Electronics Goods

লাইসেন্স রাজ

দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্য হলেও, ইতিহাস সাক্ষী যে আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা ও লাইসেন্স নীতি সেই বৃদ্ধিতে কোনও সাহায্য করে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

যখন এ দেশের পালে মুক্ত অর্থনীতির হাওয়া লাগেনি, তখন আমদানির রাশ টানতে নিয়মিত কোটা এবং উচ্চ শুল্কের মতো কড়া নীতি অবলম্বন করতে দেখা যেত কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেই আত্মঘাতী নীতির কুফল আজ সর্বজনবিদিত। তৎসত্ত্বেও বর্তমান সরকার যেন ‘পিছিয়ে যাওয়ার নীতি’ অবলম্বনেই পুনরায় উৎসুক। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ কম্পিউটার, ল্যাপটপ-সহ হরেক ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স চালুর সিদ্ধান্ত। যদিও বিপুল সমালোচনার কারণে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড তাদের এই সিদ্ধান্ত আগামী ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাতিল করেছে। সরকারের বহু হঠকারী সিদ্ধান্তের মতোই এ ক্ষেত্রেও যে প্রয়োজনীয় বিচার-বিবেচনা করা হয়নি, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। আশঙ্কা, এতে লাল ফিতের ফাঁসের সমস্যা আরও প্রকট হবে। আগামী দিনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে এমন ‘লাইসেন্স নীতি’ চালু হবে না, উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না সেই সম্ভাবনা।

Advertisement

বলা হচ্ছে, সরকারের এ-হেন পদক্ষেপের লক্ষ্য দেশে তৈরি কম্পিউটার এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসাবৃদ্ধি এবং চিন থেকে আমদানি হ্রাস। ২০২২-২৩ সালে প্রায় ৫৩০ কোটি ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ল্যাপটপ-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি করে ভারত, যার সিংহভাগই আসে চিন থেকে। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে তথ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও উল্লিখিত হয়েছে। যদিও পরে আরও স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা হয় যে, সরকার এমন প্রযুক্তি ও হার্ডওয়্যারে আগ্রহী, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচুরির আশঙ্কা ন্যূনতম। লক্ষ্যগুলি পূরণ করা নিঃসন্দেহে জরুরি। সরকার যদি প্রযুক্তির নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন হয়, তবে সে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি বন্ধ রাখতে পারে। কিন্তু তার জন্য লাইসেন্স নীতি পুনরায় চালু করা প্রয়োজন ছিল কি? সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নির্বিঘ্নে চালু করা হবে লাইসেন্স প্রক্রিয়াটি। কিন্তু তা চালু হলে, পূর্বপরিচিত বহু সমস্যারই যে পুনরাবির্ভাব ঘটবে, তা সহজেই অনুমেয়। এর ফলে অবধারিত ভাবে প্রভাব পড়বে পণ্যের লভ্যতা এবং দামের উপরে। তা ছাড়া, এ দেশে তো ‘পাইয়ে দেওয়া’র রাজনীতি অতি সক্রিয়। ফলে আজকের পরিষেবা-নির্ভর অর্থনীতিতে যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম, সেখানে বাজারে এই ধরনের পণ্যের ঘাটতি এবং দামের তারতম্য এই শিল্পের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। এবং এর পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ গড়াই
যদি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বপ্ন হয়, তবে বর্তমান নীতিটি প্রত্যাহার করা বাঞ্ছনীয়।

দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্য হলেও, ইতিহাস সাক্ষী যে আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা ও লাইসেন্স নীতি সেই বৃদ্ধিতে কোনও সাহায্য করে না। বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের রফতানিকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যে তার স্থান তৈরির ক্ষেত্রেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটার এবং এই ধরনের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের বাণিজ্যের এক বিশেষ ধরন রয়েছে, যা দেশে রাতারাতি গড়ে তোলা অসম্ভব। নিজেদের নীতির কারণেই দক্ষ কর্মীর সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বমঞ্চে এ ক্ষেত্রে সক্ষম হয়নি। ফলে এই ধরনের শিল্পবিরোধী নীতি বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি যত শীঘ্র দেশের নীতি নির্ধারকরা উপলব্ধি করবেন, তত দেশের শিল্পের ক্ষেত্রে মঙ্গল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন