School service commission

নিয়োগ-জট

শিক্ষক পদপ্রার্থীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা দিয়াছেন, উত্তীর্ণ হইয়াছেন, মেধা তালিকাভুক্তও হইয়াছেন।

Advertisement

None

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২১ ০৫:১২
Share:

ফাইল চিত্র।

একশত আশি দিন পূর্ণ। নিয়োগের দাবিতে অনশন চলিতেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন পাশ করিয়া অপেক্ষারত নবম হইতে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদপ্রার্থীদের। অভিযোগ, এসএসসি-র তরফে এখনও ইতিবাচক সাড়া মিলে নাই। ২০১৯ সালের মার্চ মাসেও তাঁহারা একই দাবিতে অনশনে বসিয়াছিলেন। তাহা চলিয়াছিল প্রায় এক মাস। অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লোকসভা ভোটের পর অপেক্ষারত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের নিয়োগ করা হইবে বলিয়া প্রতিশ্রুতি দান করিয়াছিলেন। লোকসভা ভোট মিটিয়াছে, বিধানসভা ভোটও সমাপ্ত। তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে শাসনক্ষমতায় ফিরিয়াছে তৃণমূল। অথচ, নবম হইতে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদপ্রার্থীদের অবস্থার পরিবর্তন হয় নাই। এই বৎসর ৩০ জানুয়ারি হইতে তাঁহারা পুনরায় অবস্থান-বিক্ষোভ এবং রিলে অনশন শুরু করিয়াছেন।

Advertisement

প্রতিশ্রুতি পূরণে এই বিলম্ব বিস্ময়কর। শিক্ষক পদপ্রার্থীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা দিয়াছেন, উত্তীর্ণ হইয়াছেন, মেধা তালিকাভুক্তও হইয়াছেন। অথচ, প্রায় চার বৎসর ধরিয়া চাকুরির ন্যায্য দাবি লইয়া তাঁহারা কখনও অনশনে বসিতেছেন; কখনও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করিতেছেন; কখনও মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি জমা দিতেছেন। কিন্তু নিয়োগ হইতেছে না। কবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হইবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলিতেছে না। অথচ, এক সময় প্রতি বৎসর এই এসএসসি-র মাধ্যমেই শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ হইত। স্নাতক পাশ করিয়াও এসএসসি-র ফর্ম পূরণ করা যাইত। এখন তাহা অতীত। বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ লইয়া অভিযোগের পাহাড় জমা হইতেছে। ইতিপূর্বে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠিয়াছিল। জল আদালত অবধি গড়াইয়াছিল। সেই মামলায় কলিকাতা হাই কোর্ট কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনাও করে। তৎসত্ত্বেও নিয়োগ লইয়া জটিলতা কাটে নাই।

সরকার কি বুঝিতেছে না যে, শেষাবধি এই জটিলতার ফল ভুগিবে ছাত্রছাত্রীরাই? অতিমারিতে দীর্ঘ কাল স্কুল বন্ধ থাকায় এবং পরিকাঠামোজনিত অসুবিধার কারণে সরকারি বিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়া শিক্ষার সুযোগ হইতে বঞ্চিত। অতঃপর শিক্ষকের অভাবে যদি বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়, তবে ক্ষতি শুধুমাত্র শিক্ষক পদপ্রার্থী অথবা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই আবদ্ধ থাকিবে না। সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা। সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শূন্যপদের সংখ্যা যথেষ্ট। তদুপরি, দীর্ঘ দিন স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ বন্ধ রহিয়াছে। বহু বিদ্যালয়ই শিক্ষকের অভাব পূর্ণ করিতে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দ্বারা কাজ চালাইতেছে। কিন্তু ইহা কোনও স্থায়ী সমাধান নহে। এই রাজ্যে এখনও বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রী সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাহাদের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বটি সরকারেরই। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দান করিয়াই সেই দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না। প্রতিশ্রুতি পালন করা হইতেছে কি না, না-হইলে কেন হয় নাই তাহা দেখা, এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করা একান্ত আবশ্যক। দুর্ভাগ্য, সেই উদ্যোগ এবং তাগিদ এখনও রাজ্য সরকারের মধ্যে দেখা গেল না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন