Banking Sector

অসংবেদনশীল

সমস্যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই বেশি। এখানে চাকরি যাওয়ার ভয় নেই বলে দুর্ব্যবহারের উদাহরণগুলি গুরুত্ব পায় না— এমন অভিযোগ অস্বীকারের উপায় নেই।

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৬:২০
Share:

সহানুভূতিশীল মনোভাবের অভাবই হল ব্যাঙ্কের সবচেয়ে বড় সমস্যা— উক্তিটি ভুক্তভোগী গ্রাহকের নয়, খোদ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর স্বামীনাথন জে-র। ব্যাঙ্ক পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্মী এবং গ্রাহকের মধ্যকার সম্পর্কটি পূর্বাবৎ সহজ-সরল নেই। বরং ক্ষেত্রটির ক্রম সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তি-নির্ভরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্রাহক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এক সভায় ডেপুটি গভর্নর জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় এখন দ্রুত ব্যাঙ্কের কাজ হয়ে যাচ্ছে, নেট মারফত পরিষেবাও বাড়ছে। কিন্তু তা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সমস্যা মেটানোয় এবং অভিযোগের সমাধানে ব্যাঙ্ককর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ করছেন না। বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ব্যাঙ্কব্যবস্থা একটি আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্র। যে কোনও পরিষেবা ক্ষেত্রেই কর্মী এবং গ্রাহকের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর নির্ভর করে ক্ষেত্রটির ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ এবং তার সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা। ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক আরও অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ এবং আস্থাজ্ঞাপক হওয়া জরুরি, কারণ বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের মানুষ ব্যাঙ্কের গ্রাহক-তালিকায় থাকেন। কিন্তু বাস্তবচিত্র কিছু অন্য রকমই বলে। ডেপুটি গভর্নরও সেই দিকে ইঙ্গিত করে ব্যাঙ্কিং শিল্পকে সতর্ক করেছেন।

সমস্যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই বেশি। এখানে চাকরি যাওয়ার ভয় নেই বলে দুর্ব্যবহারের উদাহরণগুলি গুরুত্ব পায় না— এমন অভিযোগ অস্বীকারের উপায় নেই। তবে এটাও সত্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে গত দশ বছরে সাধারণ কর্মীর সংখ্যা লক্ষাধিক হ্রাস পেয়েছে। অথচ, মোদী সরকারের আমলে নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি বাড়তি অনেক দায়িত্ব চেপেছে। ফলে, অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ছেন ব্যাঙ্ক-কর্মীরা। কিন্তু অসহযোগিতার যথেষ্ট অজুহাত এগুলি নয়। উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় কী ভাবে, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে গ্রাহক অসন্তোষের বিষয়টিকেও। ব্যাঙ্কের কাজে সন্তুষ্ট না হলে গ্রাহক সরাসরি সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ নিরসনের জন্য প্রত্যেক শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক থাকেন। তাতে কাজ না হলে ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যাঙ্কিং লোকপাল-এর কাছে অভিযোগ দায়ের করা যায়। এই অভিযোগগুলির যেন যথাসময়ে নিষ্পত্তি হয় এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মী যেন শাস্তি পান— তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা জরুরি।

অন্য গুরুতর অভিযোগটি হল, গ্রাহকদের প্রতি কর্মীদের ব্যবহার অনেকাংশে পরিচালিত হয় আর্থসামাজিক অবস্থানের সাপেক্ষে। ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে যেখানে দেশের প্রত্যন্ত কোণটিতে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ করা হচ্ছে, সেখানে এই অভিযোগ লজ্জার। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তুলনায় দুর্বলরাই ব্যাঙ্কব্যবস্থার উপর অধিকতর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি ব্যবহারে তাঁরা স্বচ্ছন্দ নন, হামেশাই প্রতারণারও শিকার হন। তাই ব্যাঙ্ক-কর্মীদেরই তাঁদের সহায় হয়ে উঠতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য প্রবীণদের ক্ষেত্রেও। প্রয়োজনে গ্রাহকদের প্রতি ব্যবহারের বিষয়টিকে কর্মীদের প্রশিক্ষণের সময় আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যা হল, বর্তমান পরিকাঠামোয় এর সব ব্যবস্থাই মজুত। অভাব নজরদারির, ইতিবাচক উদ্যোগের। পরিষেবা ক্ষেত্রকে সচল রাখতে যে দু’টির প্রয়োজন সর্বাধিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন