BRICS

বড় হওয়ার ভালমন্দ

সদস্যবৃদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের আধিপত্য হ্রাস এবং বিকল্প প্রক্রিয়া গড়ে তোলা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৭
Share:

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে ব্রিকস-এর সদস্যপদ বৃদ্ধির কথা ঘোষিত হল। ছবি: রয়টার্স।

তাহলে ব্রিকস-এর সংসার বাড়তে চলেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ বৃদ্ধির কথা ঘোষিত হল। আগামী বছরের গোড়াতেই ব্রিকস-এর পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছে আর্জেন্টিনা, ইথিয়োপিয়া, ইরান, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। ২০০৯ সালে ভারত, রাশিয়া, চিন এবং ব্রাজ়িলকে নিয়ে গড়ে ওঠা এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দেয় পরের বছরেই। কোভিড-পরবর্তী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাবিত গ্লোবাল সাউথ-এর বহু দেশই এই সম্মেলনকে বিশ্বসমক্ষে তাদের আর্থিক সমস্যা তুলে ধরার মঞ্চ হিসাবে গণ্য করেছিল। সেই কারণে সম্মেলন শুরুর আগে এই গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে অন্তত চল্লিশটির বেশি দেশ। এবং বাইশটি দেশ আনুষ্ঠানিক ভাবে সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। ভবিষ্যতে এই গোষ্ঠী আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিতও মিলেছে।

Advertisement

সদস্যবৃদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের আধিপত্য হ্রাস এবং বিকল্প প্রক্রিয়া গড়ে তোলা। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে চিন এবং রাশিয়া এই নির্ভরতা হ্রাসে কিছুটা সফল হলেও ব্রিকস-এর অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে তা এখনও সম্ভব হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের বিকল্প হিসাবে ব্রিকস-এর আদি সদস্যরা যে ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক গড়ে তোলে, তা এখনও বহুলাংশে ডলারের উপরই নির্ভরশীল। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি এ-যাবৎ যে অঙ্কের ঋণ দিয়েছে, তার সিংহভাগই ডলারে। ফলে ডলারের আধিপত্য খর্ব করার লক্ষ্য আগামী দিনে পূরণ হবে কি না, সেই নিয়ে সংশয় থাকছেই।

অন্য দিকে, এ-যাবৎ বিশ্ব অর্থনীতির চালক আমেরিকা-সহ জি৭-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ব্রিকস-কে গড়ে তুলতে আগ্রহী চিন এবং রাশিয়ার পক্ষে এই বিস্তার এক রাজনৈতিক জয় বটে। এই মঞ্চ ব্যবহার করে ‘পশ্চিমি জোট’কে রাশিয়া উচিত জবাব দিতে চাইলেও চিনের অভিপ্রায় একটু আলাদা— গোষ্ঠী বিস্তারের মাধ্যমে এমন এক ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা আগামী দিনে বেজিং-নেতৃত্বাধীন এক বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। সেই কারণেই সৌদি আরবের মতো রাষ্ট্রকে ব্রিকস-এ অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে চিন। কিছু দিন আগেই বিবদমান সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের মধ্যস্থতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চিন, যে ভূমিকা এক সময় পালন করার কাজটা ছিল আমেরিকার। বিষয়টি গুরুতর। এবং ভারতের কাছে খানিকটা উদ্বেগেরও। চিনের গোষ্ঠীবিস্তারের বিষয়টি ভারতের জন্য সুসংবাদ না-ই হতে পারে। তবে কিনা ভারতের মিত্ররাষ্ট্র ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ব্রিকস-এ যোগ দেওয়ার ঘটনা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে দিল্লিকে। তবে আগামী দিনে নতুন অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এক বা একাধিক দেশের ব্যক্তিগত স্বার্থ যাতে প্রাধান্য না পায়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি ভারতের। মতের অমিলের ফলেই পূর্বে অর্গানাইজ়েশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন, জি৭৭ এবং নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট বা নির্জোট আন্দোলনের মতো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়েছিল। সেই একই কারণে ব্রিকসেরও অনুরূপ পরিণতি না ঘটলেই মঙ্গল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন