হাসির কথা নহে

সেনাবাহিনীর টেকনিকাল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কি কথা বলিবার অধিকার আছে? সেনা আক্রমণ করিবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই রাজনৈতিক, এবং তাহার পূর্ণ অধিকার প্রধানমন্ত্রীর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০০:২২
Share:

ছবি এপি।

হাস্যকৌতুক শিল্পীদের ভাত যদি রাজনীতিকদের হাতে মারা যায়, তবে সাবধান হওয়া ভাল। যে অসম্ভাব্যতা হাসির উপাদান ছিল, গত পাঁচ বৎসরে মূলত বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা তাহাকে প্রাত্যহিক বাস্তবে পরিণত করিয়াছেন। নরেন্দ্র মোদীও। গণেশের প্লাস্টিক সার্জারি হইতে কর্ণের জন্মে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশনের অবদান— বহুতর (অপ)বিজ্ঞান গত পাঁচ বৎসরে নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গিয়াছে। তাহা হইলে, মেঘের আড়ালে আক্রমণ শানাইয়া রেডারের নজর হইতে বাঁচিবার অপূর্ব বিজ্ঞানচেতনাকে আলাদা করিয়া গুরুত্ব দেওয়া কেন? এত দিনেও কি দেশ বোঝে নাই যে তাহার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিছুই বলা অসম্ভব নহে? প্রধানমন্ত্রী নাকি ইসরো-কে পূর্ণিমার রাত্রিতে চন্দ্রযানটিকে চাঁদে নামাইতে পরামর্শ দিয়াছিলেন, কারণ পূর্ণিমায় চাঁদের আয়তন বৃহত্তম হয়! কিন্তু, রসিকতায় বহু জরুরি প্রশ্ন হারাইয়া যায়। নরেন্দ্র মোদীর এই আশ্চর্য মন্তব্যটিকে কেন্দ্র করিয়া রসিকতার বান ডাকিলে তাহাতেও জরুরিতর কথাগুলি ভাসিয়া যাইবে। যেমন, নির্বাচন চলাকালীন তিনি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ফের বালাকোট আক্রমণের প্রসঙ্গটি টানিলেন কেন? নির্বাচন কমিশন তাঁহার অষ্টোত্তর শত অপরাধ মাফ করিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু, সেনাবাহিনীর নামে ভোটভিক্ষা করিবার যে নিন্দা সমাজের পরিসরে হইয়াছে এবং হইতেছে, তাহার কোনও প্রভাব কি নিজের উপর পড়িতে দিতে নাই? ভোটযুদ্ধে জিতিতে এতখানি নির্লজ্জ হওয়াও কি জরুরি?

Advertisement

অবহিত জনে অবশ্য মানিবেন, নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রশ্ন করা অর্থহীন। উত্তর তিনি বহু পূর্বেই দিয়া রাখিয়াছেন। বরং প্রশ্ন করা যাউক, সেনাবাহিনীর টেকনিকাল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কি কথা বলিবার অধিকার আছে? সেনা আক্রমণ করিবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই রাজনৈতিক, এবং তাহার পূর্ণ অধিকার প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু, কোনও প্রাকৃতিক কারণে সেই অভিযান পিছাইয়া দেওয়া হইবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত করিবার জন্য যতখানি জ্ঞানের প্রয়োজন, শ্রীমোদী স্বমুখে স্বীকার করিয়াছেন, সেই জ্ঞান তাঁহার নাই। অতএব, সত্যই যদি তিনি সেনা কর্তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করিয়া প্রতিকূল অবস্থাতে অভিযান করিতে বাহিনীকে বাধ্য করিয়া থাকেন, তাহা গুরুতর বিষয়। যে হেতু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝিবার যোগ্যতা— স্বীয় স্বীকারোক্তি অনুসারেই— তাঁহার নাই, অতএব তাঁহার চাপাইয়া দেওয়া সিদ্ধান্তে বড় বিপদ ঘটিতেই পারিত। আদিত্যনাথ যাহাই বলুন, সেনাবাহিনী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নহে। এক জন সৈনিককেও এই অজানা বিপদের মুখে ঠেলিয়া দেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নাই। আর, যদি এমন কোনও ঘটনা না ঘটিয়া থাকে, তবে বায়ুসেনা প্রধান বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করা বিধেয় ছিল। নচেৎ যে বার্তাটি গেল, তাহা ঘোর বিপজ্জনক— রেডার কী ভাবে কাজ করে, সেই জ্ঞানটুকুও যাঁহার নাই, ভারতীয় সেনা তেমন এক জনের অঙ্গুলিনির্দেশে নাচিতেছে। বার্তাটি ভারতের পক্ষে ইতিবাচক নহে।

শেষ প্রশ্ন ভারতের জনতাকে লইয়া। যে নেতা নিজেকে এমন অবলীলায় হাস্যাস্পদ করিয়া তুলিতে পারেন, তিনিই দেশের স্বার্থরক্ষায় শ্রেষ্ঠ, এমন অলীক বিশ্বাসটি আর কবে ভাঙিবে? নরেন্দ্র মোদী ধারাবাহিক ভাবে নিজের একটি যোগ্যতাই প্রমাণ করিতে পারিয়াছেন— ভোটে জিতিবার জন্য তাঁহার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নহে। প্রধানমন্ত্রী হইবার পক্ষে ইহা যথেষ্ট যোগ্যতা, অন্ধ ভক্তও এমন দাবি করিবেন না। নরেন্দ্র মোদী বুঝুন আর না-ই বুঝুন, দেশবাসীর বোঝা প্রয়োজন যে প্রধানমন্ত্রী পদটির কিছু গুরুত্ব এখনও অবশিষ্ট আছে। তাহাকে ধুলায় মিশাইয়া দেওয়া ভারতের পক্ষে মারাত্মক।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন