Narendra Modi

প্রদর্শনীর প্রস্তুতি

কথাটি উঠিতেছে এই জন্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত ভারতের সম্পর্ক আপাতত রীতিমতো শীতল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৫৯
Share:

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারংবার দাবি করেন, তাঁহাদের পরস্পরের মধ্যে খুবই ভাব। সেই ভাব কতখানি গভীর, কতখানি আন্তরিক, এই সব বিষয়ে কেহ সংশয় প্রকাশ করিতেই পারেন, বিশেষ করিয়া উভয় নেতাই যখন রাজনীতির ধাঁচে কূটনীতি করিতে পারদর্শী। তবে একটি বিষয়ে উভয়ের সাদৃশ্য প্রকট— জনপ্রিয় হইবার, জনপ্রিয়তা প্রদর্শন করিবার আকাঙ্ক্ষা। কে কাহার উপর দিয়া যান, তাহাই সেখানে প্রশ্ন। যখন ট্রাম্প খুশি হইয়া বলেন যে তাঁহাকে অভ্যর্থনা জানাইতে আমদাবাদে ‘সাত মিলিয়ন’ মানুষের জড়ো হইবার কথা, ভ্রুকুঞ্চিত করিয়া ভাবিতে হয় কী ভাবে তাহা সম্ভব, সত্তর লক্ষ তো ওই নগরের মোট জনসংখ্যারই প্রায় আশি শতাংশ। তবে সংখ্যাটি অবাস্তব শোনাইলেও প্রতীতি হয় যে, সেই দিন নিজের শহরের রাস্তায় ও স্টেডিয়ামে প্রাণপণ মানবপ্লাবন বহাইয়া দিবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। হাজার হউক, মার্কিন দেশে ‘হাউডি মোদী’র বিপুল সাফল্যের যোগ্য উত্তর তো তাঁহাকে দিতে হইবে: ট্রাম্পকে বেশ মনে রাখিবার মতো আতিথ্য দেখাইতে হইবে। সব মিলাইয়া দুই প্রদর্শন-প্রবর রাষ্ট্রনেতা যে পরস্পরের দিকে তাকাইয়া আছেন এই সফরের একটি সাফল্যমণ্ডিত ছবি নিজের দেশের সমাজের নিকট তুলিয়া ধরিবার জন্য, তাহা স্পষ্ট। কথা হইল, মানুষের সংখ্যা ছাড়া আর কী সেই ছবির মধ্যে থাকিতে পারে?

Advertisement

কথাটি উঠিতেছে এই জন্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত ভারতের সম্পর্ক আপাতত রীতিমতো শীতল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই যথেষ্ট স্পষ্ট করিয়া তাহা বলিয়া দিয়াছেন। ভারতের সহিত সম্পর্কে নানা বাধা থাকা সত্ত্বেও, এবং ভারত তত কিছু আতিথেয়তা না দেখাইতে পারিলেও, তিনি মোদীকে বিশেষ পছন্দ করেন— এমন একটি কথা আগেভাগেই বলিয়া দিবার মধ্যে ট্রাম্প একটি চালও চালিয়াছেন। সফরশেষে খালি হাতে ফিরিতে হইলেও যাহাতে তাঁহার মুখরক্ষা হয়, সেই দিকে তাকাইয়া এই চাল। ইরান কিংবা পরমাণু-নীতি, কোনও দিক দিয়াই ভারত মার্কিন স্বার্থের পছন্দসই অবস্থানে আসিবে, এমন আশা নাই। তদুপরি অর্থনৈতিক বাজারের দিক দিয়া ভারতের মান এখন ক্রমশ এত দ্রুত পড়িতেছে যে বাজার হিসাবেও ভারতের দিক হইতে তেমন কিছু দিতে পারিবার আশা নাই। বাণিজ্যশুল্ক কমাইবার মৌখিক প্রতিশ্রুতিটিও ভারত রক্ষা করিতে পারিবে কি না, বিষম সন্দেহ। সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্য সচিব তাঁহার প্রস্তাবিত ভারত সফর বাতিল করিয়াছেন— সেই সফরে কিছুই পাইবার বা ঘটিবার সম্ভাবনা নাই দেখিয়া। এই যদি ট্রাম্পের এ বারের সফরের সম্ভাব্য স্কোরকার্ড হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখরক্ষা হওয়া আরও কঠিন। বাণিজ্য-সম্পর্কিত সম্পর্ক উন্নত না হইলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের হাল ফিরিবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন দেশের কাছে ভারত তাহার উন্নয়নশীল তকমাটিও হারাইয়াছে। ইহা বিরাট মাপের ক্ষতি— কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক, দুই অর্থেই।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দুই দেশের সম্পর্কে যে গতি ও আশাময়তা আনিতে পারিয়াছিলেন, তাহা সুতরাং এক বিগত ইতিহাস। এই নিম্নমুখী সম্পর্কের জন্য বিশ্ব-পরিস্থিতি যতটা না দায়ী, তদপেক্ষা অনেক বেশি দায়ী দুই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কক্ষপথ। ক্রমবর্ধমান রক্ষণশীলতার চক্রে আবর্তিত দুইটি দেশই এখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বিরোধিতায় জর্জরিত, বৃহত্তর ভূমিকা পালন করিবার ক্ষমতা তাহাদের ক্রমশ হ্রাসমাণ। এমন একটি সময়ে ট্রাম্প-সফরের উজ্জ্বল দিক একটিই: সফরটি নিজেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আসিলেন, সফর করিলেন, কিছু কথোপকথন ঘটিল— অর্থাৎ সম্পর্ক শৈত্যপ্রবাহে জমিয়া না গিয়া চলমান রহিল, এইটুকুই আশার কথা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন