Caste

দুর্ভাগা দেশ

ধর্ম ও বর্ণ আজও সমাজে ব্যক্তির সুযোগ-সম্পদের চাবিকাঠি। নিম্নবর্ণ ও সংখ্যালঘুর রাষ্ট্রের সহায়তার প্রয়োজন কমে নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৭:২৬
Share:

ভারতীয়দের আয়ু আজও জাত দিয়া নির্ণীত হয়। উচ্চবর্ণ হিন্দুর আয়ু সর্বাধিক, তাহার চাইতে ন্যূনাধিক এক বৎসর কম মুসলিমের, তিন বৎসর কম দলিতের এবং চার বৎসর কম আদিবাসীর। বিত্ত, বাসস্থান, দূষণ প্রভৃতিকে হিসাবে ধরিয়াও এই চিত্র মিলিয়াছে একটি গবেষণায়। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গদের মতো, ভারতেও উচ্চবর্ণ এবং দলিত-আদিবাসীর মধ্যে আয়ুষ্কালে পার্থক্য বৈষম্যের দ্বারা নির্ধারিত হইতেছে। আর্থিক অবস্থায় হেরফের আয়ুর পার্থক্যের কিয়দংশ ব্যাখ্যা করিতে পারে, সম্পূর্ণত নহে। সামাজিক বিধিব্যবস্থার জন্যও বহু মানুষের জীবন দ্রুত ফুরাইতেছে। এমন একটি মনোভাব ভারতে প্রবল যে, জাতপাতের দ্বারা সরকারি সহায়তা এবং অপরাপর সামাজিক সুবিধা নির্ধারণ করা নিষ্প্রয়োজন, এমনকি অন্যায়। আর্থিক অবস্থার বৈষম্যের দ্বারাই তাহা নির্ধারণ করিতে হইবে। এই চিন্তায় প্রণোদিত হইয়া কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য পৃথক সংরক্ষণও চালু করিয়াছে। গবেষণায় প্রাপ্ত চিত্রটি বুঝাইল, দারিদ্র তাহার সুযোগবঞ্চনা, সম্পদহীনতা এবং শোষণের কেবল একটি মাত্রা। ধর্ম ও বর্ণ আজও সমাজে ব্যক্তির সুযোগ-সম্পদের চাবিকাঠি। নিম্নবর্ণ ও সংখ্যালঘুর রাষ্ট্রের সহায়তার প্রয়োজন কমে নাই।

Advertisement

সেই প্রয়োজন যে বহুবিধ, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের নানা বিষয়ের সহিত সম্পৃক্ত, তাহারও ইঙ্গিত ওই গবেষণায়। মানুষের আয়ু তাহার জীবনের প্রায় সকল দিকের দ্বারা নির্ণীত হয়। পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, পরিবার ও সমাজে মর্যাদা, হিংসা হইতে নিরাপত্তা, এমন বিচিত্র বিষয় মানুষের জীবনযাপনের মান নির্ধারণ করে, অতএব দীর্ঘ মেয়াদে তাহার জীবনকালও নির্ধারণ করে। দলিত-আদিবাসীর জীবনের এই সকল বিষয়েই যে ন্যূনতা রহিয়াছে, তাহা বিবিধ সমীক্ষায় প্রকাশিত। তাঁহাদের মধ্যে অপুষ্টি অধিক, শিক্ষার হার কম, জমির স্বত্ব সামান্য, কায়িক শ্রম আজও তাঁহাদের জীবিকার্জনের প্রধান উপায়। দলিত-আদিবাসীদের শিক্ষার হার বাড়িয়াছে, কিন্তু তাহা আর্থিক নিরাপত্তা আনিতে পারে নাই। তাহার একটি কারণ, পূর্বনির্দিষ্ট কিছু পেশায় দলিতদের সীমিত রাখিবার প্রবণতা সমাজে রহিয়া গিয়াছে। অপরাপর কাজে তাঁহাদের প্রবেশের দ্বার যথেষ্ট উন্মুক্ত হয় নাই। বহু শিক্ষিত, দক্ষ দলিত-আদিবাসী পারিবারিক শ্রমপ্রধান পেশাতেই নিযুক্ত রহিয়াছেন। আবার, দলিত উন্নয়নের উদ্যোগগুলি যত প্রচার পাইয়াছে, তত ফলপ্রসূ নহে। আজও কয়েক লক্ষ দলিত নরনারী মানুষের বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ করিতেছেন, যদিও আইন তাহা বহু পূর্বেই নিষিদ্ধ করিয়াছে।

বরং যে তরুণ-তরুণীরা জাতিপরিচয় অতিক্রম করিয়া বাঁচিবার চেষ্টা করিয়াছেন, তাঁহারা দুস্তর বাধার সম্মুখীন হইতেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত দলিত ছাত্রেরা আত্মহত্যার পথ বাছিয়াছেন, দলিত কন্যা ধর্ষণের বিচার চাহিয়া গায়ে অগ্নিসংযোগ করিয়াছেন, দলিত মাংসবিক্রেতা গণপ্রহারে প্রাণ হারাইয়াছেন, সংখ্যালঘু যুবক হিন্দু তরুণীকে ভালবাসিয়া কারারুদ্ধ হইয়াছেন। সরকার-নির্মিত কমিটি দলিত উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ কমাইবার সুপারিশ করিয়াছে। তাঁহাদের জীবনের মূলস্রোতে স্থান দিতে নারাজ বর্ণবৈষম্যে জর্জরিত সমাজ এবং সরকার।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন