Traffic guidelines

নিরাপত্তার স্বার্থে

বিশেষত, কলকাতার মতো অতি জনঘনত্বপূর্ণ শহরকে যে বিপুল পরিমাণ যানবাহন এবং পথচারীর চাপ সহ্য করতে হয় প্রতি দিন, তাতে ট্র্যাফিক নিয়ম যথাযথ ভাবে মেনে চলা, এবং সে বিষয়ে পুলিশের নজরদারি উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫১
Share:

নিরাপদে পথ হাঁটার অধিকার নাগরিকমাত্রেরই প্রাপ্য। কিন্তু সম্প্রতি কলকাতার রাজপথে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রমাণ, সে অধিকার কথার কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে। কিছু দিন আগেই এক পথ-দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর। অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের নজরদারির অভাবের। সেই দুঃসহ স্মৃতি যাতে ফিরে না আসে, তার জন্য সম্প্রতি এক কর্মসূচির আয়োজন করেছিল মৃত শিক্ষার্থীর স্কুল বড়িশা উচ্চ বিদ্যালয় (প্রাথমিক বিভাগ)। সেখানে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের পথের সুরক্ষা বিধি বিষয়ে পাঠদান করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। হেলমেট পরা, রাস্তা পারাপারের সময় সিগন্যালের প্রতি সতর্ক নজর রাখা, জ়েব্রা ক্রসিং-এর ব্যবহার-সহ নানা দিক আলোচনার মাধ্যমে জানানো হয় পুলিশের তরফ থেকে।

Advertisement

এ-হেন উদ্যোগ স্বাগত। বিশেষত, কলকাতার মতো অতি জনঘনত্বপূর্ণ শহরকে যে বিপুল পরিমাণ যানবাহন এবং পথচারীর চাপ সহ্য করতে হয় প্রতি দিন, তাতে ট্র্যাফিক নিয়ম যথাযথ ভাবে মেনে চলা, এবং সে বিষয়ে পুলিশের নজরদারি উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, শুধুমাত্র একটি স্কুলের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগে কী হবে? একটি স্কুলের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় ঠিকই, কিন্তু যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সদ্য দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে হারিয়েছে, তাদের সচেতন প্রয়াস অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে এমন কর্মসূচির আয়োজনে। বিন্দু জমে সিন্ধু গঠনের আপ্তবাক্যটি তো অগ্রাহ্য করার নয়। নিজ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ট্র্যাফিক বিধি মেনে চলার নিয়মটি একেবারে শিশুকাল থেকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্কুলগুলি যদি পুলিশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সেই দায়িত্ব নিতে পারে, তবে সমাজে নিয়ম মানার অভ্যাসটি তৈরি হয়। এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদেরও সেই কর্মসূচিতে শামিল করা একান্ত প্রয়োজন। জ়েব্রা ক্রসিং না মেনে রাস্তা পার করা, সিগন্যাল অগ্রাহ্য করা কিংবা মোবাইল কানে রাস্তায় হাঁটার কুঅভ্যাস থেকে যদি বড়রাই মুক্ত হতে না পারেন, তবে ছোটরা কী শিখবে? মনে রাখতে হবে, শহরকে যে নিয়মিত পথ-দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে হয়, তার সব ক’টির দায় বেপরোয়া যানবাহনের নয়। অসচেতন, কাণ্ডজ্ঞানহীন নাগরিকও ব্যস্ত রাস্তায় সমান বিপজ্জনক।

তবে, পুলিশের প্রতিও একটি প্রশ্ন তোলা প্রাসঙ্গিক। কর্মব্যস্ত সময়ে তাঁরাও কি সকলে সমান সজাগ থাকেন? যদি থাকেন, তবে প্রায়শই নিয়ম ভাঙার ঘটনাগুলি ঘটে কী ভাবে? কাঞ্চনমূল্যের বিনিময়ে যে অ-নিয়মও নিয়ম হয়ে ওঠে, সে কথা তো আজ শিশুরাও জানে। এই লোভও কি দুর্ঘটনার পশ্চাতে অনুঘটক হিসাবে কাজ করে না? সর্বোপরি, বেহালায় ওই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর অভিযোগ উঠেছিল, বেসরকারি স্কুলের সামনে যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যতটা তৎপর, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না সেই এলাকায় অন্য স্কুলগুলির সামনে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে নিন্দার কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয়। যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটি যাঁর উপরে ন্যস্ত, তিনি নিয়ম মেনে নিজ কর্তব্য পালন করবেন, এমনই নাগরিক প্রত্যাশা। সেখানে বিভেদমূলক মনোভাব, ঢিলেঢালা আচরণ— উভয়ই সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের শেখানোর আগে পুলিশও নাহয় নিজের পুরনো পাঠ আরও এক বার ঝালিয়ে নিক।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন