sexual harassment

নির্যাতন কাহাকে বলে

আদালতের রায় শিরোধার্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অন্য একটি প্রশ্নও উঠিয়া আসে— যৌন নির্যাতন বলিতে কি শুধু ত্বক স্পর্শ করাকেই বুঝায়?

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

যৌন নির্যাতন নহে, কারণ ত্বক স্পর্শ করা হয় নাই— রায় দিয়াছিল বম্বে হাই কোর্ট এই বৎসরের গোড়ায়। সম্প্রতি সেই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাইয়াছে কেন্দ্রীয় সরকার। রায়টি লইয়া সেই সময়ও যথেষ্ট বিতর্ক হইয়াছিল। কারণ, মামলাটি ছিল ১২ বৎসরের এক বালিকাকে যৌন নির্যাতনের। রায় জানাইবার সময় বিচারপতি মন্তব্য করিয়াছিলেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বালিকার পোশাক খুলে নাই। সুতরাং, পকসো আইন অনুযায়ী ইহাকে যৌন নির্যাতন বলা যাইবে না। এহেন রায় ঘিরিয়া বিতর্ক অস্বাভাবিক নহে। সম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালও মন্তব্য করিয়াছেন যে, এই রায় সমাজের ক্ষেত্রে এক বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করিবে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও বলা প্রয়োজন যে, শিশুকে যৌন নির্যাতন করিবার পরও গলিবার মতো আইনের ফাঁক আছে, দুষ্কৃতীদের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি হওয়া সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক।

Advertisement

আদালতের রায় শিরোধার্য। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অন্য একটি প্রশ্নও উঠিয়া আসে— যৌন নির্যাতন বলিতে কি শুধু ত্বক স্পর্শ করাকেই বুঝায়? যৌন নির্যাতনের ন্যায় একটি অতি সংবেদনশীল বিষয়কে কি আদৌ এই রূপ একমাত্রিক ব্যাখ্যায় বাঁধা চলে? নারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথা বলিবে। তাঁহারা জানেন, প্রাত্যহিক জীবনে কত বিচিত্র ভাবে তাঁহাদের যৌন নির্যাতনের শিকার হইতে হয়। এবং বহু ক্ষেত্রেই ত্বক স্পর্শ করিবার প্রয়োজনও পড়ে না। তাঁহারা জানেন, শুধুমাত্র মৌখিক কথাতেও যৌন নির্যাতন সম্ভব, এমনকি চোখের ইঙ্গিতেও সম্ভব। হয়তো বলা হইবে, ইহা নির্যাতন কোথায়? ইহা তো হেনস্থা। এই ক্ষেত্রে বলিতে হয়, সব হেনস্থাই আসলে নির্যাতনের এক রূপ। কারণ, ‘হেনস্থা’-র শারীরিক এবং মানসিক অভিঘাতও একটি মেয়ের জীবনে কিছু কম হয় না। এই দৃষ্টিকোণ হইতে বিচার না করিয়া যৌন নির্যাতনকে যদি শুধুমাত্র আইনের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা হয়, তাহা হইলে এক বৃহৎ সংখ্যক নারী এবং শিশু তাহার বাহিরে থাকিয়া যান, যাঁহারা কোনও সময় সেই নির্যাতনেরই শিকার হইয়াছেন, কিন্তু শুধুমাত্র আইনি ভাষার ভাঁজে হয়তো সুবিচার পাইবেন না। সমাজের ক্ষেত্রে এই বার্তা স্বস্তিদায়ক নহে।

নারীর উপর যৌন নির্যাতনের নিরিখে ভারত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক দেশের শ্রেণিভুক্ত। এই দেশে মেয়েরা শুধুমাত্র গৃহের বাহিরে নহে, গৃহের অভ্যন্তরেও নিয়মিত নির্যাতিত হইয়া থাকেন। পরিস্থিতি যখন এমন ভয়ঙ্কর, তখন অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন নারী এবং শিশুসুরক্ষার বিষয়টি। দেশে নারী এবং শিশুর উপর যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আইন আছে। সেইগুলি যাহাতে যথাযথ ভাবে দ্রুত প্রয়োগ করা হয়, তাহাতে জোর দিতে হইবে। প্রচলিত আইন যদি পরিস্থিতি বিচারে যথেষ্ট না হয়, তবে যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞাটি আরও বিস্তৃত করিতে হইবে। তুলনায় কম গুরুত্ব পাওয়া ক্ষেত্রগুলিকেও তাহার অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। এবং মনে রাখিতে হইবে, যৌন নির্যাতনের সুবিচার পাইবার ক্ষেত্রে প্রায়শই সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ কাজ করিয়া থাকে। এমতাবস্থায়, নির্যাতিতাদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ভিন্ন উপায় থাকে না। সেই আশ্বাসটুকু হইতে যাহাতে তাঁহারা বঞ্চিত না হন, তাহাও দেখা প্রয়োজন বইকি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন