Political Party

কাজের কথা

এই পরিপ্রেক্ষিতে বামফ্রন্টের খসড়া ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের উপর জোর দিবার উদ্যোগটি তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৬:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভোট আসিলে কথা বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে যথারীতি কথার প্লাবন বহিতেছে। অধিকাংশই বাজে কথা। এই শোরগোলের মধ্যে কেহ কেহ যদি কাজের কথা বলেন, তবে তাহাকে গুরুত্ব দিবার বিশেষ প্রয়োজন আছে। কাজের কথা অনেক রকমের হয়, হওয়া দরকার, কিন্তু সর্বাগ্রে জরুরি আক্ষরিক অর্থে কাজের— অর্থাৎ, কর্মসংস্থানের কথা। গোটা ভারতেই কর্মসংস্থান এক বিপুল সমস্যা। পশ্চিমবঙ্গে এই সমস্যার গুরুত্ব আরও বেশি। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার একটি হিসাব অনুসারে, রাজ্যে গত দশকে কৃষি এবং শিল্পে কর্মসংস্থান আদৌ বাড়ে নাই, পরিষেবার ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কিছুটা বাড়িয়াছে বটে, কিন্তু তাহা কাজের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। পশ্চিমবঙ্গ হইতে কর্মপ্রার্থীদের বিপুল সংখ্যায় অন্য রাজ্যে কাজ করিতে যাইবার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ইহারই পরিণাম। কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান সম্পর্কে একটি প্রাথমিক কথা মনে রাখা জরুরি। দরিদ্রের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য কিছু-না-কিছু না করিয়া উপায় নাই, তাই হিসাবের খাতায় বেকারের সংখ্যা দেখিয়া প্রকৃত কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভাল বোঝা যায় না। তদুপরি কাজের বাজার খারাপ হইলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেও অনেকে, বিশেষত মেয়েরা, কাজ খোঁজা বন্ধ করিয়া দেন, ফলে পরিসংখ্যানে বেকারত্বের অনুপাত কম দেখায়।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন যাবৎ শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত, ফলে উৎপাদনশীল কাজের সুযোগও সীমিত। পাশাপাশি, কৃষির স্বাস্থ্যও জীর্ণ, বিশেষ করিয়া অধিকাংশ মাঝারি, ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র কৃষিজোত হইতে কৃষকের আয় কম, কৃষিতে আপাতদৃষ্টিতে যত কর্মসংস্থান হইতেছে তাহার গুণমান প্রায়শই ভাল নহে। এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার উপরে অতিমারির বিপদ আসিয়া সঙ্কট বহুগুণ বাড়াইয়া দিয়াছে। গোটা দেশের পাশাপাশি এই রাজ্যেও গত এক বৎসরে দুইটি বিশেষ সমস্যা লক্ষণীয়। এক, বহু কর্মী ও শ্রমিকের আয় কমিয়া গিয়াছে, অনেকেই পুরানো কাজ ছাড়িয়া নূতন কাজ করিতে বাধ্য হইয়াছেন, যে কাজের আয় কম এবং অনিশ্চয়তা বেশি। দুই, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ হারাইয়াছেন। অর্থনীতির কাঠামোয় যে ধরনের পরিবর্তন ঘটিতেছে, তাহার ফলে মন্দা কাটিলেও এই সমস্যাগুলি অনেকাংশে থাকিয়া যাইতে পারে। যেমন, স্থায়ী কর্মীর বদলে অস্থায়ী কর্মী, অস্থায়ী কাজেও ‘গিগ’ অর্থনীতির অনুপাত উত্তরোত্তর বাড়িতেছে, বাড়িবে। রাজ্যে কৃষি ও শিল্পের ভিত দুর্বল বলিয়া এই সমস্যার প্রকোপ সমধিক।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বামফ্রন্টের খসড়া ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের উপর জোর দিবার উদ্যোগটি তাৎপর্যপূর্ণ। সাড়ে তিন দশকের রাজত্বে বামপন্থীরা কর্মসংস্থানের সমস্যার সুরাহা করিতে পারেন নাই, বরং শিল্পবাণিজ্যের ক্রমিক অবক্ষয়ের ফলে কাজের বাজারে ভাটার টান ক্রমশ বাড়িয়াছিল। কিন্তু আজ যদি তাঁহারা সেই অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষাকে কাজে লাগাইয়া নূতন করিয়া ভাবিতে চাহেন, স্বাগত। প্রশ্ন অন্যত্র। ইস্তাহারের খসড়াটি পর্যালোচনা করিলে দেখা যাইবে, তাঁহারা আজও সমস্যার মূলে পৌঁছাইতে ব্যর্থ, অথবা নারাজ। সরকারি দফতরে ও সংস্থায় শূন্যপদ পূরণ বা কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের বিস্তারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে আপত্তি নাই, কিন্তু এই ব্যবস্থাগুলি বেকারত্বের মাত্রা লাঘব করিতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করিতে পারে না। রাজ্য অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নতির ভিত শক্ত না হইলে যথার্থ উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানও সম্ভব নহে। তাহার জন্য প্রয়োজন এক দিকে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবায় যথেষ্ট বিনিয়োগ, অন্য দিকে কার্যকর শিক্ষা ও দক্ষতার প্রসার। দুইটি বিষয়েই পশ্চিমবঙ্গ বহু পিছনে পড়িয়া আছে। কাজের কথা শুরু করিলে চলিবে না, সেই কথাকে কাজে পরিণত করিবার জন্য বহু দূর যাইতে হইবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন