আমি এই রক্তাক্ত উন্মত্ততার শরিক নই

হরিয়ানার ক্ষত এখনও দগদগে। জুনেইদের গ্রাম এখনও হতচকিত, স্তম্ভিত। সম্পূর্ণ অকারণে এবং এত সহজে কারও প্রাণ নিয়ে নেওয়া যায় এ দেশে এখন! বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না বল্লভগড়ের। তার মধ্যেই ঝাড়খণ্ডের গিরিডি হাজির নয়া আখ্যান নিয়ে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০৪:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘নট ইন মাই নেম’। আমার নামটাকে যেন এ সবের মধ্যে জড়াবেন না। আমি এই চরম অসহিষ্ণুতা, অন্ধত্ব, মানসিক পঙ্গুত্বের শরিক নই।

Advertisement

অমানবিকতার কোনও এক উত্তুঙ্গ শিখর জয় করতে চাইছেন একদল উন্মত্ত। ভারত জুড়ে হাঁকডাক তীব্র হচ্ছে তাঁদের। গত দু’বছরের গড় হিসেব বলছে, দেশের কোনও না কোনও প্রান্তে প্রতি মাসে এক বার না এক বার গো-রক্ষার নামে বা ধর্ম রক্ষার অছিলায় হামলা হচ্ছেই। হরিয়ানার ক্ষত এখনও দগদগে। জুনেইদের গ্রাম এখনও হতচকিত, স্তম্ভিত। সম্পূর্ণ অকারণে এবং এত সহজে কারও প্রাণ নিয়ে নেওয়া যায় এ দেশে এখন! বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না বল্লভগড়ের। তার মধ্যেই ঝাড়খণ্ডের গিরিডি হাজির নয়া আখ্যান নিয়ে। মৃত গরু পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে রাস্তায়। অতএব মুসলিম পরিবারটার উপরেই হামলে পড়তে হবে। গরুর মৃত্যুর পিছনে উসমান আনসারি ছাড়া আর কারও হাত থাকতেই পারে না। বেরিয়া-হাতিটাঁড় গ্রামে তাই আক্রান্ত হল উসমান আনসারির পরিবার। পুলিশি তৎপরতায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন উসমান শেষ পর্যন্ত ঠিকই। কিন্তু ঘর-বাড়ি জ্বলে গিয়েছে, পরিবারের সদস্যরা ভয়ঙ্কর নিগ্রহের মুখে পড়েছেন, আচমকা জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে।

ভারত আড়াআড়ি বিভাজনের মুখে আজ। এক দিকে ‘ধর্মের’ স্বঘোষিত ধারক-বাহকদের উন্মত্ততায় মধ্যযুগের ছায়া। অন্য দিকে ভারতীয় ঐতিহ্যের চিরন্তন সহিষ্ণুতা এবং ভারতীয় জীবনচর্যায় বহুত্বের পরম্পরা। সমস্যা ঘনিয়ে উঠছে তখনই, যখন বহুত্ববাদী ভারতের ধারণাকে স্বীকারই করতে চাইছেন না ধর্মোন্মোদরা। যে কোনও বিপরীত মতকে পিষে দিতে উদ্যত তাঁরা, অপার অসহিষ্ণুতা তাঁদের শিরায় শিরায়, অক্লেশে রক্তের হোলিতে মাতছেন তাঁরা যখন তখন। এবং এই মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেই ‘ভারতীয়ত্ব’ নামে চালাতে চাইছেন।

Advertisement

আমার ভারতীয়ত্ব এ নয়, আমাদের মতো লাখ-হাজার-কোটির কাছে ভারতীয়ত্বের ধারণা এই রকম নয়। ভারতের প্রান্তে প্রান্তে আজ ধর্মোন্মাদদের হুঙ্কার প্রবল ঠিকই। তবু সমুচ্চ কণ্ঠস্বরে এক বিপুল জনগোষ্ঠী দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানাচ্ছে— ওই চূড়ান্ত অমানবিক মুখটা কোনও অর্থেই ভারতের মুখ নয়, ভারতীয়ত্বের মুখ নয়।

আরও এক বার হুঁশিয়ার করে দিই— প্রতিরোধ তীব্র হবেই। তা না হওয়া পর্যন্ত অমানবিক উন্মত্ততা বহাল থাকবে জানি। কিন্তু তাকে ভারতীয়ত্ব ছাড়া অন্য যে কোনও নামে ডাকুন। ভারতীয়ত্বে আমরাও রয়েছি, কিন্তু উন্মত্ততায় আমরা নেই। আমাদের নামে এ সব চালাবেন না— ‘নট ইন মাই নেম’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন