App Cabs

বিশ্বাসে মিলায়

প্রতি দিন ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে বা কোনও কমিশনের দরজায় ছুটিতে হইলে অন্যান্য কাজকর্ম শিকায় তুলিয়া রাখিতে হয়!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৪
Share:

ফাইল চিত্র।

একদা যে গাড়িগুলি শহরবাসীর নিকট স্বস্তির আশ্বাস হইয়া আসিয়াছিল, সেই অ্যাপ ক্যাবই এখন প্রাত্যহিক দুর্ভোগের কারণ। ট্রিপ বাতিল করিয়া দেওয়া, বাতানুকূল যন্ত্র চালাইতে অস্বীকার করা, যাত্রীর সহিত দুর্ব্যবহার— অভিযোগ বিস্তর। চালকরা পাল্টা জানাইতেছেন, যে ভাবে তেলের দাম বাড়িতেছে, তাহাতে ভাড়া না বাড়াইলে তাঁহাদের পক্ষে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। এই তর্কের শেষ মেলা ভার। একটি কথা স্পষ্ট— শহরের রাস্তায় যে অ্যাপ ক্যাবগুলি চলিতেছে, প্রকৃত প্রস্তাবে সেগুলি নিয়ন্ত্রণহীন। যে সংস্থাগুলির অধীনে এই পরিষেবা চলে, তাহারা চালকদের সংযত করিবার দায়িত্ব লইতে নারাজ। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়, ভারতে এই সমস্যা অনিবার্য। এখানে বাজার তৈরি হইয়াছে, কিন্তু তাহার নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট পরিকাঠামো এখনও গড়িয়া উঠে নাই। এই অ্যাপ ক্যাবগুলিকে, এবং তাহার সংগঠক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করিবার, তাহাদের উপর নজরদারি করিবার ব্যবস্থা ভারতে নাই। সেই ফাঁক গলিয়াই এই অপেশাদার পুঁজিবাদ চলিতেছে। যত ক্ষণ না চালকরা বুঝিবেন যে, অ্যাপ ক্যাব লইয়া রাস্তায় নামিবার অর্থ গ্রাহককে তাঁহার প্রাপ্য পরিষেবা দিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া, এবং সেই চুক্তিভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ; যত ক্ষণ না সংস্থাগুলি জানিবে, চালকদের নিয়ন্ত্রণ না করিতে পারিলে শাস্তির খাঁড়া নাচিতেছে— তত ক্ষণ অবধি এই ব্যাধি কমিবার নহে।

Advertisement


কিন্তু, প্রতি দিন ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে বা কোনও কমিশনের দরজায় ছুটিতে হইলে অন্যান্য কাজকর্ম শিকায় তুলিয়া রাখিতে হয়! কোনও দেশেই তাহা সম্ভব নহে— ভারতের ন্যায় বিচারবিভাগীয় দীর্ঘসূত্রতার দেশে তো নহেই। বস্তুত, শুধু ট্যাক্সিচালকের ক্ষেত্রে নহে, ব্যবসাবাণিজ্যের যে কোনও ক্ষেত্রেই যদি ছোটখাটো প্রতিটি বিষয়েই পাকা চুক্তি করিতে হয়, প্রতিটি মতান্তরের ক্ষেত্রেই আদালতে ছুটিতে হয়, তবে ব্যবসা চালাইয়া যাওয়া এক প্রকার অসম্ভব। তেমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের প্রবণতা কমে, অর্থনীতির ক্ষতি হয়। ইহা একটি বিশেষ ধরনের সমাজের সমস্যা— যে সমাজে সামাজিক বিশ্বাসের, পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিমাণ কম, সেখানে প্রতিটি লেনদেনেই হয় অন্যায্যতা ঢুকিয়া পড়ে, নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের দ্বারস্থ হইতে হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, ভারত তেমনই একটি দেশ। অ্যাপ ক্যাবের ক্ষেত্রেও মূল সমস্যা এইখানেই। যাত্রীর সহিত অলিখিত চুক্তিকে সম্মান করা যে প্রত্যেক ক্যাবচালকের অনস্বীকার্য কর্তব্য, এই কথাটি আমাদের দেশের সামাজিক বোধের অন্তর্গত নহে। কারণ, কোনও ক্ষেত্রেই এই অলিখিত চুক্তিতে সম্মান করা ভারতের দস্তুর নহে। ফলে, গাড়ির চালকরাও নির্দ্বিধায় চুক্তিভঙ্গ করেন, সংস্থাগুলিও ইহাকে যথেষ্ট অপরাধ বলিয়া জ্ঞান করে না। একটি বহুজাতিক অ্যাপ ক্যাব সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দেশে এই গোত্রের অভিযোগ আছে, আবার বেশ কিছু দেশে তাহার পরিষেবা প্রশ্নাতীত। দুই গোত্রের দেশগুলির প্রথমটিতে সামাজিক বিশ্বাসের পরিমাণ কম, এবং দ্বিতীয়টিতে বেশি, ইহা সমাপতন নহে। এই বিশ্বাস বাড়াইবার ক্ষেত্রে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের কিছু ভূমিকা আছে, কিন্তু তাহাই যথেষ্ট নহে। তাহার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এবং, তাহার জন্য, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক-সামাজিক পরিবেশে বিশ্বাসের গুরুত্ববৃদ্ধি জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন