সম্পাদকীয় ২

নীতির নমুনা

প্লেগ ও ম্যালেরিয়া নিবারণের কাজে, পোলিয়ো টিকা প্রদানের উদ্যোগে কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর ইতিপূর্বে বারবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব ও সাধারণ মানুষের সহায়তা প্রার্থনা করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share:

সাফাইকর্মীর কাজের গুরুত্ব সর্বাধিক, তাহার পর দার্শনিক, শিল্পী বা রাজনীতিক। রোনাল্ড রস-এর এই মূল্যবান কথাটি এই রাজ্যের পুরকর্তারা ভুলিয়াছেন। তাঁহারা রাজনীতি ও সংস্কৃতির চর্চায় ব্যস্ত। তাই ডেঙ্গি হইতে বাঁচিতে নাগরিকেরাই মশকনিধনে নামিলেন। বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত বাগুইআটি অঞ্চলের কয়েকটি ওয়ার্ডে বাসিন্দারা পথে নামিয়াছেন। ওই এলাকায় ডেঙ্গি বাড়ি বাড়ি ছড়াইয়া এক চরম বিপর্যয় তৈরি করিয়াছে। তাহাকে অবজ্ঞা করিতেছে পুরসভা। মশা মারিতে উদ্যোগী হইবার জন্য বাসিন্দারা বারংবার অনুরোধ করিলেও তাঁহারা সাড়া দেন নাই। অতএব সাফাইকর্মীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজটির হাল ধরিতে হইয়াছে নাগরিকদের। তাঁহারাই তেল ছড়াইতেছেন, ব্লিচিং ঢালিতেছেন, বাড়ি বাড়ি সতর্কবার্তা প্রচার করিতেছেন। পশ্চাত হইতে তাহাদের কীটনাশক তেল, পাউডার জুগাইতেছে পুরসভা। যেন ইহাই তাহার কাজ। অথচ পুরসূত্রেই খবর, কেবল বিধাননগর পুরসভা এলাকায় অন্তত ষা়ট জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, আট জনের মৃত্যু হইয়াছে, জ্বরে ভুগিতেছেন আটশো মানুষ।

Advertisement

প্লেগ ও ম্যালেরিয়া নিবারণের কাজে, পোলিয়ো টিকা প্রদানের উদ্যোগে কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর ইতিপূর্বে বারবার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব ও সাধারণ মানুষের সহায়তা প্রার্থনা করিয়াছে। কলিকাতার মানুষ কখনওই পুরকর্তাদের নিরাশ করেন নাই। স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে পুরবাসীর যোগদান নিশ্চিত করিয়াছে নানা নাগরিক সংগঠন। এ কথা ঠিকই যে, পুরসভার তরফে প্রচার করিলেই বাসিন্দারা তৎপর হইয়া ওঠেন না, বরং জনস্বাস্থ্য লইয়া কড়াকড়িকে সন্দেহের চক্ষে দেখিয়া থাকেন। কিন্তু কী উপায়ে তাঁহাদের আস্থা অর্জন করা যাইতে পারে, তাহার নানা সফল দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। ব্রিটিশ রাজত্বেও প্লেগের টিকা এড়াইতে মানুষ গৃহত্যাগ করিত, চৌবাচ্চার জল খালি করিতে বলিলে ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিত, কিন্তু তৎসত্ত্বেও গুটিবসন্ত এবং ম্যালেরিয়া নিবারণের কাজ যথেষ্ট সাফল্য পাইয়াছিল। আজ সেই সকল দৃষ্টান্ত সম্মুখে রাখিয়া কেন কৌশল স্থির করা হইবে না? কেন ব্যর্থতার দায় নাগরিকের উপর চাপাইয়া নিষ্ক্রিয় থাকিবেন পুরকর্তারা, তাঁহাদের যোগদান নিশ্চিত করিতে চেষ্টা করিবেন না?

বস্তুত মশা নিয়ন্ত্রণে পাড়ার ক্লাবগুলির যোগদান দাবি করিবার অনেক বেশি অধিকার এখন সরকারের আছে। কারণ সরকার তাহাদের অনুদান দিয়া থাকে। এখনও অবধি বারো হাজারেরও অধিক ক্লাব দুই লক্ষ টাকা হইতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অবধি অনুদান পাইয়াছে। এই খাতে রাজস্ব হইতে সাড়ে তিনশো কোটি টাকারও অধিক খরচ হইয়াছে। প্রধানত খেলাধুলার জন্য এই অনুদান, যদিও কেন্দ্রীয় অডিট রিপোর্ট বলিতেছে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থই ক্রীড়া খাতে ব্যয় হইবার প্রমাণ মেলে নাই। সেই ক্ষতিও মানা যাইত, যদি অন্তত আপৎকালে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিতে যোগদান করিতেন ক্লাবকর্তারা। শিয়রে শমন বুঝিয়াও সরকার তাঁহাদের ডাকিলেন না, তাঁহারাও জনসাধারণের টাকা অনুদান হিসাবে পাইয়াও মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াইলেন না। রাজনৈতিক দল হইতে পাড়ার ক্লাব, কিছুই বিপন্ন নাগরিকের পাশে নাই। অগত্যা ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ নীতিই বাসিন্দাদের ভরসা। বাগুইআটি তাহারই ছবি দেখিল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন