Narendra Modi

হিন্দুত্ব প্রচারের পাশাপাশি বিজেপির মূল লক্ষ্য রাহুল

মেক ইন্ডিয়ার স্বপ্নের বদলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষই ভারতের ঐতিহ্য? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষালমেক ইন্ডিয়ার স্বপ্নের বদলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষই ভারতের ঐতিহ্য? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০১
Share:

কর্নাটকের এক মন্দিরে রাহুল। ফাইল চিত্র।

সন্ত্রাসবাদী তো সন্ত্রাস করবে। এটাই তো সন্ত্রাসবাদীর কাজ। কিন্তু সন্ত্রাসটা বড় কথা নয়। মূল প্রশ্ন হল, সন্ত্রাসবাদী হিন্দু না মুসলমান? বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ হেনেছেন যে, রাহুল গাঁধী আইএস-লস্কর জঙ্গিদের সে ভাবে দোষী সাব্যস্ত করেন না। এমনকী, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাহুলের কথোপকথনের গোপন ‘কেবল নোট’ ফাঁস করে বিজেপি বলেছে, মার্কিন কর্তাদের রাহুল জানিয়েছিলেন, হিন্দু আতঙ্কবাদীরা বেশি বিপজ্জনক। এই ঘটনা হল সেই সময়ের যখন মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী, যখন গোটা দেশ মুম্বই বিস্ফোরণ নিয়ে উথালপাতাল। এ দিকে, অসীমানন্দ অ্যান্ড কোং-কে যে ভাবে রেহাই দিয়েছে আদালত তার পরই বিজেপির এই আক্রমণ। অতএব, সংখ্যালঘু ভোটের জন্য জঙ্গি মুসলমান হলেও তাকে প্রকাশ্যে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলের ভুল রাজনীতি আর একই ভাবে বিজেপি হিন্দু সন্ত্রাসবাদের অস্তিত্বই মানতে রাজি নয়।

Advertisement

মধ্যপ্রদেশে অসীমানন্দদের মতো ব্যক্তিরা, যাঁরা আরএসএস তথা সঙ্ঘের দীর্ঘ দিনের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও যখন আগ্রাসনের পথে গেলেন, তখন লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে এক বার বিষয়টি নিয়ে আমার কথা হয়। অসীমানন্দ সম্পর্কে আডবাণী বলেছিলেন, মার্কসবাদীরা যেমন সংসদীয় পথে থাকলেও তাদেরই এক বিক্ষুব্ধ অংশ সশস্ত্র মাওবাদী হয়ে যায় ঠিক সে ভাবে যে ব্যক্তিরা শান্তিপূর্ণ পথে হাঁটতে হাঁটতে হতাশ হয়ে সন্ত্রাসবাদী হয়ে ওঠে তারা বিজেপির কেউ নয়। আসলে তারা বিজেপির ক্ষতি করে।

আপাত ভাবে তুলনাটা কী রকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তবু বলা যায় মাওবাদীরা যেমন সংসদীয় বামপন্থীদের লোকসান করে, ঠিক সে ভাবে নাথুরাম গডসে থেকে অসীমানন্দ, এঁরাও ক্ষতি করেছেন জনসঙ্ঘ, বিজেপি এবং আরএসএসের।

Advertisement

২০১৪ তে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছিলেন মোদী। কিন্তু, লোকসভা ভোটের মাত্র এক বছর আগে ছবিটা বেশ হতাশাব্যাঞ্জক।

তবে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে শুধু হিন্দুত্ববাদী গোঁড়া ভোটব্যাঙ্ক নয়, বহু উদার ভারতীয় নাগরিকের কাছেও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন হতে আর মাত্র এক বছর বাকি। এ অবস্থায় কিন্তু মূল অর্থনৈতিক চালচিত্র যথেষ্ট হতাশাব্যাঞ্জক। কর্মসংস্থান নেই। বেকারি বাড়ছে। আর্থিক বৃদ্ধি হতাশাজনক। এ অবস্থায় তাই বিজেপি রণকৌশল বদলে দিয়েছে। এখন মোদীর রণকৌশল হল ‘টার্গেট রাহুল গাঁধী’। রাহুলকে লক্ষ করে এগোচ্ছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: দলিত মন জয়ে ছত্তীসগঢ়ে রাহুল

এমন ভাবে আক্রমণ চলছে যাতে বলা হচ্ছে রাহুল হলেন হিন্দুবিরোধী। কৌশল হল, এ সমাজকে হিন্দু ও মুসলমান, এ ভাবে মেরুকরণের কৌশল নেওয়া। তার মানে শেষ পর্যন্ত আবার ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তে না পড়তেই হিন্দুত্ব। বিজেপি একে বলে ‘ব্যাক টু বেসিক’। বিজেপির নিজস্ব কোর ইস্যু হিন্দুত্ব। কর্নাটক নির্বাচনের মুখে যখন রাহুল গাঁধী সে রাজ্যে একের পর এক মন্দিরে ঘুরছেন, নিজেকে হিন্দু হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরছেন, তখনই বিজেপি আজ প্রচার অভিযান করে জানাচ্ছে, রাহুল হলেন হিন্দুবিরোধী নেতা। বিজেপির উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট।

এখানে শাহি দরবারে প্রশ্ন একটাই। এটাই কি আমাদের আজকের দিনের অগ্রাধিকার? ডিজিটাল ভারত, মেক ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ তার বদলে সেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষই ভারতের ঐতিহ্য?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন