Dengue

জনস্বার্থ না শাসকস্বার্থ

সব রাজ্যেই বিরোধী রয়েছেন, অথচ, কেবল পশ্চিমবঙ্গই এ বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গির কোনও তথ্য দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পোর্টালে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৫:২২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ডেঙ্গি সম্পর্কিত তথ্য বাইরে প্রকাশিত হলে সিআইডি তদন্ত হবে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধে, এমনই ভয় দেখিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। এই সংবাদ বোঝাল, ডেঙ্গি-আক্রান্তের প্রাণরক্ষার চেয়ে নেতা-আধিকারিকদের মুখরক্ষা করাই বেশি জরুরি বলে মনে করছে সরকার। নাগরিকের সুরক্ষা যদি প্রাধান্য পেত, তা হলে তথ্য গোপন করার চাইতে, আরও বেশি তথ্য প্রকাশ করাতেই উৎসাহ দেখা যেত। কারণ, যে কোনও সংক্রামক রোগের মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন হয় তথ্য-পরিসংখ্যানের। রোগ কী ভাবে ছড়াচ্ছে, কোন এলাকায় আক্রান্ত বেশি, কোন ধরনের ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে বেশি, এই তথ্যগুলি যত সামনে আসবে, ততই প্রতিরোধের কাজে গতি আসবে। সঙ্কটের গতি-প্রকৃতি বোঝা যাবে, এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের নীতি নির্ণয় করা যাবে। সে তথ্য কেবল সরকারের নির্বাচিত কিছু লোকের কাছে থাকাই যথেষ্ট নয়, তা সর্বসমক্ষে আনতে হবে, যাতে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা তা দেখতে পারেন, তাঁদের বিশ্লেষণ ও পরামর্শ জানাতে পারেন। সর্বোপরি, জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা তথ্য সংগ্রহ করেন, কিন্তু তথ্যের মালিকানা তাঁদের নয়। তথ্য গোপন করার কোনও বিশেষ এবং সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলে— অর্থাৎ জনস্বার্থ বা দেশের স্বার্থের জন্য গোপনীয়তা একান্ত আবশ্যক না হলে— তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এটা যেমন স্বচ্ছতা ও সুপ্রশাসনের শর্ত, তেমনই জনসাধারণের সুরক্ষারও। কোভিড অতিমারিতে তার প্রয়োজন আরও স্পষ্ট হয়েছে নানা ভাবে। যেমন, ভারত ও বিদেশের বিজ্ঞানীদের মিলিত উদ্যোগে প্রাপ্ত তথ্য থেকে কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর নকশা মিলেছিল। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ দেখিয়েছিল যে, অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে কোভিডের লক্ষণ না দেখা গেলেও, তারা ভাইরাস বহন করছে, যা বিপন্ন করছে বয়স্কদের। তথ্য গোপন করলে এমন গুরুত্বপূর্ণ বহু তথ্য অজানা থেকে যেত।

Advertisement

স্পষ্টতই রাজ্য সরকার ধরেছে উল্টো পথ। তথ্য প্রকাশ করলে ঝুঁকির মুখে ফেলছে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এই প্রথম নয়, অতীতেও সংক্রামক অসুখের প্রকৃত বিস্তার গোপনের চেষ্টা হয়েছে যথেষ্ট। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল এ জন্য। পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব যেন তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে পূরণ করতে চায় রাজ্য সরকার। এ কি বিরোধীদের সমালোচনা এড়ানোর জন্য? সব রাজ্যেই বিরোধী রয়েছেন, অথচ, কেবল পশ্চিমবঙ্গই এ বছর ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গির কোনও তথ্য দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পোর্টালে। যদিও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত অন্তত সতেরো। ২০২২ সালে সাতষট্টি হাজারেরও বেশি আক্রান্ত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ভারতে প্রথম স্থানে, মৃত্যু ছিল ৩০। সমালোচনা এড়াতে তথ্যই প্রকাশ না করা অপরিণত রাজনৈতিক বোধের পরিচয়, অনৈতিক কাজ। পুলিশের ভয় দেখিয়ে সরকারি কর্মীদের চুপ করানোর চেষ্টা কাপুরুষতা ছাড়া আর কী? সরকারি আধিকারিকরা জনগণের প্রতি কর্তব্য পালনের শপথ নিয়েছেন। তা স্মরণ করে জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়ে জনস্বার্থ রক্ষা করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন