Afghanistan Crisis

কূটনীতির পরীক্ষা

এত দিন যাবৎ ভারত তাহার ভরসা রাখিয়াছিল আমেরিকার নেতৃত্বে বিপরীত অক্ষটির উপর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪২
Share:

তালিবান-অধিকৃত আফগানিস্তানের সহিত ভারতের সম্পর্কের রূপটি ঠিক কেমন হইতে চলিয়াছে, এই প্রশ্নের মূল্য এখন অর্বুদকোটি টাকা। ইতিমধ্যে দোহায় ভারতের সহিত তালিবান পক্ষের প্রথম বৈঠক হইল, সেই দেশকে জঙ্গিভূমি হিসাবে ভারতের বিরুদ্ধে যাহাতে কাজে লাগাইবার চেষ্টা না হয়, তাহার জন্য তালিবানের নিকট ভারতীয় পক্ষের বার্তা গেল। ভারতের বিদেশসচিবের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপুঞ্জে আফগানিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হইল। তালিবান রাষ্ট্রকে সরাসরি ভারতের স্বীকৃতি দিবার বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা থাকিলেও প্রাথমিক ভাবে তালিবানের সহিত কিছু কার্যকর সম্পর্ক তৈরি করা গেল। এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনও আফগান মাটিতে আটকাইয়া আছেন ভারতীয় নাগরিকরা, তাঁহাদের নিরাপত্তা একটি বড় জাতীয় স্বার্থ। বিশেষত যে ভারতীয়রা সেই দেশে সংখ্যালঘু পর্যায়ে পড়েন, তাঁহাদের নিরাপত্তার কথা ভাবিয়া সতর্ক পা ফেলা ভারতের কর্তব্য। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলিয়াছেন, ভারত তাহার স্বার্থ বুঝিয়াই কূটনীতি পরিকল্পনা করিতেছে। বিদেশসচিব শ্রিংলা জানাইয়াছেন, আফগানিস্তানে ভারত-বিরোধী জঙ্গি কর্মসূচির প্রতি আর্থিক বা সামরিক মদত যেন না ঘটে, সেই শর্ত স্পষ্ট ভাবে তালিবানকে জানানো হইয়াছে। তবে তালিবান যে ভারতের শর্ত কিংবা রাষ্ট্রপুঞ্জের বক্তব্য মানিয়া চলিবে, এমন ভাবিবার সময় এখনও আসে নাই। সুতরাং ভারতের জন্য আপাতত একটিই মন্ত্র: সাবধানের মার নাই।

Advertisement

ভারতের প্রথম ও প্রধান উদ্বেগ কাশ্মীর। কিছু দিন পূর্বেই তালিবান মুখপাত্র যদিও বলিয়াছেন, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়— ইহার পাশাপাশি শোনা গিয়াছে পাকিস্তানি সমরকর্তার হুমকিও যে, তালিবান যোদ্ধারা ক্রমে কাশ্মীর সীমান্ত পার হইয়া ঢুকিবে। কাশ্মীর উপত্যকায় জনতার একাংশকে প্রকাশ্য উচ্ছ্বাস করিতে দেখা গিয়াছে তালিবান বিজয়ের পর। জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতারা মুক্তি পাওয়ায় কাশ্মীরে হামলার আশঙ্কা বাড়িয়াছে, উপত্যকাবাসী বলিতেছেন। হুরিয়ত নেতারা তালিবান সহায়তা যাচ্ঞা করিবেন, গুজব ছড়াইতেছে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লক, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দফতর, বিদেশ দফতর এবং স্বরাষ্ট্র দফতর লাগাতার সংশয় ও উদ্বেগের শিকার।

সন্দেহ নাই, নানা দিক হইতেই তালিবান আফগানিস্তান ভারতের পক্ষে সমূহ পরাজয়। এত দিন যাবৎ ভারত তাহার ভরসা রাখিয়াছিল আমেরিকার নেতৃত্বে বিপরীত অক্ষটির উপর। তাই পাকিস্তান ও তালিবান আফগানিস্তান অক্ষের সঙ্গে ভারতের স্বস্তি তৈরি হইবার পথ দুরূহ। প্রকাশ্য ঘোষণা শোনা গিয়াছে— বাকি সব দেশ গৌণ, তালিবানের নিকট পাকিস্তানই মুখ্য বন্ধু, সঙ্গী ও দিগ্‌দর্শক, পাকিস্তানই তাহার জন্মদাতা। রহিয়াছে চিনও— তাহার কৌশলী বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি লইয়া। চতুর্দিকে অমিত্র-বেষ্টিত ভারত কি তবে তাহার দুরূহতম কূটনৈতিক যুগে পা রাখিতে চলিয়াছে? দিল্লিকে বুঝিতে হইবে, অনেক ক্ষতি হইয়াছে, আর ক্ষতি নহে। কূটনীতিতে নৈতিক সাদাকালো বিচারের জায়গা কম, দাদাগিরির দিনও গিয়াছে। নরেন্দ্র মোদীর শাসনাধীন ভারত কূটনীতিতে সাফল্য দেখে নাই, কাশ্মীর নীতিতেও নহে। কাশ্মীরের অবস্থা গত কয়েক বৎসরে পূর্বাপেক্ষা অনেক মন্দ, মানুষ দিল্লির প্রতি অধিক বিদ্বিষ্ট। সুতরাং তালিবান বিজয়ের পর, কেবল কূটনীতিতে কেন, স্বরাষ্ট্রনীতিতেও হয়তো ভারতের কিছু ‘কোর্স কারেকশন’ কিংবা পথ সংশোধন জরুরি। কেবল একটিই রুপোলি রেখার ক্ষীণ ছায়া। আফগানিস্তানে ভারত এত দিন বহু বিনিয়োগ করিয়া আসিয়াছে। সেই পরিসরটির কিছুটা হয়তো এখনও রক্ষা করা সম্ভব। হয়তো সেই পথে নূতন আফগানিস্তানেরও একটি দায় তৈরি হইবে প্রতিবেশী গণতন্ত্রটির প্রতি।

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন