rape

শরীরের অধিকার

ধর্ষণ এক ঘৃণ্য সামাজিক অপরাধ। পুরুষের কোনও পরিচয় এই অপরাধের গুরুভার হ্রাস করিতে পারে না। বিচারবিভাগ সেই দিকটিই নির্দেশ করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২১ ০৪:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

শরীরই হউক, অথবা আত্মপরিচয়— স্বামী স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব করিতে পারেন না। ভারতের আইন বৈবাহিক ধর্ষণকে দণ্ডনীয় বলে নাই, ঠিকই; কিন্তু বাস্তবে ইহা শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ভুক্ত। এবং সেই হেতু বিবাহবিচ্ছেদের যুক্তিগ্রাহ্য কারণও বটে। সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায়ে এই কথাটি স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে কেরল হাই কোর্ট। রায়টি গুরুত্বপূর্ণ, প্রাসঙ্গিকও বটে। কারণ, পশ্চিমি দেশগুলিতে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’কে যে অর্থে ব্যবহার করা হইয়া থাকে, ভারতে ঠিক সেই অর্থে চর্চা না হইলেও অধিকারটি সংবিধানস্বীকৃত। অথচ, নানা ভাবে এই বিশেষ অধিকারটিকে অগ্রাহ্য করিবার এক প্রবণতা এই দেশে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষত, নারীর প্রসঙ্গটি জড়িত থাকিলে অধিকারটিকেই সামগ্রিক ভাবে অস্বীকার করা হয়।

Advertisement

বৈবাহিক ধর্ষণ সেই ব্যক্তিস্বাধীনতা অস্বীকার করিবারই নামান্তর। কেন, তাহার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়াছে কেরল হাই কোর্ট— শরীর এবং মনের সংমিশ্রণেই গড়িয়া ওঠে ব্যক্তিস্বাধীনতা। তাই, শরীরে আঘাত হানিলে তাহা সরাসরি ব্যক্তিস্বাধীনতায় আঘাত হানিবার শামিল। সুতরাং, এই অধিকারটিকে অগ্রাহ্য করিবার দায়ে বিচ্ছেদের মামলা যুক্তিসঙ্গত। প্রসঙ্গত, ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ লইয়া চর্চা ভারতে নূতন নহে। ইতিপূর্বেও স্ত্রীর সম্মতিহীন সহবাসকে ‘অপরাধ’-এর পর্যায়ভুক্ত করিবার দাবি উঠিয়াছে। বিশ্বের শতাধিক দেশে আইনের চোখে ইহা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু ভারত-সহ ৩৬টি দেশ ইহাকে ‘অপরাধ’-এর তালিকায় রাখে নাই। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের মেয়েদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটিও ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ-এর তালিকাভুক্ত করিবার সুপারিশ করে। কিন্তু এখনও সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হয় নাই। অথচ, পরিসংখ্যান যে চিত্র তুলিয়া ধরে, তাহা আতঙ্ক জাগায়। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার চতুর্থ দফার পরিসংখ্যান হইতে জানা যায় যে, ভারতে ৯৯.১ শতাংশ যৌন নির্যাতনের ঘটনাই নথিভুক্ত করা হয় না। এবং এই দেশে অন্য পুরুষের দ্বারা মেয়েদের যৌন নির্যাতিত হইবার সম্ভাবনা যত, স্বামীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হইবার সম্ভাবনা তাহার তুলনায় অন্তত ১৭ গুণ অধিক। তৎসত্ত্বেও এই ভয়ঙ্কর অন্যায়কে রুখিবার প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের তরফে করা হয় নাই। সমাজও নিতান্তই অ-সচেতন।

নির্লিপ্তির কারণ সেই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। বিবাহ নামক বন্ধনটি একার্থে যে এক পুরুষ এবং এক মহিলার উভয়ের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যৌনসম্পর্ক স্থাপন, এবং এই ক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই একের মত প্রাধান্য পাইতে পারে না— এই সরল সত্যটি সমাজ সচেতন ভাবে বিস্মৃত হইতে চাহে। কারণ, স্বামী-স্ত্রী সেখানে সমকক্ষ নহে। ধরিয়া লওয়া হয়, বিবাহের পর স্ত্রী সর্বার্থেই স্বামীর সম্পত্তি এবং স্ত্রীর সেখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা বলিয়া কিছু থাকিবে না। এই ধারণার বশবর্তী হইয়াই সমাজের এক বৃহৎ অংশ নারীকে সন্তান উৎপাদন এবং সংসার সামলাইবার যন্ত্রের অধিক কিছু ভাবিতে পারিল না— ব্যক্তিস্বাধীনতা তো দূর অস্ত্— কিন্তু তাহা যে নহে, সেই কথাটি আবারও স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল। ধর্ষণ এক ঘৃণ্য সামাজিক অপরাধ। পুরুষের কোনও পরিচয় এই অপরাধের গুরুভার হ্রাস করিতে পারে না। বিচারবিভাগ সেই দিকটিই নির্দেশ করিয়াছে। এই বার সমাজের ভাবিবার পালা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন