নুন আনিতে

উর্জিত পটেলের উত্তরসূরি হিসাবে শক্তিকান্ত দাসের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে বসা ইস্তক সংশয় ছিল, অতঃপর ব্যাঙ্ক কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিনির্দেশে চলিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
Share:

—ছবি পিটিআই।

কোথাকার তরবারি কোথায় রাখা হইয়াছে, এই কবি-প্রশ্ন লইয়া অর্থনীতির ভাবিত হইবার প্রয়োজন নাই। কিন্তু, কোথাকার টাকা কোথায় গেল, তাহার উত্তর সন্ধান আবশ্যক। আপাতত, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা কেন্দ্রীয় কোষাগারে যাইতেছে। ব্যাঙ্ক ২৮,০০০ কোটি টাকার অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত করিয়াছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উদ্বৃত্ত টাকা কেন্দ্রীয় সরকার পাইবে, আপাতদৃষ্টিতে এই স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত লইয়া একাধিক প্রশ্ন রহিয়াছে। প্রথম প্রশ্নটি যতখানি অর্থনীতির, তাহার অধিক প্রশাসনিক স্বাধিকারের। উর্জিত পটেলের উত্তরসূরি হিসাবে শক্তিকান্ত দাসের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে বসা ইস্তক সংশয় ছিল, অতঃপর ব্যাঙ্ক কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিনির্দেশে চলিবে। অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হস্তান্তরের সিদ্ধান্তটি নিতান্তই ব্যাঙ্কের, না কি নয়াদিল্লির চাপে এই ব্যবস্থা, সেই প্রশ্নটি থাকিতেছেই। দুর্ভাগ্যজনক, কারণ দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ককে লইয়া এ হেন সংশয় অর্থনীতির স্বাস্থ্যের পক্ষে ইতিবাচক নহে। দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্কের আর্থিক বর্ষের শেষে, বোর্ডের বৈঠকের পর লভ্যাংশ হস্তান্তর করিবার রীতি। অকারণ রীতি নহে। অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কের মোট কত আয় হইল, ব্যয়ই বা কত আর ক্ষতির পরিমাণ কী, সব হিসাব কষিয়া তবেই লাভের অঙ্কটি নির্ধারিত হয়। তাহা জানিবার পরই সরকারকে কতখানি লভ্যাংশ দেওয়া হইবে, সেই সিদ্ধান্ত করিবার কথা। গত বৎসর ব্যাঙ্ক রীতির অন্যথা করিয়াছিল, দশ হাজার কোটি টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়াছিল সরকারকে। এই বৎসর অঙ্কটি প্রায় তিন গুণ হইয়াছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যালান্স শিটে এই হস্তান্তরের কী প্রভাব পড়িবে, তাহা দেখিবার।

Advertisement

কিন্তু, বৃহত্তর প্রশ্ন হইল, হঠাৎ এত টাকার প্রয়োজন পড়িতেছে কেন? উত্তরটি সহজ— রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখিবার অন্য কোনও পন্থা কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আপাতত নাই। রাজস্বের পরিমাণ পূর্বাভাস অনুসারে বাড়িতেছে না, পণ্য ও পরিষেবা করের আদায়ের পরিমাণও আশানুরূপ নহে। অতএব, ভোটের বৎসরে যে ভাবেই হউক টাকার সংস্থান করিবার তাগিদটি স্পষ্ট। কিন্তু, তাহাতে লাভ হইবে কি? এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রথম প্রশ্নই উঠিবে সরকারের রাজস্ব পরিস্থিতি বিষয়ে। বাজারের বিশ্বাস নষ্ট করিবার ফল ভাল হয় না। তুরস্কে এই অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হস্তান্তরের প্রতিক্রিয়াতেই বাজারে ধস নামিয়াছিল, সরকার সেই কথা স্মরণে রাখিতে পারে। ভারতে তেমন কিছু ঘটে নাই, তাহার কারণ, এই গোত্রের হস্তান্তরের সম্ভাবনাটি বাজার আঁচ করিয়াছিল। কিন্তু, সেই পূর্বানুমান সম্ভবত কোনও ইতিবাচক কারণে নহে— রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা বিষয়ে যে সংশয় তৈরি হইয়াছে, এই পূর্বানুমান তাহারই ফল। অনুমান করা চলে, সরকার এই কথাগুলি লইয়া তেমন ভাবিত নহে। তাহারা টাকার জোগাড়ে মরিয়া। তাহার আরও একটি সাম্প্রতিক নিদর্শন আছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানাইয়াছে, কনট্রিবিউটরি পেনশন, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ নিয়মিত সরকারের ঘরে টাকা জমা করিয়া অবসরকালীন পেনশনের যে ব্যবস্থা করে, তাহাতে হাত পড়িতেছে। পেনশনপ্রাপক ও তাঁহার স্ত্রী বা স্বামীর মৃত্যু হইলে তহবিলের টাকাটি সরকার আত্মসাৎ করিবে বলিয়া জানাইয়াছে। সিদ্ধান্তটিকে অভূতপূর্ব হয়তো বলা যাইবে না, কিন্তু ভোটের মুখে টাকার অভাবের এ হেন বিজ্ঞাপন মানুষকে আশ্বস্ত করিবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন