Atiq Ahmed

নতুন অন্ধকার

দিনকয়েক আগেই আতিকের ১৯ বছর বয়সি পুত্র পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। আতিক দাগি অপরাধী, তাঁর বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি-সহ শতাধিক অভিযোগ ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৩
Share:

সমাজবাদী পার্টির প্রাক্তন বিধায়ক ও তাঁর ভাই শনিবার, পুলিশ হেফাজতে, বহু সাংবাদিকের সামনে প্রকাশ্যে খুন হলেন। ছবি: পিটিআই।

উত্তরপ্রদেশ নামক রাজ্যটির আরও এক ভয়ানক ছবি নিজের জীবন এবং মৃত্যুতে স্পষ্ট করে দিলেন আতিক আহমেদ। সমাজবাদী পার্টির এই প্রাক্তন বিধায়ক ও তাঁর ভাই শনিবার, পুলিশ হেফাজতে, বহু সাংবাদিকের সামনে প্রকাশ্যে খুন হলেন তিন আততায়ীর গুলিতে। হত্যাপর্ব সম্পন্ন করে তারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জানায় যে, এই হত্যায় অপরাধ জগতে তাদের প্রতাপ বাড়বে, তাই এই খুন। দিনকয়েক আগেই আতিকের ১৯ বছর বয়সি পুত্র পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। আতিক দাগি অপরাধী, তাঁর বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি-সহ শতাধিক অভিযোগ ছিল। কোনও পর্যবেক্ষক তাঁকে চিহ্নিত করতে পারেন উত্তরপ্রদেশের ‘অতীত’ হিসাবে। তাঁর মতো আরও অনেক দাগি সে রাজ্যের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দীর্ঘ দিন। রাজ্য রাজনীতির যে অন্ধকার দিনের বিরুদ্ধে পুলিশের বন্দুকের নলে ‘আইনের শাসন’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ— রাজ্যবাসীর একাংশের কাছে যে প্রতিশ্রুতির গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নাতীত— আতিক আহমেদরা সেই অন্ধকারের প্রতিনিধি। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। তবু, বাহুবলী রাজনীতির কান্ডারিরা এই মুহূর্তে একটি আত্মসমীক্ষা করতে পারেন— গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকলেও কি এমন দুর্বৃত্তদের রাজনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসা চলে? তবে, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ২০১৭-পরবর্তী বিজেপির বিধায়ক-তালিকাতেও সঙ্গীত সোম, কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের মতো নাম রয়েছে। অতীতের যে অন্ধকারের বিরুদ্ধে আদিত্যনাথ তোপ দাগেন, তা তাঁর দলেও বিলক্ষণ রকমের বর্তমান।

Advertisement

রাজ্য থেকে অতীতের অন্ধকার দূর করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ এনকাউন্টার-এর পথ বেছে নিয়েছেন। গত ছ’বছরে পুলিশ দশ হাজারেরও বেশি ক্ষেত্রে অভিযুক্তের উদ্দেশে গুলি চালিয়েছে, নিহত হয়েছেন ১৮৩ জন। ভুয়ো এনকাউন্টারে হত্যা সংবিধানের সব সীমা লঙ্ঘন করে, এ কথাটি যতখানি সত্য, মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় সমর্থন ছাড়া এতগুলি এনকাউন্টার যে ঘটতে পারে না, তা-ও সমান সত্য। অর্থাৎ, অতীত যদি হয় রাজনৈতিক গুন্ডারাজ, তবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বর্তমান হিসাবে বেছে নিয়েছেন প্রশাসনিক গুন্ডারাজকে। পুলিশের এই সংবিধান-বহির্ভূত আচরণকে প্রচার করা হয়েছে তাঁর সরকারের সাফল্য হিসাবে। আতিক আহমেদের পুত্র যে দিন এনকাউন্টারে নিহত হলেন, সে দিনও রাজ্যে শোনা গিয়েছে পুলিশের নামে জয়ধ্বনি। দেশের বৃহত্তম রাজ্যে এমন বিপুল অন্যায় কী ভাবে চলতে পারে, সর্বোচ্চ মহল থেকে সে প্রশ্ন শোনা যায়নি— এ দিনও নয়, আগেও নয়। পুলিশও জানে যে, যোগীরাজ্যে তাদের ১৮৩ খুন মাফ। পুলিশি গুন্ডারাজের প্রতি রাজ্যের, বা দেশের, সর্বোচ্চ প্রশাসনের অপার প্রশ্রয়ই উত্তরপ্রদেশের বর্তমান।

রাজ্যের ভবিষ্যৎ কী, আতিক আহমেদের আততায়ীরা তার ইঙ্গিত দিয়ে গেল। পুলিশ নয়, এই প্রথম ‘এনকাউন্টার’ করল দুষ্কৃতীরা। পুলিশের সামনে, সাংবাদিকদের সামনে যে ভঙ্গিতে তারা গুলি চালাল, এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে আত্মসমর্পণ করল, তার বার্তাগুলি স্পষ্ট— প্রথমত, অতঃপর বন্দুকরাজটি পুলিশ থেকে পৌঁছে যাবে দুষ্কৃতীদের হাতে; দুই, সেই দুষ্কৃতীদের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক পরিচয় তাদের বর্ম হয়ে উঠবে; এবং তিন, যাঁরা নিহত হবেন, ধর্মপরিচয়ে তাঁরা সংখ্যালঘু হলে সেই হত্যা রাষ্ট্রকৃত্য হিসাবেও গণ্য হতে পারে। এনকাউন্টারে নিহতদের তালিকায় কোন সম্প্রদায়ের উপস্থিতি জনসংখ্যায় তার অনুপাতের চেয়ে ঢের বেশি, অনুমান করা চলে। প্রশ্ন অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম অথবা জাতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসারই নয়— এনকাউন্টারের যে সংস্কৃতি যোগীরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার অনিবার্য পরিণতি হল চরমতম দুঃশাসন। সেই ভয়াবহতার স্বরূপ দেখিয়ে দিল এনকাউন্টারের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া তিন আততায়ী।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন