সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে অধ্যক্ষকে শাসাচ্ছেন মনোজ (চিহ্নিত)।
তা হলে সবই শুধু কথার কথা? শুধু বার্তাই সার? কাজের কাজ হবে না কিছুতেই?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার শৃঙ্খলার বার্তা দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই, তৃণমূল নেত্রী হিসেবেও। নবান্ন থেকে হোক বা কালীঘাট থেকে, ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ সমাবেশ থেকে হোক বা ২৬ অগস্টের ছাত্র সমাবেশের মঞ্চ থেকে— বার বার প্রশাসনকে রং-নিরপেক্ষ হওয়ার বার্তা দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে, শোনা গিয়েছে দলকে শৃঙ্খলার বার্তা দিতে। কিন্তু সে বার্তার ফলশ্রুতি এই? শান্তিপুরের কলেজে পরিচালন সমিতির দখল নেওয়ার তাগিদ এতই দুর্মর হয়ে উঠল যে নেত্রীর সব নির্দেশ উপেক্ষা করে কলেজে ঢুকে অধ্যাপকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকানো হল! কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের পদার্পণ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতে হল! আর শিক্ষাঙ্গনের এমন ভয়ঙ্কর ছবিটা দেখে শিক্ষা মন্ত্রী শুধু বললেন, তৃণমূলের কেউ এতে জড়িত নন!
শিক্ষা মন্ত্রীকেই তা হলে প্রশ্নটা করা যাক প্রথমে। শিক্ষাঙ্গনে যে কলুষ, তাতে তৃণমূলের কেউ জড়িত যাতে না থাকে, শুধু সেটুকু নিশ্চিত করাই কি আপনার দায়িত্ব? গোলমালে শাসক পক্ষের কেউ জড়িত না থাকলেই আপনার আর কোনও দায় থাকে না? আপনি শুধু তৃণমূলেরই শিক্ষা মন্ত্রী? পশ্চিমবঙ্গের নন?
গাঁধী মূর্তির পাদদেশ থেকে দিন কয়েক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথাগুলো বললেন, বঙ্গের রাজনৈতিক কোলাহলের পরিসরে তার অনুরণন এখনও মিলিয়ে যায়নি পুরোপুরি। অনুগামী ছাত্র-যুবর উদ্দেশে নেত্রী বলেছিলেন, শিক্ষকরা সম্পদ, তাঁদের সম্মান করতে হবে, সুসম্পর্ক রাখতে হবে। শিক্ষক দিবস পালনের জন্য কলেজে কলেজে বিশেষ তহবিল পাঠানোর ঘোষণাও ওই মঞ্চটা থেকেই করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নেত্রীর সেই কথাগুলোর অর্থ কি তা হলে বুঝতেই পারেননি অনুগামীরা? এই প্রশ্নটাও সঙ্গত ভাবেই উঠছে। শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশটা কেমন হওয়া উচিত, খোদ দলনেত্রীই খুব কাটা কাটা শব্দে তা অনুগামীদের বুঝিয়ে দেওয়ার পরও যদি কলেজে কলেজে রাজনৈতিক আবর্জনা ছড়ানোর পরম্পরায় ছেদ না পড়ে এবং যদি সিসিটিভির ছবিতে দেখা যায় যে তৃণমূলের কর্মীরাই সে আবর্জনা বয়ে আনছেন, তা হলে এ প্রশ্নটা উঠবেই।
প্রশ্ন এ ভাবেই অনেক। কিন্তু উত্তর খুঁজে পাওয়াটা বেশ শক্ত। কারণ কোথাও একটা গলদ রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী হিসেবেও। রূপায়ণটা করতে হবে সরকারকে। রূপায়ণটা করতে হবে দলের অন্য ‘দায়িত্বশীল’ ব্যক্তিবর্গকে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য শুনে মনে হয়, নিজের দায়িত্বের পরিসীমা কতটা, তা বেশ গুলিয়েই ফেলেছেন তিনি। আর দলের কর্মীরা যে ভাবে আবর্জনার উৎসবে মত্ত তা দেখে মনে হয়, সুব্রত বক্সি, মুকুল রায়রাও ভুলে গিয়েছেন, নেত্রীর বার্তাকে দলের প্রতিটি স্তরের কাছে মূল শিক্ষনীয় নীতি হিসেবে তুলে ধরার দায়িত্বটা তাঁদেরই।
নৌকার হাল এক জনই ধরেন। কিন্তু নৌকা তখনই গতি পায়, যখন অন্যেরাও কাণ্ডারীর দেখানো দিশাতেই দাঁড় বাইতে শুরু করেন। সুব্রত বক্সি, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে এ সত্য যত দিন না উপলব্ধি করছেন, তত দিন বার বার কলঙ্ক ছিটকে আসবে সাদা ক্যানভাসটার দিকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বার কিন্তু সতর্ক হতে হবে। কারণ দায় এবং দায়িত্বটা শেষ পর্যন্ত তাঁরই।