরিচয় দিয়েছে সে। সেই দেশ, তার মেরুদণ্ড, তার এ যাবত্ কালের সাধনা, ভাবনা এখন নতুন পরীক্ষার সামনে।
কোনও সংশয় যেন না থাকে, জয় হবে শেষ পর্যন্ত মানুষেরই। যে মানুষের কারবারে মেরুকরণের মুদ্রা অচল।