Home Appliances

মেরামতির অধিকার

ভারতে ই-বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিকাঠামো অত্যন্ত সীমিত। সরকার অনুমোদিত রিসাইক্লিং সেন্টার-এর সংখ্যা যথেষ্ট কম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৫
Share:

নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মেরামত এবং তার দেখভালের উদ্বেগটি গৃহস্থের বড় কম নয়। প্রতীকী ছবি।

ঘরের কাজে ব্যবহারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মেরামত এবং তার দেখভালের উদ্বেগটি গৃহস্থের বড় কম নয়। সেই উদ্বেগের অবসান করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারতের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রক। তারা একটি কেন্দ্রীভূত রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতি সংক্রান্ত পোর্টাল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি সেই উদ্যোগেরই অংশ হিসাবে তারা গ্রাহকের রেফ্রিজারেটর, গ্যাস স্টোভ, জল পরিশোধন যন্ত্রের মতো বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র সারানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের অধিকারটিকে আরও সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে যন্ত্র প্রস্তুতকারক বৃহৎ সংস্থাগুলির কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে, যাতে সংস্থাগুলির পরিষেবা কেন্দ্র এবং মেরামতি সংক্রান্ত নীতির উপর ভিত্তি করে একটি সুনির্দিষ্ট তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা যায়। এতে গ্রাহকের পক্ষে নিকটবর্তী পরিষেবা কেন্দ্র, সারাইয়ের খরচ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলির নাগাল পাওয়া সহজতর হবে। পরিণামে ক্রীত বস্তুটির উপর তাঁর পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।

Advertisement

এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে। ভারত বিশ্বে ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে, চিন এবং আমেরিকার পরেই। তথ্য বলছে, প্রতি পাঁচ জন ভারতীয়ের মধ্যে দু’জনই তাঁদের স্মার্টফোনটি প্রতি বছর পাল্টে ফেলেন। শুধুমাত্র স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে চিত্রটি যদি এমন হয়, তবে রেফ্রিজারেটর, টিভি, ল্যাপটপ-সহ নানাবিধ সামগ্রীর সম্মিলিত হিসাব কী দাঁড়াবে অনুমানে অসুবিধা হয় না। অথচ, ভারতে ই-বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পরিকাঠামো অত্যন্ত সীমিত। সরকার অনুমোদিত রিসাইক্লিং সেন্টার-এর সংখ্যা যথেষ্ট কম। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশে যতগুলি রিসাইক্লিং সেন্টার আছে, তার সাহায্যে প্রতি বছর উৎপাদিত মোট ই-বর্জ্যের মাত্র এক-পঞ্চমাংশকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব। অর্থাৎ, বাকি ই-বর্জ্য পরিবেশেই জমে, এবং তা থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নিঃসৃত হয়ে শুধুমাত্র পরিবেশের নয়, মানবশরীরেরও চরম ক্ষতিসাধন করে। এই ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তার ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য। সুতরাং, ই-বর্জ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়াটিতেই রাশ টানা ভিন্ন অন্য পথ কার্যত নেই।

তবে অন্য কথাটিও স্মরণে রাখা জরুরি। মধ্যবিত্তের চাহিদা বৃদ্ধি বাজার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। মোবাইল, ট্যাবলেটের মতো সামগ্রী দীর্ঘকাল একই রকম কার্যক্ষম থাকে না বলেই নতুন সামগ্রী ক্রয়ের বাধ্যবাধকতাটি বজায় থাকে। ক্রমান্বয় চাহিদা সৃষ্টির প্রকৌশলটি ভোগবাদী অর্থনীতিকে পরিপুষ্ট করে। কিন্তু গ্রাহক যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সামগ্রীর মেরামতির তুলনামূলক সস্তা পথটির সন্ধান পান, তবে নিঃসন্দেহে তাঁর নতুন ক্রয়ের সময়সীমা দীর্ঘায়িত হবে। অর্থাৎ, বাজারে নতুন সামগ্রী কেনার চাহিদা হ্রাস পাবে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির পক্ষে তা শুভ সঙ্কেত নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটি শুধুমাত্র যন্ত্রের আয়ুর নয়, পৃথিবীর আয়ুরও বটে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে পৃথিবীর আয়ু দ্রুত হ্রাস পেলে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। সুতরাং, দায়িত্বশীল ভোগবাদই এ-ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। সমতা বজায় রাখার পথটি নিয়ে কেন্দ্রের আরও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন